অণুগল্প

সম্পকর্

প্রকাশ | ২১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

শুকদেব মজুমদার
একটি নীল রঙের অটোতে যাচ্ছিলাম, সচরাচর যেভাবে আমি যাই না। অনাবিল বাতাস আসছিল বেশ। একটু পরে একটি মেয়ে এসে বসলো ঠিক আমার সামনের সিটটাতে। গুচ্ছ গুচ্ছ চুল তার কপালজুড়ে ছিল। এমনকি কপোল অব্দিও তার অনেকগুলো এসে বাতাসে দোল খাচ্ছিল। নাক-মুখ দেখা যাচ্ছিল না তেমন। কালো একটি ওড়নায় ঢাকা ছিল বুকের পুরোটা, বেশ পরিপাটি করেই। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। সম্ভবত সে আমার দিকে একবার তাকালো। তারপর চুলগুলো সে গোছাতে শুরু করলো। মনে হলো কানের ওপর দিয়ে সাজিয়ে রাখতে চেষ্টা করছিল। আর ওড়নাটাকে এখানে-ওখানে একটু ছড়িয়ে দিয়ে আরও ভালোভাবে ঢাকার একটা প্রয়াস যেন তাকে পেয়ে বসলো। এভাবে কখনো চুল, কখনো ওড়না। যতক্ষণ ছিল সে ততক্ষণ এভাবেই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল। সময়টা সন্ধ্যা পরবতীর্। রাস্তার আলো মাঝেমধ্যে এসে পড়ছিল। আমি সৌজন্যবশত বা অভ্যেসবশত তার দিকে তাকাচ্ছিলাম না সেভাবে। তবু আলো-অঁাধারিতে যতটা নজর পড়েছে তার দিকে, তাতে মনে হলো, নিজেকে গুছিয়ে রাখার একটা মল্লযুদ্ধেই যেন সে নেমে পড়েছে। একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিল সে? কেন? আমি তো সে অথের্ তার দিকে তাকাচ্ছিলাম না। যাতে সে লজ্জা পেতে পারে বা বিব্রত হতে পারে। আর তাকালেও তো তার দেখার কথা নয়। সবই সে মনে ভেবে নিয়েছে? একটি মেয়ে যেভাবে নেয়, বিশেষত একটি ছেলে সামনে থাকলে অজানা অচেনা। ছেলেদের নজরের কথা মনে করে বা পুরুষের চিরকালীন স্বভাবের কথা মনে রেখে। বা মনে করা বা রাখার প্রয়োজন নেই, এটাই নারীসত্তা বা স্বভাবের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বিশেষ পরিস্থিতিতে। পুরুষের ক্ষেত্রেও তাই। অনেকটা প্রকাশ হয়তো তার কম। বাইরের চেয়ে ভেতরে যা স্বভাবত বেশি হয়। নারী-পুরুষের চিরায়ত সম্পকের্র এ নান্দনিক প্রকাশ। কারও পক্ষেই ক্ষতিকর কিছু নয় এসব। এটা নরনারীর স্বাভাবিক সম্পকর্ বা আচার-ব্যবহারে মানিয়ে যায়। সমাজ স্বরূপে মনে হয় এক ধরনের অপরূপতাও দেয় এটি। এমনটা হতে আলাদা কোনো সম্পকের্র প্রয়োজন নেই দুজনের মধ্যে। দুজনেই মনে মনে খুব দ্রæত কাছে আসতে পারে। আপন হয়ে উঠতে পারে। নতুবা কেন মেয়েটির এত ব্যস্ত হয়ে ওঠা নিজেকে নিয়ে? নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার জন্য? এ নিশ্চয়ই শুধু লজ্জা নয়, বাঙালি নারীর চিরায়ত লজ্জাশীলতার সৌন্দযের্র প্রশ্নও এ নয়, সম্ভ্রমশীলতার প্রশ্ন নয়, রক্ষণশীলতার প্রশ্নও নয়, নিজেকে উপস্থাপন করার বা আকষর্ণীয় করারও প্রশ্ন। এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন একটি কামনা বা ভালোবাসা কি জড়িত নেই? চিরায়ত কাম্যের কাছে কমনীয় হয়ে ওঠার চেষ্টা কি এ নয়? পাত্রের কাছে পানি বা পানীয়ের স্বতঃস্ফ‚তর্তা এ নয়? সুন্দরের কাছে সুন্দর হয়ে ওঠার চেষ্টার এক নামান্তর এ মনে হয়। একটু পরে সে নেমে পড়ল। সম্ভবত দশ মিনিট সময়মাত্র সে আমার সামনে ছিল। হালকা চুল আমাকে ছুঁয়ে গেল। ভ্যানিটি ব্যাগটা একটুখানি স্পশর্ করে যেন বলে গেল- বাই-বাই! আমি যেন মনে মনে বলে উঠলাম- সাবধানে যেও মেয়ে। উল্টো দিকে নামলে কেন? হুশহঁাস যেভাবে গাড়ি চলছে এদিক-সেদিক থেকে!