বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেলায় আসা কয়েকটি নতুন বই

নতুনধারা
  ০৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

নির্বাচিত কবিতা

১৯৮৪ সালে বের হয়েছিল কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ, এরপর সব মিলিয়ে ১৬টি কাব্যগ্রন্থ বের হয়েছে- দীর্ঘ কাব্যযাত্রায়।

প্রকাশিত ১৬টি কাব্যগ্রন্থের কবিতা নিয়ে- এই কবির এই 'নির্বাচিত কবিতা' গ্রন্থটি।

এই গ্রন্থের কবি ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘকাল কবিতায় নিমগ্ন থেকেছেন- এখনো তিনি তার সৃজনশীল স্পর্ধা নিয়ে অবিচল। তিনি বহু ধরনের কবিতা লিখেছেন এবং সেগুলো বিভিন্ন নিরীক্ষাপ্রবণতায় সংশ্লিষ্ট। তার কবিতায় জীবন আছে, সমাজ আছে, প্রকৃতি আছে, মানুষ আছে, দেশ-কাল আছে এবং আছে প্রতীকের ব্যঞ্জনাও, আছে রূপক, আছে ছন্দের বিভিন্নমুখী ব্যবহার, অনুপ্রাসের নতুনমাত্রা, মিলবিন্যাসের নিরীক্ষা ও অন্যান্য সূক্ষ্ণ কারুকাজ। একেক কাব্যগ্রন্থ একেক বৈশিষ্ট্য নিয়ে উজ্জ্বল। প্রকাশিত ১৬টি কাব্যগ্রন্থের কবিতা নিয়ে- এই কবির এই 'নির্বাচিত কবিতা' গ্রন্থটি। এসব কবিতায় চৈতন্যের যে বহুতল ও স্তর কবি উন্মোচন করেছেন- পাঠককে নিয়ে যায়- সেই স্তরে ও তলের গভীরে।

একজন উৎপিপাসু কবিতার পাঠক, এই গ্রন্থের কবিতায় বহু বর্ণিল ও বিভিন্ন ভূগোলের খোঁজ পেয়ে যাবেন, তা পাঠকের সংবেদন সৃষ্টি করে এক ধরনের ইন্দ্রিয়ানুভূতিও তৈরি করবে- যা ইন্দ্রিয়জ্ঞানে পরিণত হবে, সেই সঙ্গে ভালো কবিতার শিল্প-সৌন্দর্য নিয়ে- স্বতঃস্ফূর্ত ও আনন্দময় অনুভূতিরও জন্ম দেবে।

প্রকাশক : এবং মানুষ

প্রচ্ছদ : রাজীব দত্ত

মূল্য : ৪০০ টাকা

পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৯২ (১২ ফর্মা)

প্রথম প্রকাশ : ফেব্রম্নয়ারি ২০২১

আশরাফ আহমেদ

একজন আধুলি

উপন্যাসে জীবনের কাহিনিকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে রূপায়িত করা হয়। এর গ্রন্থনরীতিতে উপন্যাসকার যেমন সরাসরি ঘটনাকে বর্ণনা করেন, ঠিক তেমনি কখনো কখনো চরিত্র নিজেই হয়ে ওঠে জীবনের কথাকার। সম্প্রতি বইমেলা উপলক্ষে অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হাকিম আরিফের একজন আধুলি এই দ্বিতীয় ধরনের বর্ণনা রীতিতে বিকশিত হওয়া একটি উপন্যাস। উপন্যাস বলতে এটিকে ক্ষুদ্র উপন্যাস বলাই শ্রেয়। মাত্র ৯৫ পৃষ্ঠার মধ্যেই এর ঘটনাপ্রবাহ আবর্তিত হয়েছে।

এই উপন্যাসের নায়ক বাংলাদেশের প্রায় হারিয়ে যাওয়া একটি আধুলি তার আত্মবয়ানিতে নিজের জীবনের ঘটনাপ্রবাহকে বলে গেছে। উপন্যাসের কাহিনিটি একটু অভিনব এই কারণে যে, ঘটনাচক্রে এই আধুলিটি মালিকের পকেটে করে প্রথমবারের মতো ইউরোপ ভ্রমণ করে। সেখানে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় 'তারই'- মানের একটি ইউরো আধুলির। এই ইউরো আধুলির সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে প্রতিদিন দুজনের মধ্যে যে সংলাপ চলে তা যেন দুজনের অজান্তেই যুক্তিবহুল বাহাসে রূপ নেয়। এই বাহাসে প্রায়শই ইউরো কয়েনটি তার নৃগত, সাংস্কৃতিকগত, পরিভ্রমণগত এবং অর্থগত শ্রেষ্ঠত্বকে প্রতিপন্ন করতে চাইলেও বাংলাদেশি আধুলিটি সব সময় তার আত্মরক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশের রাষ্ট্র্র পরিচয়; এর নিজস্বতা এবং দেশপ্রেমকে বন্ধুর কাছে তুলে ধরতে চেয়েছে। এভাবে দুটি মুদ্রার মাঝে মানবীয় গুণ আরোপের মাধ্যমে উপন্যাসকার হাকিম আরিফ বাংলাদেশকেই যেন বিশ্বের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বয়ান করতে চেয়েছেন।

এই বর্ণনারীতির পরিণতিতে একটি আধুলি প্রকারান্তরে একটি রূপকাশ্রিত উপন্যাসে পরিণত হয়। এখানে বাংলাদেশের আধুলিটি যেন প্রকৃত অর্থেই এ দেশের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি যে দৈশিক সীমার বাইরে গিয়ে ক্রমাগত আত্মপরিচয়ের সংকটে পড়ে। দেশের অসম্পূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় বড় হয়ে ওঠার কারণে এ দেশের প্রতিটি মানুষই আধুলিটির মতো যেন এক একজন ঊন-মানুষে পরিণত হয়েছে, যে নিজেকে ভিন্ন সমাজব্যবস্থার ক্ষমতাবান মানুষের কাছে তুলে ধরতে বার বার ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে আধুলির প্রতিপক্ষ ইউরো-আধুলিটি যখন রূপকাশ্রিত একজন নীল রক্তবাহী জার্মানে পরিণত হয়। আধুলি সদৃশ আমাদের মানুষের মানবিক চেতনা যেমন সমৃদ্ধ হয় না, তেমনি রাষ্ট্র নৈতিকভাবেও এ দেশের মানুষ তাদের জাতিগত ও রাষ্ট্র পরিচয়কে তুলে ধরতে হোঁচট খেয়ে থাকে। আর এর জন্য দায়ী হচ্ছে এ দেশের অসংস্কৃত রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও এর পরিপোষণকারী নেতারা, ঠিক যেমনটি এই উপন্যাসে প্রধান চরিত্র আধুলির জীবনেও ঘটেছিল। কারণ বাংলাদেশের এক অর্থমন্ত্রীর অহেতুক ঘোষণাতেই আধুলির অর্থমান প্রায় শূন্যে গিয়ে পতিত হয়।

একজন আধুলি ঔপন্যাসিক হাকিম আরিফের প্রথম উপন্যাস হলেও কাহিনি গ্রন্থনে, চরিত্রচিত্রণে এবং ঘটনার রূপায়ণে যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। কারণ এই উপন্যাসের প্রধান গুণ হচ্ছে এর কাহিনি পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ঘটনার মধ্যে আটকে রাখে। আমি বিশ্বাস করি, পাঠক একবার শুরু করলে শেষ না করে আর উঠতে চাইবেন না। আমি এই উপন্যাসের বহুল প্রচার কামনা করি এবং ঔপন্যাসিক হাকিম আরিফ কথাকার হিসেবে দ্রম্নত সফলতা লাভ করুক এই প্রত্যাশা করছি।

মনিরা সুলতানা, জার্মানি

বদলে যাওয়া ভূমি

হারুন পাশার তৃতীয় উপন্যাস 'করোনা কিংবা বদলে যাওয়া ভূমি'। করোনা মহামারি নিয়ে অধিকতর পরিণত বয়ানে লেখা এ উপন্যাস।

বিশ্বমারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশেও আসে। রাজধানীতে আবির্ভূত এই ভাইরাস ক্রমশ বিস্তার ঘটায়। যা এক সময় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। করোনা সংক্রমণের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, চিরাচরিত বহুমুখী সামাজিক দুর্নীতি, সরকারি ত্রাণপ্রচেষ্টায় জনপ্রতিনিধিসহ ব্যবসায়ীকুলের দুর্নীতি, নিম্নবর্গীয় মানুষের দুঃখ-কষ্ট সবকিছুই স্বল্পসংখ্যক চরিত্রের কথকথায় চিত্রিত। চরিত্রের কথকথায় আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ঘটনাক্রম চিত্রিত হওয়া হারুন পাশার উপন্যাসের আঙ্গিক বৈশিষ্ট্য।

উপন্যাসটি ব্যতিক্রমধর্মী এই অর্থে যে, দুর্ভিক্ষ বা মন্বন্তর নিয়ে বাংলাসাহিত্যে সফল গল্প-উপন্যাস সৃষ্টি হলেও মহামারি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসের দেখা মেলে না। নাৎসী জার্মানির ফ্রান্স আক্রমণের দুর্দশার প্রতীকী উপন্যাস আলবেয়ার কামুর 'দ্য পেস্নগ' এক মহৎ সৃষ্টি। পাশার বইটির তুলনায় সেটি বেশ কিছু ভিন্ন চরিত্রের। সেদিক বিচারে হারুন পাশার করোনা মহামারিভিত্তিক উপন্যাসটির ভিন্নমাত্রিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এখানে মূল ঘটনার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বহুমাত্রিক, বিশেষত সামষ্টিক বিচারে।

এ উপন্যাসের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এর অন্তর্নিহিত শ্রেণিচেতনা। করোনাভাইরাসের টার্গেট ফুটপাতে ঘুমানো শ্রমিক বা দেহাতি মানুষ, বস্তিবাসীর তুলনায় নধরকান্তি, মেদস্থূল দেহের অধিকারী বিত্তবান, উচ্চশ্রেণির মানুষ। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, পেশাজীবী প্রভৃতি সুবিধাবাদী শ্রেণিও করোনার টার্গেট।

সমাজে, প্রশাসনে, ব্যবসাবাণিজ্যে যে দুর্নীতিচিত্র দীর্ঘ সময় ধরে চলছে স্বরূপ উদঘাটন এবং বিস্তার করোনা সংক্রমণের উপলক্ষে চিত্রিত। পাশাপাশি এর ইতিবাচক দিক দুর্নীতি ও অনৈতিকতা-বিরোধী প্রতিবাদী আন্দোলন, নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবর্গীয়দের বেঁচে থাকার লড়াই। এক কথায় উপন্যাসে ইতি ও নেতির দ্বৈত রূপের প্রকাশ আপন বৈশিষ্ট্যের পরিস্ফুট। অর্থাৎ যথাযথ প্রতীকের ব্যবহার।

এ উপন্যাসে কেবল দেশের নয়, এসেছে বহির্বিশ্বের আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংকট। চরিত্ররা কেবল দেশে বিদ্যমান সমস্যা-সংকট নিয়েই চিন্তিত নয়, তারা খোঁজ রাখছে বহির্বিশ্বের সমস্যা ও সংকটের। কারণ যুগটা বিশ্বায়নের, দেশগুলো নানা স্বার্থে পরস্পর সংশ্লিষ্ট।

এ উপন্যাসের আখ্যান দুটি পর্বে বিভক্ত। একটি হলো 'ঘর আমার আপন হলো' এবং অন্যটি 'সবুজ ডগায় ধূসর নাচ'। আর এ উপন্যাসে যেহেতু লেখকের উপস্থিতি নেই সেহেতু এসেছে 'সংযুক্তি' অংশ। দুই পর্ব বা উপন্যাসের কাহিনির লিঙ্কআপ হলো এই 'সংযুক্তি'।

