বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রশীদ করীমের গল্প

আশরাফ উদ্‌দীন আহ্‌মদ
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

রশীদ করীম (১৯২৫ জন্ম) বাংলাসাহিত্যের এক নিবেদিতপ্রাণের নাম, চলিস্নশের দিকে সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ করেন, মূলত ছোটগল্প দিয়েই, ছোটগল্প রচনায় সিদ্ধহস্ত তিনি, দীর্ঘসময় বাংলাসাহিত্যে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন, অর্থাৎ ছোটগল্প শাখায় তিনি যেমন উজ্জ্বল নক্ষত্র, তেমনি সমালোচনা সাহিত্যে বা প্রবন্ধ সাহিত্যে এবং উপন্যাসেও তার প্রবল ঝোঁক লক্ষ্য করবার মতো; যদিও তাকে নিয়ে তেমনভাবে কেউই আলোচনা-পর্যালোচনা বা সমালোচনাও করে না, বিস্মতির গহ্বরে হারিয়ে গেছেন অনেকটা মনে হয়। তার বিশাল প্রবন্ধ সংকলন যেমন প্রমাণ দেয়, তিনি কতটা বেগবান ছিলেন জীবদ্দশায়, তেমনি উপন্যাসের দিকে তাকালে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয় বৈকি! সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ-আবু ইসহাক-সরদার জয়েনউদ্দীন-মাহমুদুল হক-শহীদুলস্নাহ কায়সার-আনোয়ার পাশা-আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-কায়েস আহমেদ বা হাসান আজিজুল হক প্রমুখ সাহিত্যিকের মতো গুটিকয়েক উপন্যাস লিখে ক্লান্ত হয়ে যাননি বা থেমে নীরবে প্রস্থান করেননি সাহিত্যাঙ্গন থেকে, রশীদ করীম সর্বমোট বারোখানা উপন্যাস লিখেছেন আর এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত একটি মাত্র ছোটগল্পগ্রন্থ 'প্রথম প্রেম' (১৯৮৪)।

সাতচলিস্নশের দেশভাগের পর রশীদ করীম এ দেশে আসেন, তার লেখার পাঠক চাহিদা তেমন না হলেও নিজের রচনার প্রতি আস্থাশীলতা তাকে উচ্চস্তরে উপনীত করেছে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিষয়-আঙ্গিক ভাষা ব্যবহার চরিত্র বিশ্লেষণ বা কাহিনী বিনির্মাণের সৃষ্টিশীলতা তাকে চরমভাবে শিল্পশৈলীর উৎকর্যতায় পৌঁছে দিয়েছে মানতেই হয়। অন্যের ছক বা কাঠামো অনুসরণ করে নয়, গল্প ব্যাকরণ বা নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে নিজের মতো নির্মিত করেছেন গল্পের বাকপ্রতিমা। বিষয় আঙ্গিক বা চরিত্র নির্মাণ বা বিশ্লেষণে নিজস্ব ছাপ যেমন পরিলক্ষিত, অথবা ডিটেলস্‌এ যাওয়ার যে সততা তা কেবল ব্যক্তি অভিজ্ঞতা থেকেই পাওয়া সম্ভব, রশীদ করীম নিজের অভিজ্ঞতার বাইরে কখনো যাননি, ছকে বাঁধা জীবন প্রণালি বা গল্পের কাঠামোর বাইরের আরেকটি স্বতন্ত্র কাঠামো নির্মিত করেছেন সচেতনভাবে, যান্ত্রিকতার ছোঁয়া সেখানে ক্ষাণিক পড়লেও পুরোদস্তুর মানবিক গুণে গুণান্বিত বলা যায়। রশীদ করীমের গদ্যশৈলী বা বাক্যগঠন নিজস্ব, গদ্যশৈলীর আর্বতে শব্দবিন্যাস এবং বাঁক নেওয়ার যে শৃঙ্খলা এবং সে শৃঙ্খলা ভেঙে আবার বেরিয়ে আসার যে প্রক্রিয়া, সেই সুনির্দিষ্ট অবয়বকে প্রতিমা রূপে চিত্রায়ণ করা তার সাফল্য, তার চরম সার্থকতা। রশীদ করীমের বিশ্বাস ও আন্তরিকতা, সে সঙ্গে জীবনবোধের যে আলোছায়া, সেখানে ভালোলাগা-ভালোবাসা সবই সংপৃক্ত, সামাজিকবোধ রাজনৈতিকবোধ ফুটে ওঠে গল্পের ছত্রেছত্রে, আধুনিক ভাষার শব্দ সম্ভার, না দেখা গ্রামীণ জীবনের দৃশ্য থেকে দৃশ্যাবলি বরাবরই পরিহার করেছেন, বাস্তব জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়াদি প্রেম ভালোবাসার মধ্য দিয়ে গভীরভাবে ফুটে উঠেছে, মোট কথা বলা যায়, নিজের অভিজ্ঞতার বাইরে কখনো তিনি চোখ রাখেননি, আর তাই গল্পগুলো শুধুমাত্র গল্প না হয়ে একেকটা হয়ে গেছে বাস্তবের ক্যানভাস, সাহিত্যের অনুষঙ্গ, নান্দনিকতায় ভরপুর একেকটি মূর্ত ছবি।

