বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আবু হেনা মোস্তফা কামালের সাহিত্য ও গান

আহমদ মতিউর রহমান
  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

আবু হেনা মোস্তফা কামাল বাংলাদেশের একজন তুলনা রহিত কবি, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, গীতিকার, গবেষক, সমালোচক। বাংলা বিভাগের অধ্যাপনা সূত্রে আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রবন্ধ সাহিত্য ও সমালোচনা সাহিত্যের একটি আলাদা ধারা তৈরি করেন, যা রেফারেন্স হিসেবে ছাত্রছাত্রী ও গবেষকরা ব্যবহার করেন। তিনি দেশের একজন শক্তিমান কবি ও গীতিকার। এত জনপ্রিয় গান তিনি লিখেছেন যে, তিনি আর কিছু না করে শুধু গানই লিখতেন চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকতেন। কোনো কোনো সমালোচক এমনও বলেছেন, এখন গানের জগতে আরেকজন রবীন্দ্রনাথ হওয়া সম্ভব নয়, যদি হতো আবু হেনা মোস্তফা কামাল তা হতে পারতেন। যুগ বা সময় বলে কথা থাকে, তাই হয়তো আক্ষরিক অর্থে সেটা হওয়া সম্ভব নয়, গানের ক্ষেত্রে তার বাণী সেই রকম ধারারই অনুরণন। প্রবন্ধ, সমালোচনা, গবেষণাধর্মী লেখা সাহিত্যের এই ক্ষেত্রেও ভাষা শৈলী, বক্তব্য উপস্থাপন রীতি, রসবোধ ও অনুভূতির বহিঃপ্রকাশে আবু হেনা স্বতন্ত্র। গানের কথা বা বাণী, যা আসলে কবিতাই, যাকে বলা হয়ে থাকে লিরিক। রবীন্দ্রনাথের গানে সুর-বৈচিত্র্য কম, কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন রবি ঠাকুরের এই ঘাটতি কখনো কখনো বাণীর অতুল ঐশ্বর্যে ঢাকা পড়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের গানের বাণী অত্যন্ত সুলিখিত, ভাবনাচিন্তা প্রসূত। তার গানের বাণী শ্রোতাদের আপস্নুত ও আচ্ছন্ন করে। নজরুলে বাণীর সঙ্গে সুরের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় বলে বোদ্ধাদের মতো। আমি মোটেই তাদের তুলনার জন্য কথাটির উলেস্নখ করছি না, সেটা আমার লক্ষ্যও নয়। আবু হেনার গানের বাণী নিয়ে দু'কথা বলতেন তা উলেস্নখ করা মাত্র। আবু হেনা মোস্তফা কামালের গানে তার আকুলতা, নিবিষ্ট লিরিক এবং প্রণয় ও স্বদেশভাবনা সাধনারই রূপ বলে আমার মনে হয়েছে।

আবু হেনার কর্মজীবন বৈচিত্র্যময়। তার কর্মজীবন শুরু করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে; পরবর্তী সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজ এবং গণসংযোগ পরিদপ্তরে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি জনসংযোগ পরিদপ্তরে সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি বাংলা বিভাগের সিনিয়র লেকচারার হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে কমনওয়লথ বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানকার গবেষণার কথা আগেই বলেছি। তিনি ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নিযুক্ত হন।

গদ্য চর্চায় আবু হেনার সৃষ্টিশীলতার নিদর্শন রয়েছে। সাহিত্যপাঠের ব্যাপকতা, সাহিত্যবোধের রসঘনতা এবং ভাষাপরিচর্যা তার গদ্য রচনায় স্বতন্ত্র স্বাদ সৃষ্টি করেছে। প্রবন্ধ, গবেষণাধর্মী লেখা, সমালোচনা, ভাষ্য-সব ধরনের গদ্য রচনার বক্তব্য, ভাষা, উপস্থাপনা ও ভঙ্গিতে তার স্বকীয়তা সুস্পষ্ট। আবু হেনা বাংলাসাহিত্য ও বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের মূল্যায়ন করে কিছু উলেস্নখযোগ্য প্রবন্ধ লিখেছেন এবং সেগুলো তার 'শিল্পীর রূপান্তর' এবং 'কথা ও কবিতা' নামের দুটি প্রবন্ধ-সংকলনে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের সাহিত্য-সমালোচনায় তার এ গ্রন্থ দুটি বিশিষ্টতার দাবি রাখে। বাংলাদেশের কথাসাহিত্য, কবিতা এবং গদ্যচর্চা সম্পর্কে যে আলোচনা করেছেন আবু হেনা তাতে তার উপস্থাপনের কৌশল, বক্তব্যের ঋজুতা, বিশ্লেষণের শক্তি এবং বিষয়জ্ঞান স্বাদু গদ্যের আশ্রয়ে প্রকাশিত। মুনীর চৌধুরী ছিলেন আবু হেনা মোস্তফা কামালের প্রিয় শিক্ষক ও অনুকরণীয় আদর্শ ব্যক্তিত্ব। তার নাটক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আবু হেনা যে মন্তব্য করেছেন তাতে নাটকের বিষয়-আশয় নিয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা মেলে- এই সময়সীমার ভেতরে রাজনৈতিক ভাঙা-গড়া এবং অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাসের ফলে বাংলাদেশে যে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে, মুনীর চৌধুরীর নাটক প্রধানত তারই প্রতিকৃতি।'