'করোনা কিংবা বদলে যাওয়া ভূমি' উপন্যাসে মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি হিশাম এবং সাব্বির। হিশাম ব্যবসা করত এবং সাব্বির চাকরি করত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।

'ঘর আমার আপন হলো' হিশামের চিন্তা-ভাবনার নোট। যে চিন্তাভাবনা করোনার সময়ে তার নিজের, সমাজের মানুষের উদ্ভট কার্যক্রম, ব্যবসায়ীদের ধূর্ততা এবং করোনায় ঘটে যাওয়া নানা সংকট থেকে আগত।

'সবুজ ডগায় ধূসর নাচ' অংশ হলো সাব্বিরের জীবন, সংসার বা চারপাশে ঘটে যাওয়া সংকটের নোট। যেখান থেকে জানা যায় সাব্বিরের পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট এবং বাবা, ছোটোভাই, ছোটো ভাইয়ের বউয়ের করোনায় আক্রান্ত হওয়া। জানা যায়, সাব্বিরের অর্থ-সংকট, পরিবারে করোনা রোগী, চাকরি থাকা, না-থাকা নিয়ে তার সংশয়, এ অবস্থাতেও হাসিমুখে ছেলেমেয়েকে সময় দেওয়া, বউকে সংসারের কাজে সহযোগিতা করার মধ্য দিয়ে সাব্বিরের বিপর্যস্ত জীবনের চিত্র।

এ উপন্যাসে করোনাক্রান্ত ভূমির সঙ্গে পাওয়া যায় করোনামুক্ত ভূমিও। উপন্যাসের শেষে চরিত্রটা আনন্দ করে করোনামুক্ত ভূমিতে। কারণ তখন তাদের হাতে এসে গেছে করোনার ভ্যাক্সিন। আবার পাওয়া যায় অনেকেই যে আন্দোলন করছে তারও চিত্র। এ আন্দোলন করছে তারাই যারা করোনাকালে চাকরি হারিয়েছে, যাদের আত্মীয়স্বজন চিকিৎসা অবহেলায় মারা গেছে, মত প্রকাশ করতে গিয়ে আইসিটি আইনে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে- তাদের মুক্তির দাবিতেও হচ্ছে এ আন্দোলন।

সব কিছু মিলিয়ে উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে স্বদেশ-বিদেশে বিরাজমান সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের বাস্তব উপাদান, সেই সঙ্গে সমাধানের সুস্পষ্ট আভাস-ইঙ্গিতে। চরিত্রে প্রধান কাহিনি বর্ণনার নতুনত্ব তথা অভিনবত্বপূর্ব উপন্যাসের চেয়েও এ উপন্যাসে অধিকতর কুশলতায় প্রতিফলিত। পাঠক এ উপন্যাসে করোনা সংক্রমণের বাস্তব ও নান্দনিক রূপচিত্রের প্রতিফলন দেখতে পাবেন। বিষয় নির্বাচন ও প্রকাশশৈলীর অভিনবত্বই এ উপন্যাসের বড়ো গুণ।

আহমদ রফিক

মিষ্টি হাসির ছোঁয়া

সেলিব্রেটি নজরুল সংগীতশিল্পী, কবি ও গীতিকার ফেরদৌস পারভীনের প্রথম কবিতার বই 'মিষ্টি হাসির ছোঁয়া' সম্প্রতি এই বইটি প্রকাশ করেছে নক্ষত্র প্রকাশনী। ফেরদৌস পারভীন বাংলাদেশ বেতার, টিভি চ্যানেলের জন্য প্রচুর গান লিখলেও কোনো বই লিখেননি। প্রচ্ছদ করেছে : সায়মা নেহ্‌রীন নীপা। বইটির দাম রাখা হয়েছে ২০০ টাকা। বইটিতে মোট কবিতা স্থান পেয়েছে ৪৮টি।

