বাংলাদেশের চিত্রকলা

পৃথিবীর বুকে এ দেশের মানচিত্র জ্বলজ্বল করবে নক্ষত্রের মতো এটি আমাদের গভীর প্রত্যাশা। এ দেশের শিল্পকলা বলিষ্ঠ, বৈচিত্র্যময় এবং উদ্দীপ্ত। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের এসব চিত্রকলা সম্পর্কে আমরা আশাবাদী।

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

শাহরিয়ার সোহেল
শিল্প মাধ্যমগুলোর ভেতর চিত্রশিল্প একটি অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম। চিত্রের ভাষা চিরন্তন। দেশ-কাল-পাত্রের সীমানা ছড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি চিত্রশিল্প যে কোনো দেশেই অবলীলায় প্রদর্শিত হতে পারে এবং সেখানকার মানুষের ভাষা বা আচার-আচরণ, কৃষ্টি-কালচার যেমনই হোক না কেন, চিত্রের ভাষা বুঝতে পারে। এজন্যই হয়তো বলা হয়, 'একটি চিত্র হাজার শব্দের চেয়েও শক্তিশালী'। চিত্রকলা তাই মানুষের অন্তরের অন্তর্নিহিত ভাষা ও বোধ। কিন্তু যত উৎকৃষ্ট গদ্য বা কবিতা হোক না কেন তা এক স্থানের অধিবাসীরা বুঝতে পারে, অন্য স্থানের অধিবাসীরা তার কিছুই বুঝতে পারে না। ভাষা আলাদা হওয়ার জন্য এ রকম হয়ে থাকে। পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো ভাষা রয়েছে। এক্ষেত্রে অনুবাদ করে অন্যস্থানে পাঠালেও হুবহু মূলটির মতো হওয়া সম্ভব নয়। একজন বিজ্ঞ সমালোচক বলেছিলেন, 'অনুবাদ করবার পর যা বাকি থাকে, তাই মূল লেখার ভাববস্তু'। সেক্ষেত্রে অনুবাদ আলাদা শিল্প হতে পারে, ছায়া অবলম্বনে লেখার মতো হতে পারে; কিন্তু প্রকৃত লেখা হয় না। সেক্ষেত্রে চিত্র নিজেই একটি অনবদ্য একক। এর কোনো অনুবাদের প্রয়োজন হয় না। যে কোনো চিত্র পৃথিবীর যে প্রান্তেই প্রদর্শিত হোক না কেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই এর অর্থ বুঝতে পারে। এখানেই চিত্র শিল্পের প্রাথমিক সার্থকতা। \হস্বাধীনতার পর থেকে এ দেশে চিত্র শিল্প বহুদূর এগিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিকতা, স্বদেশিকতায় সুমহান উজ্জ্বল এসব চিত্র শিল্প। এস এম সুলতান ও জয়নুল আবেদীনের নাম এই শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং তারাই এ দেশের চিত্র শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উত্তীর্ণ করেছেন। বর্তমানে বহু আন্তর্জাতিক মানের চিত্র শিল্পী আমাদের দেশে রয়েছে। এ দেশে চিত্রকলাকে আন্তর্জাতিক অর্থেই 'আধুনিক' বলা যেতে পারে। এ দেশের চিত্রকলার ইতিহাস খুব পুরানো না হলেও ১৯৪৭ সালের দেশ ভাঙন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভু্যত্থান, ১৯৭১-এর স্বাধীনতা ইত্যাদি জড়িত। পর্যায়ক্রমে এসব বৎসর চিত্রকলার ওপরও নানা প্রকার প্রভাব এনেছিল। চিত্র শিল্পের শুরুর দিকে অবনীন্দ্রনাথ, যামিনী রায়, রবি বর্মা, রবীন্দ্রনাথ এবং পরবর্তী পর্যায়ে শফিউদ্দিন আহমদ, কামরুল হাসান, আনোয়ারুল হক এরাই এ দেশের চিত্র শিল্পীদের শিক্ষাগুরু বলা যেতে পারে। তারা প্রত্যেকেই তাদের মতো করে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে মানুষ ও প্রকৃতিকে এঁকেছন। কিন্তু যে আঙ্গিকেই আঁকা হোক না কেন, 'বিশ্বের সর্বত্র মানুষের প্রয়োজন এক, ধ্যান ধারণা এক, অনুভূতি এক'। সে জন্য তাদের চিত্র শিল্পে মানুষ ও প্রকৃতির সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্না-হতাশা-উচ্ছ্বলতা-উষ্ণতা এ সবই ঘুরেফিরে এসেছে। একটি সময় মনে করা হতো; যেহেতু চিত্রকলা দৃশ্যমান মাধ্যম এবং অনেকটাই ব্যক্তি নির্ভর; সে জন্য হয়তো এখানে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব দ্রম্নত পড়ে। অনগ্রসর সমাজ একে ভালোভাবে মেনে নিতে পারে না এবং তারা বেশ খানিকটা লজ্জিত, ভীত বা মারাত্মক সংশয়ের ভেতরে থাকে। তবে আমাদের অনেক শিল্পীই মাতিস, পিকাসো, ডুফি, পল গঁগঁ্যা, ফ্র্যাঞ্জ ক্লাইন দ্বারা বেশ খানিকটা প্রভাবিতও হয়েছেন। তবে প্রত্যেকেরই নিজস্বতা রয়েছে। এটি আশাবাদের ব্যাপার।' প্রত্যেক সংস্কৃতিই যেমন তার নিজস্ব ভাষা তৈরি করে নেয়, তেমনি তার শিল্পকলাও তৈরি করে নেয়'। একটি দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় পরিবেশ সব কিছুরই প্রভাব শিল্পকলায় পড়ে। এ দেশের শিল্প কলাও তার ব্যতিক্রম নয়। চিত্রকলা তৈরীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইজম বিভিন্ন সময় এসেছে। তার ভেতর রয়েছে; রিয়েলিজম, ফবিজম, কিউবিজম, আইডিয়ালিজম, মিস্টিসিজম, ইম্প্রেশনিজম, দাদাইজম, ফিউচারিজম, সিনথিসিজম, এক্সপ্রেসনিজম, পিউরিজম, সুরিয়ালিজম, অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেসনিজম, সোশ্যালিস্ট রিয়ালিজম প্রভৃতি। অনেক শিল্পীই 'অৎঃং ভড়ৎ ধৎঃং ংযধশব্থ, একথা মনে রেখেই ছবি এঁকেছেন; কিন্তু তা কতটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে, তা সময়ই বলবে। যদিও শিল্পীরা বিমূর্ত রূপের ভেতর থেকেই মূর্ত রূপকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পীদের ব্যক্তিগত সমস্যা অন্য যে কোনো দেশের শিল্পীদের সমগোত্রীয়। জীবনের নানা প্রকার জটিলতা তারা অ্যাবস্ট্রাক্ট ভঙ্গিতেই প্রকাশ করতে বেশি আগ্রহী। যদিও এ দেশের প্রধান চিত্র শিল্পীদের অনেকেই বাস্তবের ওপরই অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন- এস এম সুলতান, জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। এদের অনেকেই রিয়েলিজম ধারায় ছবি এঁকেছেন। আবার অনেকেই নির্বস্তুকভাবে এগিয়েছেন। \হমৌলিক বিষয়েরই সম্ভবত কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা হয় না। শিল্পেরও কোনো ধরা বাঁধা সংজ্ঞা নেই। টলস্টয় মনে করতেন, 'শিল্পকলা হবে মানুষের জন্য প্রয়োজনীয়, হবে নতুন সৃষ্টি, হবে সুখবোধ্য'। আলফ্রেড বার মনে করেছেন, 'শিল্পকলার সংজ্ঞা দেওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়'। স্যার জন রথেনস্টাইনের মতে, 'শিল্পীর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে শিল্প'। জর্জ সান্টায়ানা বিশ্বাস করতেন যে, 'শিল্পকলার কাজ হলো মানুষকে আনন্দ দেয়া'। বার্নাড বেরেন্সন শিল্পকলাকে 'জীবন উন্নয়নকারী কর্ম' বলে অভিহিত করেছেন। সুজান লেঙ্গার শিল্পকলাকে একটি 'অনুভূতি বা ফিলিং'-এর ব্যাপার বলে মনে করতেন। তবে শিল্পকলা সম্পর্কে সার্বিকভাবে বলা যায় যে, 'শিল্পকলা মূলত একটি অভিব্যক্তি, শিল্পী ও দর্শকের মধ্যে একটি আত্মিক যোগাযোগের সেতু এবং সর্বোপরি একটি নতুন কিছুর নির্মাণ'। স্যার কেনেথ ক্লার্ক আধুনিক চিত্রকলার তিনটি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেছেন, ক) শুদ্ধতম বিমূর্তরূপ, খ) কমিউনিকেশন গুণ, গ) চিত্রে বিজ্ঞানের বর্ধিত ব্যবহার। \হপৃথিবীর প্রায় সব দেশের চিত্রকলাই কম বেশি উপরোক্ত গুণসমূহে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের চিত্র শিল্পীরাও এর ব্যতিক্রম নন। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও এ দেশের শিল্পীদের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এ দেশের শিল্পীদের ভেতর যারা বেশ ভালো করেছেন এবং বর্তমানেও করছেন, তাদের ভেতরে রয়েছেন, শিল্পী এস এম সুলতান, জয়নুল আবেদীন, শফিউদ্দিন আহমদ, কামরুল হাসান, আনোয়ারুল হক, সৈয়দ শফিকুল হোসেন, মোহাম্মদ কিবরিয়া, হামিদুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, রশিদ চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, কাইয়ুম চৌধুরী, আবদুল বাসেত, দেবদাস চক্রবর্তী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, আবু তাহের, রফিকুন্নবী, হাশেম খান, দেলোয়ার হোসেন, আমিরুল ইসলাম, মোহাম্মদ মহসীন, আবুল বারক আলভী, শহীদ কবীর, স্বপন চৌধুরী, চন্দ্র শেখর দে, মাহমুদুল হক, মাহবুবুল আমীন, কাজী আবদুর রউফ, আব্দুল মতিন, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, নিতুনকিন্ডু, মোস্তফা মনোয়ার প্রমুখ। এছাড়াও অগণিত চমৎকার শিল্পী রয়েছে আমাদের দেশে। যাদের সৃজনশীল কর্ম ইতোমধ্যে সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশের চিত্রকলা মূলত আধুনিক। তবে তা কোনো বিশেষ ধারায় প্রবাহিত নয়। একই শিল্পী বিভিন্ন ধারায় কাজ করেছেন। লোকজ-আধুনিক ধারায় অনেকেই ছবি এঁকেছেন। অনেকেই যামিনী রায়ের শিল্পাঙ্কন পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। হালকা প্রাথমিক রং ও দ্বিমাত্রিক ডিজাইনের মাধ্যমে সচ্ছল, সবেগ ও সতেজ স্টাইল নির্মাণ করেছেন। বিশেষত ফিগারেটিভ বা স্বাস্থ্যবতী গ্রাম্য লাস্যময়ী রমণীদের চিত্র অংকনের ওপরই প্রাধান্য দিয়েছেন এ ধারার অনেকে। এস এম সুলতান, জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান প্রমুখ মূলত এ ধারার শিল্পী। শুধু রমণীদের এঁকেছেন তা নয়, আবহমান বাংলার প্রকৃতির চিত্রও চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাদের ক্যানভাসে। আধুনিক পাশ্চাত্য চিত্রকলার ধারার সঙ্গে এ ধারার তেমন কোনো মিল নেই। তবে এ শিল্পীরাই কখনো রিয়েলিস্ট এক্সপ্রেসনিস্ট, কখনো লোকজ আধুনিক, কখনো এক্সপ্রেসনিস্ট ধারায় এঁকেছেন। তাদের ছবির মূল প্রেরণা ছিল গ্রাম বাংলা, বাংলার লোকশিল্প, গণজীবন প্রভৃতি। যেমন, কর্ষণ, গুনটানা নৌকা, মাঝি, গরুর গাড়িরচালক, সাপুড়ে মেয়ে প্রভৃতি। বাংলাদেশের চিত্রশিল্পের সার্থকতা এদের হাত ধরেই পরবর্তী সময়ে পৌঁছে যায়। \হপাশ্চাত্য-বাঙালি ধারা বাংলাদেশের চিত্রকলার দ্বিতীয় প্রধান ধারা। এ ধারায় পাশ্চাত্যের সঙ্গে লোকশিল্পের বিশেষ সংমিশ্রণ ঘটেছে। এ ধারার প্রধান শিল্পীদের ভেতর রয়েছে শফিউদ্দিন আহমদ, কাইয়ুম চৌধুরী, রশীদ চৌধুরী প্রমুখ। তাদের ছবিগুলো প্রধানত তল নির্মাণ করে করা হতো। কেউ কেউ কোনো মানুষের ফিগার আঁকেননি। নদী, বন্যা, নৌকা, জাল, উদ্ভিদ ইত্যাদি ছিল তাদের শিল্প প্রেরণার মূল। আবার কেউ কেউ নিসর্গ, লোকজ কর্ম বা মানবদেহের রূপ সবই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। এ ধারায় দ্বি-মাত্রিকতার পরিবর্তে ত্রি-মাত্রিকতা সংযোজন করার প্রচেষ্টা চলে। এ ধারার ছবিগুলো কখনো উজ্জ্বল রং, কখনো হালকা, কখনো মিশ্র প্রভৃতি চিত্রিত হতো। তেল রং এ ধারার প্রধান মাধ্যম। কিছুটা পাশ্চাত্য ধারার সঙ্গে লোকশিল্প মিলিয়ে এগোতে থাকে পাশ্চাত্য-বাঙালি ধারা। এ ধারায় বাংলার নিসর্গ, চৈতন্য, মানুষ ও সংস্কৃতির প্রতীকীরূপ অধিক বিধৃত হয়েছে। কাব্যধর্মী হয়েও যেন বাস্তববাদী। অনেক ক্ষেত্রেই এ ধারা এক্সপ্রেসনিস্ট এবং সিম্বলিক হয়ে ওঠে। এ দেশের আধুনিক শিল্পীদের বেশির ভাগই পাশ্চাত্য-আধুনিক ধারার অন্তর্র্ভুক্ত। এ ধারা মূলত বিমূর্ত রূপ। বিমূর্ত রূপের ভেতর থেকেই প্রকৃতি ও সত্যকে শিল্পীরা অনুসন্ধান করেছেন। কিউবিজম, সুরিয়ালিজম, এক্সপ্রেসনিজম, অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেসনিজমের দ্বারা এ ধারার ছবিগুলো প্রভাবিত। এ পর্যায়ে যারা ভালো করেছেন, তাদের ভেতরে রয়েছেন আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বশীর, কিবরিয়া, আব্দুল বাসেত, আবদুর রউফ, দেবদাস চক্রচর্তী প্রমুখ। নব প্রজন্মের অনেকেই এ ধারার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। এ ধারায় ব্যক্তিগত অনুভূতি, রঙের স্বাধীন ব্যবহার, নিজ ইচ্ছাকে বৃহৎ আঙ্গিকে দেখাবার প্রচেষ্টা চলছে। এটি অনেকটা নিরীক্ষাধর্মী ধারা। এ ধারাতে ইসলামী, মোগল, লোক-বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্য নিয়ে কিছুটা পাশ্চাত্য ধারার আদলে ত্রিমাত্রিক ভলু্যম প্রধান ডাইনামিক নির্বস্তুক চিত্র অংকন করা হচ্ছে। এগুলো অনেকটাই ম্যাজিক-রিয়ালিজম বা নিও-রিয়ালিজম জাতীয়। \হবাংলাদেশের চিত্র শিল্পীরা বিশ্ব চিত্র শিল্পীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছেন। তবে এ দেশের শিল্পীদের তেমন কোনো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সহজে চোখে পড়ে না। প্রচলিত ধারা, ব্যবহৃত মাধ্যম, পরীক্ষিত দৃষ্টি ভঙ্গির ভেতর থেকেই কাজ করছেন। তারপরও অনেকের কাজ দৃষ্টি নন্দন হচ্ছে। বাংলাদেশের চিত্রকলা মূলত লোকজ আধুনিক, পাশ্চাত্য-বাঙালি এবং পাশ্চাত্য-আধুনিক ধারার অনুসারী। এ দেশের অনেক চিত্রকর্মই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পেয়েছে। যদিও এ দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-পরিবেশ সর্বদা শিল্প প্রচেষ্টার অন্তরায়। শিল্প চর্চা এ দেশে বিলাসিতার নামান্তর হয়ে পড়েছে। যে দেশের নাগরিকরা মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্যই সমগ্র প্রচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়, সে দেশে প্রকৃত সুন্দর- স্বপ্নময় শিল্পী পাওয়া বেশ কষ্টকর। ড. মুহম্মদ শহীদুললস্নাহ বলেছিলেন, ' যে দেশে গুণের কদর হয় না, সে দেশে জ্ঞানীগুণী জন্মাতে পারে না।' এই নির্মম সত্যটি তিনি বহু পূর্বেই বুঝেছিলেন। এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য শিল্পীরা যদিও চেষ্টা করে চলেছেন, তবুও আরও বাস্তবিক পদক্ষেপ ও গণসচেতনতা প্রয়োজন। তবুও আমরা একেবারে আশাহত নই। এস এম সুলতানের বলিষ্ঠ কৃষক ও বাংলার রমণী সকল, প্রথম বৃক্ষরোপণ, জয়নুল আবেদীনের ম্যাডোনা-৪৩, দুর্ভিক্ষের চিত্রসমূহ, কামরুল হাসানের বিখ্যাত পোস্টার, স্বাধীনতাভিত্তিক চিত্র কর্মগুলো আমাদের উজ্জীবিত করে, প্রাণবন্ত করে, উদ্ভাসিত করে, আবারও বেঁচে ওঠার আশা জাগায়। তরুণ প্রজন্মের অনেক শিল্পীই বাস্তবকে ধারণ করে শাশ্বত সুন্দরের চিত্র নির্মাণের প্রতি এগিয়ে চলেছেন। এ জাতি বহুবার প্রতারিত হয়েছে। কিন্তু অস্তিত্ব একেবারে শেষ হয়ে যায়নি এবং এ জাতিকে কেউ আবহমান কাল ধরে পরাজিত করে রাখতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এ জাতি জয়ী হয়েছে। আমাদের চিত্র শিল্পীরা এ দেশ ও এ জাতিকে আরও বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে নিশ্চয়। পৃথিবীর বুকে এ দেশের মানচিত্র জ্বল জ্বল করবে নক্ষত্রের মতো; এটি আমাদের গভীর প্রত্যাশা। এ দেশের শিল্পকলা বলিষ্ঠ, বৈচিত্র্যময় এবং উদ্দীপ্ত। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের এসব চিত্রকলা সম্পর্কে আমরা আশাবাদী।