আবু হেনা মোস্তফা কামাল একজন শক্তিমান কবি। প্রকাশিত মাত্র তিনটি গ্রন্থের মাধ্যমেই তিনি শক্তিমান কবি হিসেবে বাংলা কবিতার ইতিহাসে স্থান নিশ্চিত করে নিয়েছেন।

'আপন যৌবন বৈরী'র পঞ্চম কবিতাটির শিরোনাম 'কবি'। কবিতাটিতে একজন প্রকৃত কবির স্বরূপ উদঘাটন করা হয়েছে। যেমন-

ঈশ্বর আপনিও কবি, কবিদের অনেকেই এরকম বলে।

কেননা, আপনার হাত পাহাড়ে সূর্যাস্ত আঁকে

আকাশের বিস্তৃত পাতায়

পাখিদের চোখের পাতায় নক্ষত্রের স্বপ্ন লিখে রাখে

এবং আপনার স্বরলিপি মেঘের অর্গানে বাজে প্রথম বাদলে।

্ত্ত্ত

তাহলে বলুন কবি, বলুন ঈশ্বর

আপনিও রক্তাক্ত তবে? আপনারও হৃদয়

একটি উপমার জন্য অনুপম ক্রুশবিদ্ধ হয়?

\হ[কবি। আপন যৌবন বৈরী]

আবু হেনা মোস্তফা কামালের কবিতায় মেলে দার্শনিকতার ঘ্রাণ। যেমন-মানুষ মানে কি তবে ঘরবাড়ি? ঝকঝকে দেয়াল, মেঝে, গালিচা, কিংবা ওয়ার্ডরোব?

মানুষ মানে কি তবে গর্বিত দেয়াল আর তোরণে সুদৃশ্য গাড়ি,

সাবধানী কুকুর? [ হাসানের ঘরবাড়ি : যেহেতু জন্মান্ধ]

তার কবিতায় অচরিতার্থ বেদনার প্রকাশ পেয়েছে নানাভাবে। কবিতার শব্দে শব্দে খুঁজেছেন হারানো নারীকে। হারানো নারীর খোঁজে তিনি অসংখ্য শব্দের মালা গেঁথেছেন। তিনি ভুগেছেন নষ্টালজিায়; হারানো বন্ধুর খোঁজে কখনও কাতর হয়েছেন। যেমন-

মধুর রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে

আমরা সবাই চলে গেলাম যে যার পথে

কেউ সচিবালয়ে তোপখানায়,

কেউ ইসলামাবাদে

কেউ প্যারিসে রোমে

অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গ্রামে-গঞ্জে

রোঁয়া-ওঠা ইস্কুলে-কলেজ্তে-

দড়ির আগুন থেকে সিগারেট ধরিয়ে

আমরা যারা শীতের রাতে ঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতার গল্প বিনিময় করেছি

তাদের কারো সঙ্গে কারো আর যোগাযোগ নেই।

\হ[মোহনা থেকে ফেরা : আক্রান্ত গজল]

রোমান্টিকতা তাকে কবিতার পথে টেনে এনেছে। তার কবিতার অন্তরজুড়ে রয়েছে রোমান্টিকতার ছোঁয়া :

তুমি সেই রহস্য-উতল বনভূমি যার

অচেনা সুন্দর তরুপলস্নবের ভাষা আমি কখনো বুঝি না

ফুটন্ত গোলাপ যেন তুমি সেই প্রজাপতি

সমস্ত কৈশোর যাকে কোনো দিন ধরতে পারিনি।

্ত্ত

তেমনি আমি : বারবার হেরে যাই তবু ফিরে আসি

আর তোমাকেই দেখি- পাতা ঝরে ঝরে

সব নিঃস্ব হয়ে গেলে তবু নিজেকেই দেখি

আমি তোমার দর্পণে?

