ভারতে কারাবন্দিরা উপস্থাপনা করছেন রেডিও অনুষ্ঠান

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

আইন ও বিচার ডেস্ক
জেলকে এখন বলা হয় সংশোধনাগার। অর্থাৎ, সাজাপ্রাপ্ত বন্দি যাতে জেলে বাস করে নিজেদের চরিত্র সংশোধন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। এবার সংশোধনাগারে বন্দি মানুষের জন্য চালু হলো রেডিও স্টেশন। এর নাম দেয়া হয়েছে রেডিও দমদম। এই রেডিও সম্প্রচার সীমাবদ্ধ থাকবে শুধু দমদম জেলের মধ্যে। এই সংশোধনাগারের প্রায় চার হাজার বন্দির ঘুম ভাঙবে গানের সুরে। রোজ ১০ ঘণ্টার অনুষ্ঠান হবে। সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে অনুষ্ঠান। চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। উপস্থাপক বা রেডিও জকি বাইরে থেকে আনা হচ্ছে না। এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দমদম জেলের পাঁচজন বন্দিকেই। নানা মামলার আসামি মনুয়া মজুমদার, জয়ন্ত সিংহ, তুহিন রায়, জিনিয়া নন্দী ও পীযূষ ঘোষ এই দায়িত্ব পালন করবে। তারাই নানা বিষয়ে কথা বলবে। রেডিও অনুষ্ঠানে সহ-আবাসিকদের গান শোনাবে। বিভিন্ন পর্বে আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান উপস্থাপন করবে তারা। এ জন্য এই পাঁচ বন্দিকে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রথমে সংশোধনাগারের আবাসিকদের মধ্যে থেকে এমন দশজনকে বেছে নেওয়া হয় যারা অতীতে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিল। প্রশিক্ষণের পর চূড়ান্ত পাঁচজনকে বেছে নেওয়া হয়। তাদের শেখানো হয়েছে, কীভাবে কথা বলতে হবে, গান বাজাতে হবে। কোথা থেকে গান বাজবে? তার জন্য হাজার হাজার গানের ভান্ডার গড়ে তোলা হয়েছে। একটি সুইচ টিপলে গানের সুরে ভেসে যাবে কারাগার। সিনেমার গান যেমন বাজবে, তেমনই থাকবে ভক্তিমূলক সংগীত। ভবিষ্যতে অনুরোধ গান শোনানো হবে। জোর দেওয়া হবে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে। কারাগারের বন্দিদের কাছে বেতার যন্ত্র থাকার কথা নয়। মোবাইলে এফএম শোনার সুযোগও নেই। তাহলে কীভাবে তারা অনুষ্ঠান শুনবে? বিষয়টি খোলসা করেছেন কারামন্ত্রী। রেডিও দমদমের সূচনায় কারাগারে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি জানিয়েছেন, এই সংশোধনাগারের বিভিন্ন স্থানে মোট ১০০টি স্পিকার বসানো হয়েছে। তার মাধ্যমে বন্দিরা অনুষ্ঠান শুনতে পাবে। অর্থাৎ, রেডিও দমদম শোনার জন্য ট্রানজিস্টর দরকার হবে না। ওই স্পিকারের মাধ্যমে বন্দিরা নিজেদের সেলে বসে গান শুনতে পারবেন। রেডিও জকি যেহেতু বন্দিরাই, তাই সংশোধনাগারের একটি ঘরকে স্টুডিও হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে বসে অনুষ্ঠান উপস্থাপন করবে বন্দিরা। এই পুরো কাহিনীতে অন্য মাত্রা যুক্ত করেছে মনুয়া মজুমদার। খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা ভোগ করছে সে। প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামী অনুপমকে খুন করেছিল মনুয়া। নতুন ভূমিকায় সে খুশি। তার বক্তব্য, ভালো লাগছে নতুন কাজ করতে পেরে। আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আশা করি ঠিকভাবে অনুষ্ঠান উপস্থাপন করতে পারব। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে আগেই এ ধরনের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। গত বছর আগ্রা, তামিলনাড়ু ও হায়দরাবাদের একাধিক কারাগারে অভ্যন্তরীণ রেডিও সম্প্রচার চালু হয়েছে। কারামন্ত্রী জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য কারাগারে ভবিষ্যতে নিজস্ব বেতার স্টেশন চালু করার ভাবনা রয়েছে। অভিনব এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যসরকারের কারাবিভাগের উপদেষ্টা বি ডি শর্মা। রেডিও দমদমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'জেলের আবহসংগীতময় হবে। কয়েদিদের জীবনে যে একঘেয়েমি থাকে, সেটা কমবে। তাদের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ও মানসিক উন্নতিতে সহায়ক হবে। এটা পরীক্ষামূলক সম্প্রচার। ইতিবাচক ফল মিললে অন্যান্য জেলেও আশা করি চালু হবে।' তবে অনুষ্ঠানের সময়সীমা নিয়ে অন্য বক্তব্য রয়েছে সাবেক এই কারাগার কর্তার। তার মতে, 'জেলের মধ্যে অন্য কর্মসূচিও থাকে। পড়াশোনা, খেলাধুলো, চাষবাস রয়েছে। এর জন্য সময় রাখতে হবে। তাই রেডিওর সম্প্রচার যদি অবসর সময়ে হয়, সেটাই ভালো। তাহলে অন্যান্য কর্মসূচিও থাকবে, গানও থাকবে।' ডয়েচে ভেলে অবলম্বনে