মিথ্যা ধর্র্ষণ মামলা করায় এক নারীকে কারাদন্ডের দৃষ্টান্ত

মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের শিকার হলে বিবাদী আইনে আদালতে লিখিত পিটিশন দায়ের করার মধ্য দিয়ে প্রতিকার পেতে পারে। মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের দায়ে অপরাধীর সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে। নারী নির্যাতন ঠেকাতে উলিস্নখিত আইনটি যথার্থভাবে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হোক, কোনো নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার না হোক- সেটাই সবার প্রত্যাশা। ১৭ ধারার প্রতিকার কীভাবে ফলপ্রসূ করা যায় তা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
সিরাজগঞ্জে ধর্ষণের মিথ্যা মামলা করায় এক নারীর ৫ বছরের কারাদন্ড হয়েছে। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদন্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। গত ২৮ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবু্যনাল-১ এর বিচারক ফজলে খোদা মো. নাজির এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় ওই নারী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর কামারখন্দ উপজেলার এক নারী একই গ্রামের পাঁচজনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। আদালতে গণধর্ষণের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। পরে তাদের একজন বাদী হয়ে ওই নারীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারায় মামলা করলে বিচার শেষে বিচারক ওই নারীকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। এ ধারায় বলা আছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ না জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করে বা করায় তাহলে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যে অভিযোগ দায়ের করিয়েছে ওই ব্যক্তি অনধিক সাত বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবে। উপধারা (২) মতে, কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইবু্যনাল উপধারা (১)-এর অধীন সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করতে পারবে। দেশের ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনের অপরাধগুলোর কঠোর শাস্তিবিধানের জন্য ১৯৮৩ সালে প্রথম নারী নির্যাতন (নিবর্তক শাস্তি) অধ্যাদেশ নামে একটি আইন জারি করা হয়। পরে ১৯৯৫ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন নামে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয় এবং এর মাধ্যমে ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশটি রহিত করা হয়। পরে মামলা পরিচালনাকালে এ আইনেরও কিছু সীমাবদ্ধতা, অসঙ্গতি ও ত্রম্নটি-বিচু্যতি পরিলক্ষিত হওয়ায় ২০০০ সালে 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন' নামে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন পাস করা হয়। পাশাপাশি ১৯৯৫ সালের 'নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন'টি বিলুপ্ত করা হয়। ২০০০ সালের আইনটিই বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের জন্য প্রচলিত আইন হিসেবে বলবৎ আছে। এর পরে অবশ্য ২০০৩ সালে আইনটিতে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু আইনটির কঠোরতাকে পুঁজি করে প্রতিপক্ষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে বহু মিথ্যা মামলা দায়ের হচ্ছে মর্মে অভিযোগও উঠছে দেশজুড়ে। মামলা দায়েরের পর তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হলে আগে থেকেই শিখিয়ে-পড়িয়ে নেয়া লোকজন দিয়ে একতরফা জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যমে মামলাটি আমলে নেয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়। এরপর ট্রাইবু্যনাল মামলাটি আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত আসামি জানতেও পারে না যে প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে এ মামলায় তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতু্যদন্ডও হতে পারে। বাংলাদেশে পুলিশ বলছে নারী নির্যাতনের মামলার আশি শতাংশরই কোনো প্রমাণ মেলে না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় জামিন পাওয়া সহজ নয় বলে অনেকে এর অপব্যবহার করছেন। সুতরাং, মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের শিকার হলে বিবাদী আইনের মধ্যে থেকেই আদালতে লিখিত পিটিশন দায়ের করার মধ্য দিয়ে প্রতিকার পেতে পারে। মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের দায়ে অপরাধীর সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে। নারী নির্যাতন ঠেকাতে উলিস্নখিত আইনটি যথার্থভাবে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হোক, কোনো নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার না হোক সেটাই সবার প্রত্যাশা। ১৭ ধারার প্রতিকার কীভাবে ফলপ্রসূ করা যায় তা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইন গ্রন্থ প্রণেতা \হঊসধরষ:ংবৎধল.ঢ়ৎধসধহরশ@মসধরষ.পড়স