হারিয়ে যাওয়া রশীদ করীমকে আমাদের প্রয়োজনে ফিরিয়ে আনা আবশ্যক, আগুনের ভেতরে কতটা শক্তি তার মোক্ষম দৃষ্টান্ত অবশ্যই রশীদ করীম স্বয়ং। শামসুর রাহমান-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় শওকত আলী-গোলাম মোস্তাফা (অভিনেতা) থেকে আল মাহমুদ প্রমুখ ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু-সহচর, তাঁরাও রশীদের গল্পের বিমুগ্ধ পাঠক, জীবনবোধের আনুষঙ্গিক বিচিত্র ঘটনাবলি ধরা দিয়েছে তার কলমে, তার চিন্তা-মননে।

গ্রন্থের প্রথম গল্পের নাম 'প্রেম একটি লাল গোলাপ' গল্পটি নিয়ে 'দেশ' পত্রিকায় কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এক পৃষ্ঠাব্যাপী লিখেছিলেন, যা রশীদ করীমকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যায় অথবা তাকে প্রেরণা জোগায়, 'প্রেম একটি লাল গোলাপ' পরকীয়া প্রেমের গল্প, যা দেহ ছাড়া, তারপরও দেখা অনুভূতি কাজ করেছে, প্রেম আসলে কি লাল গোলাপ! যদি সার্থক হয় তাহলে হয়তো লাল, কিন্তু যদি ব্যর্থ হয়, তবে কি নীল গোলাপ অথবা কালো গোলাপ বলা হবে? মানব দুনিয়ায় সবাইকে ভালোবাসতে পারে কিন্তু ভালোবাসতে চাওয়া তো অপরাধ, তারপর ঘরে স্ত্রী-পুত্র সংসার ফেলেও তো মানুষ কিসের এক মোহ টানে প্রেমের সাগরে ডুবে মরে, ডুবতে বাধ্য হয়, অথচ প্রেমের মরা জলে ডোবে না বলে যে একটা কথা আছে, তারপরও প্রেম একটা লাল গোলাপ হয়ে যায়। মাঝে-সাঝে দেখা, একটু চোখের ইশারা একটু মিচকি হাসি, তাতেই কি প্রেম জানান দেয় নশ্বর পৃথিবীতে, হয়তো দেয় নয়তো সবই ফাঁকি আর ফাঁকির কারসাজি। রশীদ করীম গল্পটিকে সার্থক রূপ দিতে গিয়ে প্রেমকে অনিবার্য বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন, কারণ তারও সংসার আছে, এবং সে সংসারে পুতুলের মতো একটা স্ত্রী আছে, আর আছে রাজপুত্রের মতো সন্তান... সেটাই হয়তো বাঁধা, মানুষকে এভাবেই পেছনে ফিরে আসতে হয়, নিজের প্রয়োজনে নয়তো প্রকৃতির বাধ্যবাধকতায়। গল্পের নাম দেখেই আন্দাজ করা একটা রহস্যময় বিষয় আছে, সত্যিই অন্যরকমের কাহিনী যায়, 'জোড়াতালি দিয়ে গল্প', এখানে উত্তমপুরুষে লেখক তার আত্মজৈবনিক কাহিনী বয়ান করেছেন, সে সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের অভিজ্ঞতা- ভ্রমণ কাহিনীর একটা আবহ সৃষ্টি করেছেন গল্পের পরতে পরতে, রশীদ করীমের গদ্যে যে জাদু যে মুগ্ধতা সৃষ্টি করে তার রূপ এ গল্পে শতভাগই পাওয়া যায়। না, তিনি কোনো ভনিতা বা ভন্ডামির প্রশ্রয় দেন না, সোজাসাপটা ভাষায় একের পর এক গল্প বলে যেতে বেশি পছন্দ করেন। কলকাতার জীবন আর বাংলাদেশের জীবন এবং বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক এবং অভিনেতাদের সঙ্গে তার যে কথোপকথন-ভ্রমণ এবং আলাপচারিতা তার পূর্ণাঙ্গ একটা দলিল 'জোড়াতালি দিয়ে গল্পে তা ফুটে উঠেছে, শব্দ চয়ন ও ভাষা ব্যবহারে তিনি বরাবরই বড় বেশি সংযমী বলা যায়। পেস্ননের যাত্রা, বাসের যাত্রা, রাজশাহী-নাটোরের মতো শহরগুলো তার কলমে অন্য এক মাত্রায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে, তার ভেতরে আছে ভালোবাসা-ভালোলাগা, হয়তো সবই তা প্রেমের হাতছানি। সব কিছু মিলিয়ে গল্পটিকে শুধু গল্প না বলে আরেকটু বেশি বলাও যায়। রশীদ করীম ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁক ধরে সামনে এগিয়ে গেছেন, আবার কখনোবা পেছনেই থেকে গেছেন নিজের অগোচরে আর ইতিহাসে ওই প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরের মতো মুখ ডুবিয়েই থাকেননি, নিজের আপন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন বাস্তবে।

'চিঠি' গল্পটি একটি সাধারণ মানের গল্প, এখানে দেবর মুশতাক তার ভাবিকে স্ববিস্তারে যাত্রার বর্ণনা থেকে বিভিন্ন বিষয় বয়ান করছে, একটা সময় ছিল, চিঠি একটা সাহিত্যশৈলীর বিষয় ছিল, আর আজ আধুনিক সভ্যতায় চিঠি আর কেউ লেখে না, চিঠির প্রয়োজন কি ফুরিয়ে গেছে, চিঠির যে আবেদন, চিঠির যে মমতাবোধ, তা তো কখনো ফুরিয়ে যাওয়ার নয়, রাজার কাছ থেকে অমলের চিঠি যেমন আর আসে না, ডাকপিওনও জানে না, সে চিঠি আসবে কি আসবে না, শুধুই তার অবিরাম পথচলা, পথই যেন তার আমরণ সঙ্গী, অথচ রবীন্দ্রনাথ সারাজীবনে প্রায় সাড়ে সাত হাজার চিঠি লিখেছেন বিভিন্ন জনকে, যদিও আমরা জানি 'ছিন্নপত্র'-এ একশত তেপ্পান্নটি চিঠি আছে, যা তিনি বেশির ভাগ লিখেছিলেন বারো বছরের ভাইঝি ইন্দিরাকে আর বন্ধুকে। আজ চিঠির জায়গা দখল করেছে মেসেজ, তাতে মনের সবটুকু ভাব প্রকাশ না পেলেও একটা আলো-আধাঁরির ব্যাপার থাকে কিন্তু পুরোদস্তুর মনের ভাব প্রকাশ পায় না। রশীদ করীম চিঠি গল্পের মাধ্যমে পাঠককে চিঠির ভাষায় প্রায় আচ্ছন্ন করে ফেলেছেন এবং পাঠক ডুবে যেতে বাধ্য এর রসশিল্পে-রসমাধুর্যে, চিন্তার গভীরতায় যে প্রজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছে তা শুধু রশীদ করীমই দেখাতে পেরেছেন গল্পের আঙ্গিকে।

'প্রথম প্রেম' গল্পটিকে রশীদ গ্রন্থের নামকরণ করেছেন, গল্পটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃতু্যকে ঘিরে, অসাধারণ একটি পাঠযোগ্য গল্প, হৃদয় ছুঁয়ে যায়, ঘটনা পরম্পরা বেশ সহজ-সরল তবে গাম্ভীর্যময়, উনিশশ' একচলিস্নশ সালের সাতই আগস্ট, গল্পকারের বয়স নেহাৎই অল্প, ক্লাস টেনের ছাত্র, স্কুল ফাঁকি দিয়ে ম্যাটানি শো'তে রূপম সিনেমায় যায়, কিন্তু সেখানে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক, গেটের ওপরে লেখা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহাপ্রায়ণ উপলক্ষে আজ সব শো বন্ধ। তার মানে রবীন্দ্রনাথ মারা গেছে, সে সময় গল্পকথক রবীন্দ্রনাথের লেখা সম্পর্কে খুব একটা বেশি ধারণা ছিল না, যদিও শরৎচন্দ্রের ওপর তার বেশ আসক্ত ছিলেন, তারপর রবীন্দ্রনাথের শবযাত্রা আসছে দেখে গল্পকথক সেদিকে একবার দেখাবার জন্য যেতে থাকে, তার গান মোহিত করেছে সব বয়সের মানুষকে, আজ তার মৃতু্যতে সে শবযাত্রার সঙ্গী হতে সবাই মিলেছে লোকে-লোকারণ্য, কাজী নজরুল ইসলাম ও ফজলুল হক সাহেবও আছেন, প্রচন্ড ভিড়, সেখানে একটা খুব ফর্সা মেয়ে, গায়ে কালো রঙের সিল্কের হাতকাটা বস্নাউজ, চেহারায় আভিজাত্যের অনেক ছটা গল্পকথক দেখতে-দেখতে বিমোহিত হয়ে যায়, ভুলে যায় রবীন্দ্রনাথকে, পরমসুন্দরী শব্দটা যেন ওর জন্যই একমাত্র, সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই কিন্তু একসময় ওই মেয়েটি উজ্জ্বল দৃষ্টি কাড়া নক্ষত্রের মতো চোখ যার, গল্পকথকের দিকে তাকিয়ে সুইজ ডোরটি একমুহূর্তের জন্য খুলে ধরলো মেয়েটি, 'চলে এসো'। কাকে ডাকছে, বুঝতে দেরি না হলেও গল্পকথক মেয়েটিকে একবার দেখে নিয়ে হারিয়ে ফেলে ভিড়ের মধ্যে, প্রথম প্রেম গল্পের একটাই জিজ্ঞাসা, মেয়েটি কে ছিল, তুমি মেয়ে আমাকে জায়গা দিয়েছিলে, হয়তো সেই তার প্রথম প্রেম। আর মানুষ তো বাল্যপ্রেমকে জীবনভর ভুলতে পারে না, ভোলা যায় না, সে চিরজাগুরুক হয়ে অস্থি-মজ্জায় স্মৃতির ক্যানভাসে মিশে থাকে। এভাবেই মানুষ প্রেমের তাছে পরাজিত হয়, প্রেম হয় বলীয়ান মহৎ থেকে মহত্বর।

'চা খানার গল্প' এমনই একটা গল্প, যেখানে সমাজ সংসার ঝামেলা থেকে কিছু সময় মুক্তি পেতে মানুষ কতই না অভিনয় করে যায়। এভাবে কি মানুষ পালিয়ে বাঁচতে চায়, আমরা সমাজবদ্ধ জীবেরা বড়ই পেরেশানিতে থাকি, ভারবাহী গাধার মতো জীবন, এখানে ভালোবাসা ভালোলাগার চেয়ে কর্তব্যবোধ বড় বেশি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, তখন সেই দায়িত্বে দিনরাত্রি কলুর বলদের মতো খেটে মরি কিন্তু সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ নেই, গল্পটি সময়োচিত গল্প, সমাজবাস্তবতার নিরীক্ষাধর্মী গল্প।

দেশভাগের একটা গভীর এবং মর্মান্তিক কষ্ট গল্পে নিঃশ্বাস ফেলেছে আন্দাজ করা যায়, ভাইদের বিচ্ছিন্ন করেছে, আব্বাকে বিচ্ছিন্ন করেছে, আম্মাকে বিচ্ছিন্ন করেছে, করেছে পরিবারের নিকটতম আত্মীয়স্বজনদের, ইচ্ছে করলেও কেউ কারো সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারছে না এবং এটাই মূল বাস্তবতা, একটা প্রাচীর একটা সীমারেখা একটা বীভৎস সীমান্ত রক্তচক্ষু বের করে দাঁড়িয়ে আছে, এখানেই গল্পের মূল বিষয়, প্রাণের অধিক বড়ভাইয়ের মৃতু্য হলেও হাবীব ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যেতে পারেনি, জটিল জীবনের বাস্তবতা বেঁচে থাকার বিড়ম্বনা বিচ্ছিন্ন করেছে ভ্রাত্বিত্ববোধ-মানবিকতাকে। রশীদ করীমের জন্মভিটা যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে, যার কারণে সে দাগটা তার বুকে আছে, বুকের ভেতরের কষ্টকে এভাবেই প্রকাশ করতে পেরেছেন, তার সাহিত্য বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে, দিয়েছে প্রাণ, বাংলাদেশকে ঋদ্ধ করেছে মোটা দাগে বললে বলতেই হয়। ভাষা শৈলীর যে স্বতন্ত্র ঢং সেটাকে বরাবরই তিনি বজায় রেখেছেন, নিজেকে সেখানে থেকে একচুলও সরতে দেননি। একজন প্রকৃত শিল্পী পারে নিজের অবস্থানে থেকে নিজেকে বিভিন্ন মাত্রায় ভাঙতে এবং সে ভাঙা হয়ে যায় নতুনত্বও। ভেতর নিজেকে আরও নিবিড় করে দেখা, আরও পর্যবেক্ষণ মন নিয়ে নিজেকে একটা শেকড়ে উপনীত করা। সেদিক দিয়ে বিচার করলে রশীদ করীম সেটুকু যথাযথভাবে পেরেছেন বলতেই হয়। উত্তমপুরুষের ভেতর দিয়ে জীবন এবং জীবনের কঠিন বিষয়াদি উপলব্ধি করেছেন এবং ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন জীবনের সেই কঠিন যন্ত্রণা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে