বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
গ্রন্থালোচনা

সহজে বাংলা বানান

জোবায়ের মিলন
  ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

বাংলা বানানের বিভ্রাট সর্বত্র ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। প্রকাশনা থেকে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে ব্যানার, দেয়ালচিত্র থেকে সাইনবোর্ড; সরকারি দপ্তর থেকে বেসরকারি অফিস সব পর্যায়ে এর উপর্যুপুরিতা লক্ষ্যণীয়। এক নদী রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত এই মাতৃভাষার ভুলরূপ লেখ্য ব্যবহারের প্রতি নেই আমাদের একরত্তি আক্ষেপ। আমরাই সম্ভবত সেই জাতি- যারা (অধিকাংশ) ঔদাসীন্যতায় ভুল বানান ব্যবহার করেও লজ্জা বোধ করি না। ধর্তব্যহীন বিবেচনা করে চালিয়ে যাই নিত্যনৈমিত্তিক লিখিত কর্মকান্ড। এ যে মাতৃভাষার প্রতি চরম অপমান, তা বোধেই নিই না।

তাতে করে ভাষার বানান দূষণের মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত যে দূষিত পরিবেশের বিস্তার ঘটছে তার দিকে দৃষ্টি নেই এক বিন্দু। আবার বাংলা বানানের সঠিক নিয়ম যে একটি পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া; নিরন্তর কাজের মধ্য দিয়ে যে এর উৎকর্ষের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে এবং পরিবর্তিত রূপ প্রকাশ করছে তার দিকেও আমাদের নেই সচেতনতা। আমরা অনেকে এখনো বাংলা বানানের পূর্ব-প্রচলিত রূপ ব্যবহার করতে উৎসাহী এবং এর পরিবর্তী রূপ যে আছে তার কোনো খোঁজও রাখি না। 'প্রাণী' কবে 'প্রণি' হলো, 'ঈদ' কবে 'ইদ' হলো, 'হোষ্টেল' কবে 'হোস্টেল' হলো, আবার 'কেন' কবে থেকে 'কোনো' বলা শ্রেয়, ''ধরণ' না 'ধরন', 'ভারতি' না 'ভারতী' এসব আগে পরের নিয়ম-রীতি না জেনেই নিজের মতো করে গায়ের শক্তিতে, তর্কে, ভুলে ভুল প্রয়োগের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছি বিষোদ্গারিত ধোঁয়া।

অথচ এই আমরাই ইংরেজিসহ বিদেশি ভাষার শব্দসমূহ নির্ভুলভাবে লিখছি এবং প্রাণান্ত চেষ্টা করছি। আমাদের দেশে বানানবিষয়ক কর্মকান্ড পরিচালনার প্রধান দায়িত্ব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান 'বাংলা একাডেমি'র। কিন্তু বাংলা একাডেমি থেকে এখনো প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও বইসমূহে বানানের ভিন্ন ভিন্ন রূপ বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে বৈকি! এবং 'বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান ও বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান' দুটি বইতে অনেক ক্ষেত্রে একই শব্দের দুই বানান প্রবল দ্বিধা তৈরি করে। এতসব জঞ্জাল থেকে কিছুটা উত্তরণের বা সহজ করে বা প্রায়শ ভুল হতে পারে এমন সব শব্দের সঠিক রূপটি প্রকাশ করার তাগিতে রচিত এই ''সহজে বাংলা বানান'' গ্রন্থটি। এটি তরুণ গবেষক, প্রবন্ধিত 'শাহাদাৎ রুমন'-এর একটি প্রয়াস। আবার সহজ শব্দ ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত যে বাংলা শব্দভান্ডারকে সংকুচিত করে চলেছি- তার বিপরীতে অপ্রচলিত শব্দও এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বানানরীতিও সংযুক্তি করা হয়েছে- যা সর্বশেষ সংশোধিত।

পাঠ থেকে বলা যায়, সাধারণ পর্যায় থেকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত নির্ভুল বানান চর্চা বাহিত করার জন্য 'সহজে বাংলা বানান' গ্রন্থিত গ্রন্থটি পাঠ হতে পারে সবার। অতি সহজে দ্বিধান্বিত শব্দের বানান ও এখন পর্যন্ত শেষ পরিমার্জিত বানান খুঁজে পাওয়ার সহজ পথ আছে এই সংকলনে। পূর্বে প্রচলিত শব্দসমূহের প্রমিতকরণের মধ্য দিয়ে যে বর্তমান রূপ তারও প্রাপ্তি ঘটে এখানে। যদিও বাংলা একাডেমি প্রণীত বানানরীতিই গ্রহণ করা আবশ্যক; সেই দিক থেকে বর্তমান সংকলনেও বাংলা একডেমি প্রণীত বানানরীতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ভিন্নতা হলো, এখানে উপস্থাপনটি একেবারে সহজ করে, বিভ্রান্তিগুলো চিহ্নিত করে, মনে রাখার মতো কৌশল অবলম্বন করে উপস্থাপন করা হয়েছে।

একটি সংকলনে সংকলকের যে বিচক্ষণতার সুযোগ থাকে সে বিচক্ষণতায় 'শাহাদাৎ রুমন' ভাষার প্রতি, বানানের প্রতি একান্ত আন্তরিক হয়ে, নিজের দায়বোধ থেকে, কর্তব্য ভেবে সাধারণের বানান ঔদাসীন্যতাকে দূর করার বিশেষ গুরুত্বে, বানানে হ-য-ব-র-ল থেকে কিছুটা উত্তোরণের আরও একটু সহজ উপায় খুঁজতে আন্তরিক পরিশ্রম করে ভুল ও ভ্রান্তি কাটানোর পরিশ্রমীদের সঙ্গে নিজেকে শামিল করেছেন- যা বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য কাজে আসবে। সব সময় সঙ্গে রাখার মতো আকার গ্রন্থটিকে আরও সহজ করেছে। নিয়মগুলোর বর্ণনা সরল ভাষায় হওয়ায় সহজ-বোধগম্য। বর্ণের পর্যায়ক্রমিকতা যে কোনো শব্দ হাতের নাগালে পেতে বেগ পেতে হয় না বলে হাঁটতে হাঁটতে, চলার পথেও যে কোনো শব্দের বানান পরখ করে নেওয়া যায় গ্রন্থটি থেকে।

তবে গ্রন্থটির মলাট, পেপার, বাঁধাই, টেকসই নির্বাচনে সামান্য নজর দিলে তা দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রহে স্থায়িত্ব পেত। তা নিশ্চয় পরবর্তী সময়ে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া সব মিলিয়ে ভাষার লিখিত ব্যবহারে সঠিক বানান প্রয়োগের একটি সহজীগ্রন্থ 'সহজে বাংলা বানান' এই গ্রন্থটি।

বই : সহজে বাংলা বানান। ধরন: বানান রীতি ও সহজীকরণ।

গ্রন্থক : শাহাদৎ রুমন

প্রচ্ছদ : খন্দকার সোহেল। প্রকাশক : ভাষাচিত্র। মূল্য : ২০০টাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে