শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জন্মদিনের শুভেচ্ছা

ফারুক মাহমুদ ঋদ্ধবোধের কবি

বাবুল আনোয়ার
  ১৬ জুলাই ২০২১, ০০:০০

ফারুক মাহমুদ বাংলা কবিতার এক বিশেষ সময়ের জাতক। সত্তর দশকের কবিরা ষাটের উন্মাতাল সময়কে ধারণ করে নতুন অঙ্গীকারবোধে কবিতার ধারাকে বেগবান করে তোলেন। নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত স্বাধীন দেশের বিভিন্ন স্তরে যেমন অজস্র স্বপ্নের সমাহার ঘটে তেমনি স্বপ্নভঙ্গের বেদনাও মানবিক চেতনাকে আহত করে। সত্তর দশকের কবিরা এ রকম একটা সময়কে প্রত্যক্ষ করেন- যা তাদের নানাভাবে সংক্রামিত করে। স্বাভাবিকভাবে সেই অভিজ্ঞতা, স্বপ্ন ও স্বপ্নাহত হৃদয়ের প্রতিফলন ঘটে তাদের সৃষ্টিতে। বলা যায় সেই সময়, বাস্তবতাকে ধারণ করেই কবিতায় তারা নতুন এক বেগ ও আবেগকে মূর্ত করে তোলেন। ফারুক মাহমুদ সেই সব কবিদের একজন। কবিতার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে তার বসবাস। যা নিয়ে তিনি এখনো নিরন্তর। কবিতা যদি হয় শব্দাবলির বিশেষ প্রকাশ, ছন্দ, উপমা, চিত্রকল্পের সমন্বিত রূপ তা হলে সেক্ষেত্রে ফারুক মাহমুদের মগ্নতা ও দক্ষতা প্রশ্নাতীত। কবিতার ক্ষেত্রে তার অন্তর্গত বোধ ও পরিচর্যার বিষয়টিও অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে হয়। তিনি তার মননে যাপিত জীবন, সংসার ও জগৎকে ধারণ করেন দৃষ্টি ও বোধের গভীরে। তিনি চোখ খোলা রাখেন। রৌদ্র-খরায় যেমন ক্লান্ত হন তেমনি অবিরল জলধারায় সিক্ত হন। আর দশজনের সঙ্গে এখানে আপাত দৃষ্টিতে তেমন কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত না হলেও অন্তর্গত আয়োজনে কবি অনেকটাই ভিন্ন। এ আয়োজনে কবি ফারুক মাহমুদ সংসিদ্ধ বলা যায়। কবিতা সৃষ্টিতে শব্দ ও উচ্চারণের পরিমিতবোধে তিনি নিবিড়। পর্যবেক্ষণ ও গভীরতায় নিয়ত প্রসারমাণ। এভাবেই নির্মিত তার নিজস্ব আদল, কবিতার ভুবন।

প্রায় অর্ধশতক সময় ধরে কবিতায় নিমগ্ন তিনি। কবিতার হাত ধরে হেঁটেছেন পরস্পর। জীবন-সংসারের অনেক কিছু প্রত্যক্ষ করেছেন। নিজস্ব বোধ, অভিজ্ঞতায় শাণিত তার কবি হৃদয়। শিল্পের আররণে নিজকে প্রকাশ করেছেন। মানুষের অব্যক্ত আকুলতা, অদেখা বৈভব, বুকের গভীরে স্পন্দমান আর্তি শব্দের বৈভবে তুলে ধরেছেন। ফারুক মাহমুদ ঋদ্ধ বোধ ও শুভ্র মননের কবি। কবিতার বুনুনে সুদক্ষ কারিঘর। সঠিক শব্দ ও ছন্দের যথাযথ প্রয়োগ ও পরিশীলন তার কবি হৃদয়ের স্বভাবজাত অঙ্গীকার। এ ক্ষেত্রে তার কোনো টানাপড়েন নেই। যেমন নেই জীবনের দেখা- অদেখা আঁধার উৎসারণে

শিল্পের সন্ধান করা। তিনি এমনি একজন।

\হপ্রেম, মানবিকবোধ ও অন্তর্গত ফল্গুধারার প্রকাশ ও লালনে অন্তরঙ্গ। তার কবিতা সুদীর্ঘ পথের আলো-ছায়া।

তিনি যখন লেখেন:

- জলের বিছানা, আগুনের ঘ্রাণ জটিল অগ্নচাবি/এত প্রতারণা! মিটিল না তবু বুভুক্ষুদের দাবি/বন্ধনবেড়ি; ঠিকানা কোথায়, যুক্তিভ্রংশ লোক/ অন্ধজনের সকল শ্রবণ আলোয় ভরানো হোক / (প্রাপ্তি, ফিরে যাব দূরত্বের কাছে)

অথবা একই কবিতাগ্রন্থের 'অবস্থান' কবিতায় তার উচ্চারণ:

- অজস্র আলোর মধ্যে ঘুমানোর চেয়ে

\হমুগ্ধতার অন্ধকারে জেগে থাকা ভালো/

প্রাপ্তির পাথর তলে ঘুমানের চেয়ে

আকাঙ্ক্ষার বজ্রবুকে জেগে থাকা ভালো/

\হএভাবেই তার কবিতা গভীরতর ব্যঞ্জনা ও শিল্পবোধে অনন্য। শ্রেষ্ঠ কবিতায় তিনি পূর্ণ অবয়বে প্রকাশিত। এক সোনালি স্বপ্নগুচ্ছের সমাহার। যে স্বপ্নের অতল জোয়ারে বোধ ও ব্যাপ্তিতে তিনি বহমান। এখানে তার সৃষ্টি, হৃদয় উৎসারিত বাণী ও বুননের অমিয় ফসল। ফারুক মাহমুদের কবিতা চিন্তা ও চেতনার প্রসারিত মুগ্ধতা।

\হপ্রথম কবিতাগ্রন্থ 'পাথরের ফুল'। কবিতার পাশাপাশি সাহিত্যের ছোটকাগজ সম্পাদন করে আসছেন দীর্ঘদিন। গদ্য ও শিশু সাহিত্য রচনায়ও তিনি সমান পারদর্শী। পাথরে ফুল ফোটানোর দুঃসাহসিক প্রত্যয়ে জেগে থাকা কবি তিনি। এরপর একে একে 'অনন্ত বেলা থেকে আছি, অপূর্ণ তুমি আনন্দ বিষাদে, অন্ধকারের মুগ্ধ, হৃদয়ে প্রেমের দিন, রৌদ্র ও জলের পিপাসা, ফিরে যাব দূরত্বের কাছে, ও স্মৃতিমেঘ ও স্মৃতিরোদ, মহাভারতের প্রেম, আগুনে আপত্তি নেই, শ্রেষ্ঠ কবিতাসহ প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৭। ২০০৯ সালে সুকুমার রায় সাহিত্য পদক লাভ করেন।

জন্ম: ১৭ জুলাই, ১৯৫২, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে। জন্মদিনে কবির প্রতি আমাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে