মুহসীন হলের সুবর্ণজয়ন্তী ও প্রথম পুনর্মিলনী

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

মো. জাহানুর ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বসবাসের জন্য নির্মিত ১৮টি আবাসিক হলের মধ্যে হাজী মুহম্মদ মুহসীন অন্যতম। ঐতিহ্যবাহী হলটি ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই হিসেবে ২০১৬ সালে হলটি পঞ্চাশ বছরে পদার্পণ করে। ২০১৭ সাল থেকে মুহসীন হলের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের তোড়জোড় শুরু করে। কিন্তু নানান কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে ১০ মার্চ সেই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হয়। প্রায় ৩ মাস আগেই অনুষ্ঠান আয়োজনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়। দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হয় চলতি বছরের ১০ মার্চ রোজ শক্রবার। ৬ মার্চ থেকেই শুরু হয় প্যান্ডেল তৈরি, মঞ্চ তৈরিসহ নানা আনুষঙ্গিক কাজ। ১০ মার্চ সকাল ৭টা, তখনো সূয্যিমামা পুরো মাত্রায় কিরণ দেওয়া শুরু করেনি। সেই সময় থেকেই সাবেক শিক্ষার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়। তারা জড়ো হতে থাকে হলের খেলার মাঠে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উপস্থিতি। সকাল ৯টার পর প্রায় পুরো মাঠ সাবেক শিক্ষার্থীদের দিয়ে ভরে যায়। শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর আখতারুজ্জামান। সে সময় হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন উক্ত হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর নিজামুল হক ভূঁইয়া, ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, কর কমিশনার ফজলুল হক আরিফ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ডক্টর গোলাম শফিকসহ নানা গুণীজন। প্রধান অতিথি হিসেবে আসন অলঙ্কৃৃত করেন উক্ত হলের সাবেক শিক্ষার্থী, বর্তমান সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি তার বক্তব্যে সাবেক শিক্ষার্থীদের দেশ ও জাতির উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। অন্য অতিথিরাও আলোচনা সভায় অংশ নেন। দুপুর ১২টার খানিক পরে আলোচনা সভা শেষ হলে শুরু হয় খাওয়া-দাওয়া পর্ব। আইটেম ছিল সাদা পোলাও-এর সাথে গরুর মাংসের রেজালা, মুরগির রোস্ট, ডিম, চিংড়ি মাছ, চাইনিজ সবজি ও ডাল। সবশেষে পরিবেশন করা হয় শাহী দুই ও কোক। ভোজনপর্বে বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে তিন হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। অন্যরকম এক আমেজ তৈরি হয়। ভোজনপর্ব শেষ হতে না হতেই ২টা ৩০ মিনিট পর থেকে শুরু হয় স্মৃতিচারণ পর্ব। প্রথম দিকে ১৯৬৭-৬৮ ব্যাচের কয়েকজন স্মৃতিচারণ করেন। তাদের কথা শুনে মনে হয় তারা যেন সে সময় সেই আগের দিনেই ফিরে গিয়েছিলেন। তাদের বয়ানে উঠে আসে ৬৯-এর গণঅভু্যত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধসহ নানা ঐতিহাসিক ঘটনাবলি। পরের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কথায় উঠে আসে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কথাসহ বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত না আলোচিত সমালোচিত ঘটনাগুলো। প্রতিটি যৌক্তিক আন্দোলনে মুহসীন হলের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল বলে বক্তারা জানান। সাবেক শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ শুনে বর্তমান শিক্ষার্থীরা অনুপ্রেরণা পায়। তারাও মনে মনে পণ করে সামনের দিনে দেশমাতৃকার উন্নয়নে নিজেকে সঁপে দেবে। স্মৃতিচারণের ফাঁকে ফাঁকে কেউ কেউ নিজেদের ক্যামেরা বন্দি করেন। বিকাল ৫টার দিকে সাবেক শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, নাচ ও নৃত্যের তালে মেতে ওঠে সবাই। সময় আপন গতিতে ছুটে চলে। একটা সময় সূয্যিমামা পশ্চিম আকাশে লাল রং ধারণ করে জানান দেয় দিন শেষ, রাতের আগমন আসন্ন। তখনো কারও মনে যেন ক্লান্তির বিন্দু পরিমাণ ছাপ নেই। অনুষ্ঠান চলতেই থাকে। সন্ধ্যা ৭টার পর খানিকটা সময় বিরতিতে চলে। এই সময়ে লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ী ১৫ জনের মধ্যে ১২ জনকে স্মার্ট মোবাইল সেট, বাকি ৩ জনকে ক্রমিক অনুসারে মোটর সাইকেল, রঙিন টেলিভিশন ও এয়ারকুলার উপহার দেওয়া হয়। বিজয়ীরা ক্ষণিক সময়ের জন্য আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। সবশেষে মঞ্চে ওঠেন চিরকুট। চিরকুট প্রায় রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গান পরিবেশন করেন। এই সময়টায় সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বয়সের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একসঙ্গে আনন্দ আড্ডায় মেতে ওঠেন। তখন এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যার শুরু আছে, তার শেষও আছে। সেই চিরন্তন নিয়ম মেনেই শেষ হয় সেদিনের সুবর্ণজয়ন্তীর সব আয়োজন।