বৃষ্টিহীন মেঘের আকাশ

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০২০, ০০:০০

রোকেয়া ইসলাম
সকাল থেকে নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় পাচ্ছে না করবী। সাতটা দিন বাসায় ছিল না তাতেই বাসার এই হাল; আর যদি কোনোমতে একটা মাস থাকতে হতো তাহলে সাহারা মরুভূমির সব ধুলো বাসায় জড়ো হতো। এত এলোমেলো ধুলো ময়লা কাপড়ের স্তূপ। সবমিলিয়ে একেবারে জঘন্য অবস্থা। একটা গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে থাইল্যান্ড গিয়েছিল। রাতের ফ্লাইটে ফিরেছে। প্রতিবার টু্যর থেকে ফিরে পুরো বাসা খুব নোংরা পায় তাই অফিসে কোনোভাবে ম্যানেজ করে ট্রেনিং থেকে ফেরার একদিন পর জয়েন করে। ফরহাদ অফিসে যাওয়ার পর থেকে সেই যে শুরু করেছে এখনো কাজ মাঝামাঝি পর্যায়ে নিতে পারেনি। এর মাঝে দুবার ফোন করে খবর নিয়েছে ফরহাদ। কাল রাতে দুবার বলেছে করবী না থাকায় কি কি অসুবিধা হয়েছে। সাতদিনের রান্না ছিল ফ্রিজে। ধোয়া চাদর বালিশের কভার বিছানায় পেতে দিয়েই গিয়েছিল পরিষ্কার এক সেট গুছিয়ে হাতের কাছে রাখা ছিল। ইস্ত্রি করা কাপড় হাতের কাছেই ছিল। তবুও দিনে তিন চারবার ভিডিও কল দিতে হয়েছে সাহেবকে। করবী ঢাকা নেই, তাতেই দেশ শূন্য শূন্য লাগছে। বুয়াটা খুব কাজের ঝটপট করে করবীর মনমতো করে গুচ্ছাছে। \হফোন বেজে উঠে। নিশ্চয়ই ফরহাদ। হাতে নিতেই পারভীন। আজ বিকালে ওরা বসছে আসাদ গেট আড়ংয়ের উপরে। পারভীন ওর খুব কাছের বন্ধু। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব দুজনের। দুজন দুজনের কাছে নিজেকে উপুড় করে দেয়। দুজনের কাছে গোপন বলে কিছু নেই। একজনের সমস্যা অন্যের সঙ্গে শেয়ার না করা পর্যন্ত শান্তি নেই। ওদের বন্ধুত্ব নিয়ে খুব মজা করে ফরহাদ। আজ যদি দেখা না হয়, তাহলে একমাসের মধ্যে দেখা হওয়ার সুযোগ করা কঠিন হয়ে যাবে। অফিস-বাবারবাড়ি-শশুরবাড়ি মিলিয়ে মোটামুটি ব্যস্তই থাকবে করবী। দুটো বড় সুটকেস ভর্তি করে দুই বাড়ির স্বজনদের জন্য উপহার এনেছে সেগুলো হস্তান্তর করতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। পারভীনের পছন্দ জানা আছে করবীর। প্রতিবার ওর উপহার খুব পছন্দ করে পারভীন। একমাস পারভীনের সঙ্গে দেখা হবে না দুজন একই শহরে থেকে। এটা অসম্ভব দুজনের জন্যই। উপহার দেয়া একটা ছুতো আজ দেখা হওয়াটাই বড়। \হফোনটা রাখতেই মনে হলো শেষবার যখন ওরা কফিশপে বসেছিল। তখন পারভীনের কানে একজোড়া পাথরের দুল দেখেছিল। খুব পছন্দ হয়ছিল করবীর। মুখে কিছু বলেনি। করবীর পছন্দ হয়েছে শুনলেই পরদিনই একই রকম আরেকটা কিনে উপহার দেবে করবীকে। নিজের জন্য ঠিক তেমন একজোড়া দুল এনেছে থাইল্যান্ড থেকে। রঙটা সঠিকভাবে মেলাতে পেরেছে কিনা বুঝতে পারছে না করবী। আজ করবী সেটা পরেই কফিশপে যাবে। ধুলো ময়লা থেকে নিজেকে বাঁচতে বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই বুয়া একটা কোনা ভাঙা দুল এনে ওর হাতে দেয়। খাটের তলা থেকে পেয়েছে। দুলটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে থাকে করবী। সুটকেস খুলে থাইল্যান্ড থেকে কেনা দুল জোড়া বের করে রঙ মেলাতে মেলাতেই ফরহাদের নম্বর ঢুকে যায় মোবাইলে। আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবে বাইরে থেকে খাবার কিনে আনবে। রান্নার ঝামেলা যেন বাঁধিয়ে না বসে করবী। ফরহাদের দুষ্ট মিষ্টি হাসিতে কানের পর্দায় তরঙ্গ তোলে। ঘরে ঢোকে করবী। বুয়া ততোক্ষণে ধুলো ময়লা সরিয়ে ফেলেছে ঘর থেকে। দুল জোড়া ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কোনা ভাঙা দুলটা ছুড়ে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আকাশে চোখ রাখে করবী। আকাশে বৃষ্টিবিহীন মেঘের আনাগোনা। মেঘের খেলা দেখতে থাকে করবী।