গ্রন্থালোচনা

কবিতা সমগ্র-২

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বিপ্লব মাহমুদ
আধুনিক কাব্যাঙ্গনে একটি নাম শাশ্বত হাসান। অনেকে তাকে নগর যন্ত্রণার ছায়া শিকারি বলে। ঠিক তাই, আমি এবং কবি শাশ্বত হাসান ঢাকা শহরের এমন কোনো কবিতা পাঠের আসর নেই যে যাইনি। হঁাটতে হঁাটতে এই শহরের অলি-গলিতে গিয়েছি। মানুষের দুঃখ কুড়িয়েছি। ’৮০র দশকের শুরুতে কবিতাঙ্গনে তার আগমন। তিনি ১৯৫৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার বাঙ্গাল গঁাও-গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছন্দ সম্পকের্ প্রগাঢ় ধারণা থাকা সত্তে¡ও তিনি প্রথম থেকেই মুক্ত ছন্দে কবিতা লেখেন। কবিতা সমগ্র-২ পড়তে গিয়ে দেখলাম তিনি নিজস্ব ভাষা সৃষ্টি করেছেন। ত্রিশ কবিদের মধ্যে কবি জীবনানন্দ দাশ আলাদা। মধ্যষাটের কবিদের মধ্যে কবি আবুল হাসান, সাবদার সিদ্দিকী স্বতন্ত্র। তদ্রƒপ ’৮০র দশকের মধ্যে কবি শাশ্বত হাসান আলাদা হয়ে এসেছেন। উত্তরাধুনিক কবিদের মধ্যে দিরেদা, এজরা পাউন্ড, রঁাবো প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। সুররিয়ালিস্টদের মধ্যে অঁান্দ্রে ব্যঁাতো। বাংলাদেশের কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ ওদেরই একজন। এরা প্রত্যেকেই যার যার স্থান থেকে হুইটম্যানের আধুনিকতাবাদকে পরিশিলিতরূপে আনার চেষ্টা করেছেন। এটাই উত্তরাধুনিকতা। কবি শাশ্বত হাসানের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আধুনিক বাংলা কাব্যঙ্গনের যুবরাজ কবি শাশ্বত হাসান। তার কবিতা সমগ্র-২ পড়লেই বুঝা যাবে। গতানুগতিক কবিতার ভাষা থেকে, তিনি সম্পূণর্ আলাদা। সময় পরিক্রমে তিনি হয়ে উঠেছেন এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। কবিতা সমগ্র-২ এর প্রথমে দেখা যায় আধ্যাত্মিকতার কথনে একটি কবিতা ‘দখলদার’। জানি একটি কালো লোক আসে আমার দখলদার প্রিয় আম বাগান; দ্যাখোÑ বিছানার চাদর, তুমি বিচারক। কবিতা : দখলদার/বসন্তের ঊষাদশর্ন ত্রিশ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালে আমরা হয়েছিলাম রিফুজি অথবা কেউ কেউ লাশ। মুক্তিযুদ্ধের ওপর তার বহু কবিতা অত্র গ্রন্থটিতে গ্রন্থিত হয়েছে। কবির ক্ষোভের প্রকাশ তার স্বাধীনতাবিষয়ক কবিতাকে উজ্জ্বল করে রেখেছে। মানুষের খুলি দ্যাখো দে গালি দে গায়েবানা জানাজা দেÑ জলে ভাসে আমার দেশের গোপন লজ্জা। কবিতা : ৭১ এর পাদটিকা/বসন্তের ঊষাদশর্ন। কাপাশিয়া থেকে ঢাকা প্রেম যেন টেনে রাখে মাথার খুলি শান্ত জলধারা। কবিতা : বে-শরম/বসন্তের ঊষাদশর্ন। ২১ ফেব্রæয়ারির ওপর অনেক কবিই বিখ্যাত কবিতা লিখেছেন। যেমন সিকান্দর আবু জাফর, মাহবুবুল হক। কবি শাশ্বত হাসান তার কবিতা অন্যভাবে উপস্থাপন করেছেন। আমি কি বসে থাকতে পারি? তন্দ্রালুস। চৈত্র সাজে রাজসিক নারী ঘুমায় একা, লাল পলাশের দেশে। কবিতা: লাল পলাশের দেশে/বসন্তের ঊষাদশর্ন। আন্তজাির্তক পরিমÐলে কবি বিচরণ করেছেন, রক্তপাত দেখেছেন, মিয়ানমার থেকে প্যালেস্টাইন, সিরিয়া। মানুষের গলাকাটা লাশ দেখে তার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। অস্থির সময়ের নীরব সাক্ষী আমরা। তাই তিনি লেখেন: বসন্তের ঊষাদশর্ন হলো না আর তার বুকের ভিতর আগুন দেহখানি ভাসমান। যারা তার মাংস খেলো, কলিজা খেলো, ঠেঁাট খেলো ওদের উল্লাসগুলো এতদিন রক্ত উদ্ভিদ হবে। কবিতা: বসন্তের ঊষাদশর্ন/বসন্তের ঊষাদশর্ন কবিতা সমগ্র-২ এ অসংখ্য সুন্দর কবিতা রয়েছে যেমন গিরিদশর্ন, এই আমার গঁাও, মেষপালক, পাথরের খঁাড়ি, পেটে আগুন জ্বলে, তাইজদ্দিন বচন ইত্যাদি। সুন্দর প্রচ্ছদ। একটিমাত্র বানান ভুল রয়েছে তাও আবার সূচিতে। আমি এই গ্রন্থটির সফল প্রচার কামনা করি। কবিতাসমগ্র-২, শাশ্বত হাসান, প্রচ্ছদ রিমস, মূল্য-২১০ টাকা, তিউড়ি প্রকাশন, পরিবাগ, ঢাকা।