কবির সম্পর্কে লিখেছেন নার্গিস আনার বেগম, শফিকুল হাসান, প্রফেসর মোস্তফা মনির, ড. রিয়াহিন ফারজানা লোপা ও কবি রানা হোসেন। 'মিষ্টি হাসির ছোঁয়া' এ প্রয়াস তার অনন্য প্রতিভার আরেকটি স্ফুরণ। ফেরদৌস পারভীনের শিল্পের বহু শাখায় বিচরণ তার। কাদামাটি দিয়েই গান আর কবিতা। দেশ, মা-মৃত্তিকা তথা আলস্নাহ্‌র অসীম সৃষ্টির প্রকৃতি তাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। ফেরদৌস পারভীন একজন স্বাধীন চেতা মানুষ। উলেস্নখযোগ্য কবিতার মধ্যে রয়েছে মা দিবস, আমার শহর, সাথী হারা, বৃষ্টির খেলা, বৈশাখ শিরোনামের কবিতাগুলোও অসাধারণ ভালো লাগবে সব পাঠকের।

ফেরদৌস পারভীন প্রতিটি কবিতায় সহজ সরলভাবে যাপিত জীবনের ভালোবাসা, ভালোলাগা, অভিমান, আবেগ-অর্তি, টানাপড়েন, স্বপ্ন বেঁচে থাকা, এসব অভিব্যক্তিগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। ভাষা ও শব্দ প্রয়োগে তিনি সরল পথ বেঁচে নিয়েছেন। ফেরদৌস পারভীন বেশির ভাগ কবিতার ক্ষেত্রেই অক্ষরবৃত্ত, ছন্দকে প্রাধান্য দিয়েছেন। খুব সহজ করে ছোট ছোট করে বলেছেন, হৃদয়ের কথা, কোথাও কোথাও অন্তমিল দিয়েছেন। অনেকগুলো কবিতা আছে একটানা পড়ার মতো। এছাড়া 'মিষ্টি হাসির ছোঁয়া' বইটিতে ফুঁটে উঠেছে নারীর জীবন, দেশ প্রেম, প্রকৃতিসহ নানা বিষয়ের কবিতা। যেমন ভাষা নিয়ে কবিতাটি সবার ভালো লাগবে, তার কিছু অংশ

'ভাষার জন্য জীবন দেয়া, এ যে বিরল ঘটনা

রফিক বরকত ও ভাষা সৈনিকদের, নেই কোনো তুলনা।

বীরের মতো বুক ফুলিয়ে নামল মাঠে

গুলি চালাতে দ্বিধা করল না লাটে

লুটিয়ে পড়ল সবাই পথের ধারে

তাদের সম্মান জানায় সর্বজনে শহীদ মিনারে।'

ফেরদৌস পারভীন বইটি উৎসর্গ করেছেন মু. আবদুর রহমান মন্টু এবং সারা পৃথিবীতে মহামারি করোনায় যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি।

মৃদুল ইবনে হোসেন

কুসুম জোয়ার

'কুসুম জোয়ার' কবি মিতা সালেহ উদদীনের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। এর আগে তার লেখা 'বিশ্বস্ত ভোর' নামে প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয়। স্বল্পসময়ের ব্যবধানে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ কবিতার প্রতি অসীম ভালোবাসার ফসল। বাসনাকাতর মন নামে তার একটি উপন্যাসও রয়েছে। ঘর-সংসার নিয়ে শত ব্যস্ত থাকলেও কবিতাকে তিনি ভুলে যান না। তাই খানিকটা সময় পেলেই কবিতার কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন, তারপর শব্দমালা সাজিয়ে নিজের কথা বলেন। যে কথায় স্বপ্ন আর ভাবনাগুলো মেলে ধরেন।

মিতা সালেহ উদদীনের 'কুসুম জোয়ার' কাব্যগ্রন্থে মোট ৬৪টি কবিতা স্থান পেয়েছে। প্রতিটি কবিতায় রঙ আছে, আছে স্বপ্নের কথা। অনেক কবিতাই স্বপ্নের রঙে এঁকেছেন। বইটিতে 'ও বেলার কথন', 'কুসুম জোয়ার', 'মোহ', 'আমাকে ছেড়ে যাবে যে', 'নীল ঘোড়া', 'বন্ধু যখন বান্ধবী নয়', 'প্রযুক্তির ত্রিতাল', 'যখন ভালোলাগা জন্মে', 'বিপ্রতীপ', 'মন চায় যেতে', 'প্রথমে যেমন শেষে নেই', 'দুর্ঘটনার ঊর্ধ্বকাটা সূচক'সহ রয়েছে অন্যান্য কবিতা। প্রতিটি কবিতায় সহজ-সরল শব্দে সাজানো। সহজ করেই সব বলতে চেয়েছেন। সহজেই বলেছেন- ছেদ বলো বিদায় বলো/ বিচ্ছেদ বলো, ঝরে পড়া বলো/ এ সব কিছু নিরাবেগ করে দেয় (সময়ের বেমানান)। আবার লিখেছেন- জানালার পর্দাটা উঠবে না/ কোলাহলে পড়বে না/ প্রজাপতির ন্যায় ওড়াওড়ি চলবে না (ছাদ)। এরকম করে প্রায় সব কবিতাই লিখেছেন যা একটানে পড়া যায়। প্রতিটি কবিতাতে নিজস্ব সুর বেঁধে দিয়েছেন, অনেকটা পথ চলার মতো।

'কুসুম জোয়ার' কবিতাটি স্থান পেয়েছে ৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায়। কবিতার শুরুটা এভাবে- 'তোমার মনে জন্মেছিল গোপন কুসুম জোয়ার/ সূর্যাস্তের মতো কতকাল কেটেছিল বেহিসেবী বলয় তোমার / কাউকে ধার দেবার বিন্দুমাত্র সময় ছিল না তোমার...। 'যখন' কবিতায় লিখেছেন- যখন দিনগুলো তৃষ্ণার্ত হয় / রাতগুলো নির্ঘুম হয়/ ঝরেপড়া পাতাগুলো বিরহে বরফ হয়....। কবি মনে যে হাজারো প্রশ্ন ভিড় করে মিতা সালেহ উদদীন তা বলতে ভুল করেননি। প্রশ্ন করেছেন নির্ভয়ে, আবার স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন। তাই তো বলেছেন- নারীমন সে তো গুল্মলতার মতোন/ খড়কুটো পেলে আঁকড়ে থাকে/ যদি হয় বঞ্চিত লোহাপোড়া জীবন/ ব্যর্থ নারীমন ভেঙে যায় কাচের মতোন ( গুল্মলতা)।

মিতা সালেহ উদদীনের 'কুসুম জোয়ার' কাব্যগ্রন্থ পড়ার জন্য কাউকে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। পড়তে পারবেন হেসেখেলে নির্মল আনন্দ নিয়ে। ছোট ছোট বাক্যবিন্যাসে ছোট ছোট কথা, ছোট ছোট অভিমান, ছোট ছোট স্বপ্ন, ছোট ছোট ভাবনা আপনাকে কিছুটা হলেও আনমনা করবে। যেমন করে কবি লিখেছেন-আমি ক্ষণিক রেণুদুয়ারে দাঁড়িয়ে/ আমাকে চলে যেতে হবে/ থাকবে তুমি/ থাকবে ছায়া/ থাকবে মায়া/ থাকবে বিকেল/ থাকবে দেয়াল কথা...। অভিনন্দন কবি মিতা সালেহ উদদীনকে। 'কুসুম জোয়ার' বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন আহমেদ নিলয়। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ১৬০ টাকা। বইটি প্রকাশ করেছে এবং মানুষ প্রকাশনী।

জাহিদ রহমান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে