শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮

কোয়ারেন্টিনের শর্ত না মানলে জেল জরিমানা উভয়ই হতে পারে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণকে একটি বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে। তবে করোনাভাইরাসের মতো সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেশে আইন রয়েছে। শর্ত না মানলে রয়েছে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮-এর ২৫(২) বিধান মতে, কেউ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বাধা দিলে বা নির্দেশ পালনে অসম্মতি জানালে তাকে তিন মাস কারাদন্ড, অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দেওয়া যাবে। আর যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা থাকার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেন তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কাজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং তাকে অনূর্ধ্ব ২ মাস কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
  ২৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণকে একটি বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে। তবে করোনাভাইরাসের মতো সংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেশে আইন রয়েছে। শর্ত না মানলে রয়েছে জেল জরিমানার ব্যবস্থা। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮-এর ২৫(২) বিধান মতে, কেউ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বাঁধা দিলে বা নির্দেশ পালনে অসম্মতি জানালে তাকে তিন মাস কারাদন্ড, অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দেয়া যাবে। আর যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা থাকার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেন তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কাজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং তাকে অনূর্ধ্ব ২ (দুই) মাস কারাদন্ডে বা অনূর্ধ্ব ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। {২৬(২)}। মনে রাখতে হবে এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে।

এ আইনের ধারা-১(ত) বলা হয়েছে, সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে উড়োজাহাজ, জাহাজ, জলযান, বাস, ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহন দেশে আগমন, নির্গমন বা দেশের অভ্যন্তরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল নিষিদ্ধকরণ করতে হবে। এ ছাড়া যদি কোনো বোর্ডিং, আবাসিক হোটেল বা অস্থায়ী বাসস্থানের মালিক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির যুক্তিসঙ্গত কারণে ধারণা হয়, উক্ত স্থানে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে তিনি অনতিবিলম্বে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন এবং জেলা প্রশাসককে অবহিত করবেন {ধারা ১০ (২)}।

ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীরা যদি মনে করে, কোনো সংক্রমিত ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করা না হলে তার মাধ্যমে অন্য ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে, তাহলে ওই ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে অন্য কোনো স্থানে স্থানান্তর বা জনবিচ্ছিন্ন করা যাবে। (ধারা-১৪)

ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী যদি বিশ্বাস করে, কোনো যানবাহন সংক্রামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে বা সংক্রামক জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে, তাহলে তিনি ওই যানবাহন জীবাণুমুক্তকরণে গাড়ির মালিক বা স্বত্বাধিকারী বা তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন। ধারা-১৮

যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগে মৃতু্যবরণ করেন তাহলে ওই ব্যক্তির মৃতদেহ ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নির্দেশনা মোতাবেক দাফন বা সৎকার করতে হবে। ধারা-২০(১)।

এই আইনের আওতায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ মার্চ হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ অমান্য করায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় এক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ১৮ মার্চ শরীয়তপুরে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার ১৪ দিন না যেতেই বাজারে ঘোরাঘুরি করায় দুই ইতালি প্রবাসীকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ ছাড়া বাংলাদেশ দন্ডবিধিতেও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে আইন রয়েছে। এ বিষয়ে দন্ডবিধি আইনের ২৬৯, ২৭০ ও ২৭১ ধারায়ও স্পষ্ট বলা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি বেআইনিভাবে বা অবহেলামূলকভাবে এমন কোনো কাজ করে যার কারণে জীবন বিপন্নকারী কোনো রোগ ছড়াতে পারে, এটা বিশ্বাস থাকার কারণ সত্ত্বেও এরূপ কোনো কাজ করে তাহলে সে অনধিক ছয়মাস সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন (ধারা ২৬৯)।

কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো বিদ্বেষমূলক কাজ করেন যার কারণে সংক্রমণ রোগের বিস্তার লাভ করতে পারে বিশ্বাস করা যায়, যেমন সরকার যদি কাউকে কোয়ারেন্টিনে যেতে বলেন সে যদি না যায় বা বাড়িতে অবস্থান এবং তার ফলে অন্য কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক দুই বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন (ধারা ২৭০)।

কোন স্থান সংক্রমণ ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হয়, যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের ওপর কোয়ারেন্টিন আরোপ করে এবং তার জন্য কোন আইন বা বিধান প্রণয়ন করে কোনো ব্যক্তি যদি সেই বিধান জ্ঞাতসারে অমান্য করে যেমন সরকার যাদের কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে তারা যদি কোয়ারেন্টিনের কোনো বিধান অমান্য করে যার দ্বারা সংক্রমণ বিস্তার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক ছয়মাস কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন (ধারা ২৭১)।

সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮-এর ধারা ৪-এ যে রোগগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হলো ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, ফাইলেরিয়াসিস, ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এভিয়ান ফ্লু, নিপাহ, অ্যানথ্রাক্স, মারস-করোনা, জলাতঙ্ক, জাপানিস এনকেফালাইটিস, ডায়রিয়া, যক্ষ্ণা, শ্বাসনালির সংক্রমণ, এইচআইভি, ভাইরাল হেপাটাইটিস, টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য রোগগুলো, টাইফয়েড, খাদ্যে বিষক্রিয়া, মেনিনজাইটিস, ইবোলা, জিকা, চিকুনগুনিয়া এবং সরকারি গেজেট অনুযায়ী যে কোনো রোগ।

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

ঊসধরষ: ংবৎধল.ঢ়ৎধসধহরশ@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<93831 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1