শারদীয় নাট্যোৎসবের এবারের ¯েøাগান নারী শক্তির বিকাশ সভ্যতার প্রকাশ

চিত্তরঞ্জন দাস সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি মানসিংহের স্মৃতিবিজড়িত গঙ্গাসাগর দীঘিতটে অবস্থিত বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে আগামী ১৫-১৯ অক্টোবর অথার্ৎ সোম থেকে শুক্রবার পযর্ন্ত উদযাপিত হতে যাচ্ছে পঁাচ দিনব্যাপী শারদীয় নাট্যোৎসব। উৎসব আয়োজন, নাটক মঞ্চায়ন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপন তথা শারদীয় নাট্যোৎসবের বিভিন্ন দিক নিয়ে যায়যায়দিনের সঙ্গে কথা বলেছেন উৎসব আহŸায়ক, শারদীয় নাট্যোৎসবের প্রবক্তা এবং বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরের সভাপতি চিত্তরঞ্জন দাস। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেনÑ অবিনাশ পুরকায়স্থ

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যায়যায়দিন : এবারের শারদীয় নাট্যোৎসবের আয়োজন নিয়ে কিছু বলুন। চিত্তরঞ্জন দাস : এ বছরের একটা বিশেষ দিক আছে। আমেরিকার শিকাগোতে আয়োজিত বিশ্বধমর্ সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ যে কালজয়ী বক্তৃতা দিয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন এবং মানবসেবার যে উদাত্ত আহŸান তিনি করেছিলেন, সেই বক্তৃতার ১২৫ বছর পূতির্ এ বছর। শিকাগো, ক্যালিফোনির্য়া প্রভৃতি প্রদেশে ধারাবাহিক বক্তৃতা প্রদানে তার একটা বিশেষ কথা ছিল আর তা হলো নারীর যতরূপ তার মধ্যে মাতৃত্ব রূপটিই প্রাচ্যবাসীর কাছে সবাির্ধক   প্রিয়। ফলে নারীর বহুমাত্রিক রূপের চিত্রায়ন এবং তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম রূপটিকে চিনে নেবার কথা বিবেচনা করে এবার আমরা  পঁাচ দিনব্যাপী নাট্যোৎসবে ছয়টি নাটক মঞ্চায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি কলকাতা থেকে আমন্ত্রিত সুপণার্ বন্দ্যোপাধ্যায় সংগীত পরিবেশন করবে। কীতর্ন, পদাবলিসহ বিভিন্ন লোকজ অঙ্গিকের সংগীত ও নৃত্য পরিবেশিত হবে এই উৎসবে। যায়যায়দিন : উৎসবে কী ধরনের নাটক মঞ্চায়ন হবে ? চিত্তরঞ্জন দাস : যেহেতু এবারের শারদীয় নাট্যোৎসবের উৎসব ¯েøাগান, নারী শক্তির বিকাশ সভ্যতার প্রকাশ ফলে নারী বিষয় আশ্রীত নাটকেই মঞ্চায়ন হবে নাট্যোৎসবে। স্বামী বিবেকানন্দ যেমন বলেছেন মাতৃরূপই সবাির্ধক প্রিয় প্রাচ্যবাসীর কাছে ঠিক তেমনি সনাতন ধমার্বলম্বীদের আরাধ্য দেবী দুগার্র মাহাত্ম্য বণির্ত গ্রন্থচÐীতে আছে, সেই দেবীকে নমস্কার, যিনি সমগ্র বিশ্বে মাতৃরূপে বিরাজিতা। সন্তানকে গভের্ সযতেœ লালন আর ভূমিষ্ঠের পর থেকে সন্তানকে মায়া- ¯েœহ-মমতার অঁাচলে চিরটাকাল আগলে রাখতে ব্যাকুল যে মা সেই মায়ের বিষয় আশ্রীত নাটক এবং মা চরিত্রে রূপদানকারী মহীয়সী অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আগামী সোমবার থেকে শুক্রবার পযর্ন্ত শুরু হতে যাচ্ছে পঁাচ দিনব্যাপী শারদীয় নাট্যোৎসব।  ফেরদৌসী মজুমদার অভিনীত, আবদুল্লাহ আল মামুন রচিত-নিদেির্শত এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্য দল থিয়েটার প্রযোজিত মেরাজ ফকিরের মা নাটক উৎসব উদ্বোধনী মঞ্চায়নের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে উৎসব। মেরাজ ফকিরের মা নাটকের মধ্য দিয়ে চিনিয়ে দেবে দেশ-কাল-পাত্রের বিভাজন সত্তে¡ও মাতৃত্ব রূপটি কেন এবং কীভাবে সব সন্তানের কাছে শ্রেয় থেকে শ্রেয়তর। শ্রেয় বলে না বরং শ্রেষ্ঠত্বের গরীমায় রানী করুণাময়ী প্রজাদের ঘরবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দাম্ভিকতা প্রকাশ করলেও একসময় নিজের অসহায়ত্ত আর অনুশোচনার নিষ্পেষণে বোঝে, প্রজাশূন্য রাজ্যে রাজাই নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর। নারীর অহমিকার বিপরীতে বিনয় আহŸানের মমর্বাণী নিয়ে দেশ অপেরা মঞ্চায়ন করবে যাত্রাপালা সতী করুণাময়ী। ঢাকা নান্দনিক দেখাবে কন্যা-জায়া-জননী প্রভৃতি রূপ পরিভ্রমণকালে একজন নারীর জীবন কতটা নড়বড়ে তা প্রতিভাত হবে নাটক মঞ্চায়নের মধ্যে দিয়ে। বিবেকানন্দ থিয়েটার করে দেখাবে নারী হৃদয়ের বেদনা কীভাবে পাষাণ হৃদয়েও প্রেম আনে বিসজর্ন নাটক মঞ্চায়নের মধ্যে দিয়ে। স্বপ্নদল চিনিয়ে দেবে নারীর রূপ এবং গুনের সমন্বয়ে তার শক্তির পূণর্ বিকাশ চিত্রাঙ্গদা মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে। সংস্কার নাট্যদল বশীকরণ নাটকের মঞ্চায়ন করে দেখাবে, সংসারে পারিবারিক গোলযোগ সৃষ্টিকারী পুরুষদের নিয়ন্ত্রণের সীমানায় আটকে সংসারকে স্বস্তি এবং শান্তির মলয় বাতাস বইয়ে দিতে পাবে শেষ পযর্ন্ত নারীরাই। যায়যায়দিন : উৎসবে পূজার মেলার আয়োজন কেমন হবে? চিত্তরঞ্জন দাস : খুব ভালো। বিশাল দীঘি লাইটিং করা হচ্ছে। দীঘির প্রান্ত ছুয়ে লোকজ মেলা বসবে। নাগরদোলা, সাকার্সসহ শিশুদের বিনোদনমূলক আয়োজন থাকবে, মিষ্টি-মÐা তৈরি থেকে বিক্রি পুরো প্রক্রিয়া ক্রেতা-দশর্কদের সামনে হবে, বেত-বঁাশের কারুমেলা থাকবে অথার্ৎ মÐপ প্রদক্ষিণের পাশাপাশি অনুরাগী ভক্ত-দশর্ক মেলা-দীঘি ঘুরে নিমর্ল আনন্দ পাবে। সঠিক নিরাপত্তা, শৃঙ্খলভাবে চলাচল উপযোগী রাস্তা, সাবর্ক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় আগত দশর্করা আনন্দ পাবেন বলেই বিশ্বাষ করি। যায়যায়দিন: দশর্কদের উদ্দেশ্যে আপনার বলার কিছু আছে কি?। চিত্তরঞ্জন দাস : শারদীয় দুগার্ৎসবের কুমোর থেকে ভাস্কর, মুচি থেকে মন্ত্রপুরোহিত, পাচক থেকে পথচলতি পথিক তথা সকল শ্রেণির মানুষের কিছু না কিছু কমর্ সংস্থান হয়। ফলে নাট্যকমীের্দরও হবে সেটাই স্বাভাবিক। উপরন্তু জ্ঞানও বিনোদনের সমন্বয় নিয়ে যে নাটকের যাত্রা সে তো সকলের কাছে আদৃত ফলে এই শারদীয় নাট্যোৎসবের আয়োজন। কৃতজ্ঞতা লিজেন্ড অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের প্রতি, যার উপস্থিতি আমাদের অনুপ্রেরণা। সকলে আসবেন, দীঘি-মেলা-দেবী নাটক দেখবেন আর লাড্ডু-রসগোল্লা-খিচুড়ি পাত পেতে খাবেন। সময় স্বল্প হলে প্যাকেটে নিয়ে যাবেন। কিন্তু সকলেই এসে উৎসব আয়োজনকে পূণর্তা পাইয়ে দেবেন।