বাংলাদেশের আইনে গর্ভপাতের শাস্তি

প্রকাশ | ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

হাসান শাহরিয়ার
১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৩১২ থেকে ৩১৪ ধারায় গর্ভপাত সম্পর্কে বলা হয়েছে ভ্রূণ গর্ভে স্থিতি লাভের পর থেকে গর্ভকাল পূরণ হওয়ার আগে গর্ভস্থিত ভ্রূণকে অপসারণ করাকে গর্ভপাত বলে। মনে করুন, একজন গর্ভবতী নারী চিকিৎসাধীন আছেন। জরুরি অস্ত্রোপচারের সময় তিনি যখন অজ্ঞান, ঠিক সেই মুহূর্তে চিকিৎসক যদি মনে করেন তার গর্ভপাত ঘটানো জরুরি, তাহলে কি তিনি তা করতে পারবেন? হঁ্যা, আইন সেই অনুমতি দিয়েছে। তবে তাকে পরবর্তীতে প্রমাণ করতে হবে, তিনি সরল বিশ্বাসে ওই নারীর জীবন রক্ষার্থেই অমনটি করেছিলেন। দন্ডবিধির ৩১২ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো স্ত্রীলোকের গর্ভপাত ঘটান এবং যদি সেই গর্ভপাত সরল বিশ্বাসে ওই স্ত্রী লোকের জীবন রক্ষার্থে না করা হয়ে থাকে তাহলে সেই ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড কিংবা জরিমানা দন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এ ক্ষেত্রে যে নারীর গর্ভপাত করা হয়েছে, তিনি যদি তার গর্ভে শিশুর বিচরণ অনুভব করে থাকেন, তাহলে গর্ভপাত ঘটানো ব্যক্তিকে সাত বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে অর্থদন্ডে দন্ডিত করা যাবে। এতক্ষণ পর্যন্ত গর্ভপাতের যে বিধান বর্ণনা করা হলো, তাতে গর্ভপাত ঘটানোর জন্য তৃতীয় ব্যক্তিকে সাজা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। কোনো নারী যদি নিজ উদ্যোগে নিজের গর্ভপাত ঘটান, সে ক্ষেত্রে তার কি কোনো সাজা হবে? দন্ডবিধির ৩১২ ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যে নারী নিজ থেকে গর্ভপাত ঘটান, তিনিও এই ধারার আওতাভুক্ত হবেন। এবার ধরা যাক, একজন নারীর অনুমতি ছাড়াই যদি কেউ অসদুদ্দেশ্যে গর্ভপাত ঘটান, তার সাজা কী? ১৮৬০ সালের দন্ডবিধি আইনের ৩১৩ নম্বর ধারায় গর্ভবতী স্ত্রীলোকের অনুমতি ছাড়া ৩১২ ধারার অনুরূপ অপরাধ করলে তার শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে বলে উলেস্নখ আছে। ৩১৪ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গর্ভপাত ঘটানোর উদ্দেশ্যে করা কোনো কাজের ফলে সেই স্ত্রী লোকের মৃতু্য ঘটে, তাহলে সেই ব্যক্তি ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং একই সঙ্গে অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবেন। ওই কাজটি যদি নারীর সম্মতি ছাড়া করা হয় তাহলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে বা উপরোলিস্নখিত দন্ডে দন্ডিত করা যাবে।