\হ[তোমার ওপরে ঝুঁকে থাকি]

আরেকটি কবিতায় তিনি লেখেন :

\হস্বৈরিণী, তোকেই ভালোবাসি বলে

এ পাড়ার স্বাস্থ্যরক্ষী মহোদয়রা

সম্প্রতি আমার নামে নিন্দার পোস্টার

এঁটেছেন দেয়ালে দেয়ালে। আর তাদের স্স্নোগান:

এটা ভদ্রপাড়া, এখানে নিষিদ্ধ সব কোকিলের গান।

[ইস্তাহার সাম্প্রতিক : আপন যৌবন বৈরী]

কবি হিসেবে আবু হেনা মোস্তফা কামাল সরব থেকেছেন সময় সম্পর্কে। ভাষা আন্দোলনের পর তিনি রচনা করেন-

আজ আমি কোথাও যাব না। আমি কিছুই করব না, আজ

সূর্যের পিয়ন এসে দরোজায় যতো খুশি কড়া নেড়ে যাক, স্নান ঘরে

অবিরল ঝরুক শাওয়ার, ভেসে যাক প্রভাত ফেরির গান

ক্যাম্পাসের সমস্ত আকাশে, সুগম্ভীর শহীদ মিনারে

ছাত্রদের প্রগাঢ় প্রগাঢ় অঞ্জলি থেকে পড়ুক অজস্র ফুল,

মেয়েদের সুললিত হাতে

লেখা হোক নতুন আলপনা, পৃথিবীর সমস্ত বেতার কেন্দ্র থেকে

উৎসারিত হোক রবিঠাকুরের গান, আমি তবু

কোথাও যাব না আজ আমার নিজস্ব জন্মদিনে।

\হ[আজ আমি]

পঞ্চাশের দশকের অন্যতম মেধাবী কবি আবু হেনা মোস্তফা কামালের কবি খ্যাতিকে ছাপিয়ে গিয়েছিল তার গীতিকবির খ্যাতি। বাংলা সংগীত ভান্ডারে তিনি যোগ করেছিলেন অসাধারণ সব গান। আবু হেনা দুই হাজারের বেশি গান লিখেছেন বলে জানা যায়। ১৯৯৫ সালে তার ২০৭টি গানের সংকলন প্রকাশ পায় 'আমি সাগরের নীল' নামে। দুটি গীতিনাট্যসহ গানগুলি প্রেম, নিসর্গ, ভাষা ও দেশ, উৎসব এবং পাঁচমিশেলি গান পর্যায়ে বিন্যস্ত। এই গীতি সংকলনের ভূমিকা লিখতে গিয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান (সম্প্রতি পরলোকগত) যে কথা বলেছেন তা স্মরণযোগ্য: 'আবু হেনা মোস্তফা কামালের সর্বাধিক সাফল্য প্রেমের গানে, কিন্তু নিসর্গ ও স্বদেশ, গণচেতনা ও উৎসব-বিষয়ের তিনি যে উৎকৃষ্ট গান লিখেছিলেন, তা আমাদের অজানা নয়' (আমি সাগরের নীল, ঢাকা, এপ্রিল ১৯৯৫)।

তার সংগীতপ্রেম শুধু গীত রচনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, গায়ক হিসেবেও তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি সংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিতি ও গীত রচয়িতা হিসেবে বিশেষ খ্যাতি পেয়েছিলেন। গানের সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন অকালপ্রয়াত আবুবকর খান, আনোয়ারউদ্দীন খান, আসাফউদ্দৌলাহ ও কাজী আনোয়ার হোসেন- এই চার বন্ধুকে। পরে আবু হেনার সংগীতভাবুকের পরিচয় মেলে গান ও শিল্পী সম্পর্কে তার নানা লেখায়। এর মধ্যে 'বাংলা গান', 'আব্বাসউদ্দীন : কিংবদন্তির নায়ক', 'আবদুল আলীম: জননন্দিত শিল্পী', 'গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার' এই লেখাগুলোর নাম বিশেষভাবে উলেস্নখ করতে হয়। তিনি গানে ভিন্নতা এনছিলেন। বিষয়ের যেমন, তেমনি প্রকাশভঙ্গি- শব্দচয়ন, অলঙ্কার-প্রয়োগ ও কাঠামোগত বিন্যাসে। এই নিরীক্ষা সম্ভব ও সফল হয়েছিল তিনি কবি বলেই। বাংলাদেশের আধুনিক বাংলা গানে যেসব গানকে আমরা চিরসবুজ বলতে পারি সেসব গানের মধ্যে আবু হেনা মোস্তফা কামালের অনেক গান আছে। যেমন: ১) 'অনেক বৃষ্টি ঝরে/ তুমি এলে যেন এক মুঠো রোদ্দুর/ আমার দু'চোখ ভরে' ২) 'সেই চম্পা নদীর তীরে/ দেখা হবে আবার যদি/ ফাল্গুন আসে গো ফিরে' ৩) 'হাতের কাঁকন ফেলেছি খুলে/ কাজল নেই চোখে/ তবু তোমার কাছে যাবো/ যা বলে বলুক লোকে' ৪) 'আমি সাগরের নীল/ নয়নে মেখেছি এই চৈতালি রাতে/ ফুলকঙ্কন পরেছি দখিন হাতে' ৫) 'ভ্রমরের পাখনা যতদূরে যাক না ফুলের দেশে/ তুমি তবু গান শুধু শোনাও এসে' ৬) 'নদীর মাঝি বলে: এসো নবীন/ মাঠের কবি বলে এসো নবীন/ দেখেছি দূরে ওই সোনালি দিন' ৭) 'ওই যে আকাশ নীল হলো আজ/ সে শুধু তোমার প্রেমে' ৮) 'মহুয়ার মোহে গেল দিন যে/ তোমার কাছে আমার কত ঋণ যে/ সে কথা না হয় হলো নাই বলা/ ঝরা পাতার কান্না শুনে আজকে আমার পথ চলা' ৯) 'অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা/ সেই থেকে শুরু দিন বদলের পালা' ১০) 'তুমি যে আমার কবিতা, আমার বাঁশির রাগিনী' ১১) 'পথে যেতে দেখি আমি যারে' ১২) 'যায় যদি যাক প্রাণ, তবু দেবো না দেবো না দেবো না গোলার ধান' ১৩) 'এই পৃথিবীর পান্থশালায় গাইতে গেলে গান'। ১৪) 'তোমার কাজল কেশ ছড়ালো বলে/ এই রাত এমন মধুর/ তোমার হাসির রঙ লাগল বলে/ দোলে ঐ মনের মুকুর'। আরো অনেক গানের কথা বলা যায়। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ফেরদৌসী রহমানের গাওয়া আবু হেনা মোস্তফা কামালের গান দিয়ে। গানের কথা ছিল, 'ওই যে আকাশ নীল হ'লো, সে শুধু তোমার প্রেমে'। চলচ্চিত্রের জন্যও অনেক গান লিখেছেন আবু হেনা। আবু হেনা মোস্তফা কামাল সেই বিরল প্রতিভাধরদের অন্যতম যার গান গীত হচ্ছে যুগের পর যুগ। তার লেখা প্রেমের গান গানগুলোও হয়ে উঠেছে শিল্পোত্তীর্ণ ও কালোত্তীর্ণ।

আবু হেনার আরো কিছু বইয়ের উলেস্নখ দেখা যায় : যার কোনোটি ভ্রমণকাহিনী, কোনোটি অনুবাদ, বা অন্য কোনো বিষয়ে লেখা। এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে 'ইছামতির সোনালি-রুপালি', জর্জ কার্ভার (ক্রীতদাস পুত্র থেকে কৃষিবিজ্ঞানী), মানবসম্পদ উন্নয়ন : প্রেক্ষিত ইসলাম, মালয় দ্বীপের উপাখ্যান, নেপালের সবুজ উপত্যকায়, বিবশ বিহঙ্গ, পেঙ্গুইনের দেশে, সাহসী সাত বন্ধু, যেমন দেখেছি জাপান, এশিয়ার দেশে দেশে, নিশুতির নোনা জল, আকাশ নন্দিনী, আমি সাগরের নীল, ইকো-টুু্যরিজম ইত্যাদি। কবি-গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় আবু হেনা মোস্তফা কামালের 'কাব্যসমগ্র'। আবু হেনা মোস্তফা কামাল মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ১৯৮৯ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক থাকাকালে তার জীবনাবসান হয়। তিনি সাহিত্য সেবা ও গবেষণা কর্মের জন্য অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে আছে : আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫), সুহৃদ সাহিত্য স্বর্ণপদক (১৯৮৬), সম্মানজনক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক (১৯৮৭), আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ স্বর্ণপদক (১৯৮৯) এবং সা'দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১) উলেস্নখযোগ্য। তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করলে আমাদের প্রবন্ধ সাহিত্য, কাব্য সাহিত্য ও সংগীত হয়তো আরো ঋদ্ধ কিছু পেত- যা আর কাছে হয়তো কোনোকালেই মিলবে না। তিনি অপরিণত বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে গেছেন বটে কিন্তু এই সময়েই তার প্রবন্ধ, সমালোচনা সাহিত্য, কবিতায় ও গানে আমাদের জন্য রেখে গেছেন অজস্র হৃদয়সংবেদী বাণী, গবেষণালব্ধ জ্ঞান- যা বাঙালিকে মনে রাখতে হবে দীর্ঘদিন। ২৩ সেপ্টেম্বর এই মহান সাহিত্য ও সংগীত সাধকের মৃতু্যবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করছি। তার আত্মা শান্তি লাভ করুক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে