বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকে বসন্ত উৎসব

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

মো. মমিনুর রহমান
শীতের রুক্ষতা ও প্রকৃতির রোগাক্রান্তকে পেছনে ফেলে নিসর্গ শোভাকে আবার নবরূপে সাজিয়ে তোলার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। ফাল্গুনে প্রকৃতি যেন কোকিলের সুরে কথা বলে এবং নানা রঙ্গের সমাহারে রঙিন হয়, এমন সময় নাগরিক মনে ভালোবাসার বসন্ত কড়া নাড়ে। গাছে গাছে নবপলস্নব, ফুলের মুকুল আসে, বাতাসে ভাসে মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ, প্রজাপতিরা রঙিন ডানা মেলে ঘুরে বেড়ায়, গাছের ডালে ডালে পাখিরা যেন হাট বসায় ইত্যাদি সবকিছুই যেন বসন্তের আগমনী গান। প্রকৃতি যেন বসন্তকালে নিজেকে নবরূপে ফিরে পায়। বসন্ত শুধু প্রকৃতিতেই নয় বরং মানুষের মনেও জাগায় প্রাণের ছোঁয়া। প্রকৃতির মতো বাসন্তী হাওয়ায় অবচেতন মানুষ নিজেদের সাজিয়ে তোলে বসন্তের রঙে। বসন্তের রং লেগেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্পূর্ণ ভিন্নরূপে উদযাপন করা হয় এবারের বসন্ত উৎসব। ১৪টি ফাল্গুন পেরিয়ে ১৫তম বসন্ত জায়গা করে নিয়েছে ৭৫ একরের ভালোবাসার মন্দিরে। বাংলা বর্ষপঞ্জির ৩ ফাল্গুনের গোধূলি লগ্নে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বসন্ত উৎসব উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, কিংবদন্তি অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ আবৃত্তিকারক মাননীয় এমপি আসাদুজ্জামান নূর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর হাসিবুর রশীদ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর সরিফা সালোয়া ডিনা, ট্রেজারার অধ্যাপক ডক্টর মজিব উদ্দিন আহমদ, উৎসবের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডক্টর নিতাই ঘোষসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এরপর বসন্ত উৎসবের প্রধান অতিথি অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরকে সম্মাননা প্রদান ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর হাসিবুর রশীদ। উত্তরবঙ্গের অক্সফোর্ডখ্যাত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের হাত ধরে এটিই প্রথম ব্যতিক্রমী বসন্ত উৎসব। প্রকৃতির নানা রূপের সৌন্দর্যের সঙ্গে তালে তালে মেতে উঠেছে বেরোবি ক্যাম্পাস। ফাল্গুনকে বুকে ধারণ করে নেওয়ার জন্য ২ দিন আগে থেকেই আলপনা আঁকা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় স্মারকে। আলপনা যেন বসন্ত উৎসবকে রাঙিয়ে তুলেছে। ৩ ফাল্গুনের মধ্যাহ্ন থেকে আয়োজন করা হয় মেহেদি উৎসব। হাতটা একটু আগায় দিলেই ফ্রিতে দিতে পারে মেহেদি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দূরদূরান্ত থেকে মেহেদির দোকানে এসে ভিড় জমায় এবং সাদা হাতে মেহেদির ব্যবহারে প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়ে একাকার হয়ে যায়। সন্ধ্যায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমনা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, 'অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য বাঙালির সার্বজনীন প্রাণের উৎসবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত হওয়া উচিত।' এ সময় সবাইকে বসন্তের শুভেচ্ছা জানিয়ে ১০৬ মিনিট ভাষণে তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে অভিভাবকরা জোরপূর্বক তাদের কোমলমতি সন্তানদের পড়াশোনার চাপে অতিষ্ঠ করছে। এত হালকা বয়স, বই পড়ার নয় বরং ছেঁড়ার বয়স।' সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর হাসিবুর রশীদ বলেন, 'এমন উৎসব প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার মেলবন্ধন তৈরি করে।' পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশাদুজ্জামান ও জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুন্তলা চৌধুরী। ১ম পর্বের আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন আমন্ত্রিত অতিথি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীরা। ২২টি বিভাগের যাচাইকৃত সংস্কৃতিমনা শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিবেশন করা হয় জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে ছিল দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নাচ, কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদি। বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার জন্য গাওয়া হয় 'আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে'। আসলেই ষড়ঋতুর ভিড়ে বসন্তকাল যেন প্রকৃতির এক উলেস্নখযোগ্য অধ্যায়। অবশ্য প্রকৃতিকে সুন্দর ও অনিন্দ্য দেখতে চোখ রাখতেই হবে বসন্তকালে। বসন্তের মতো সৌন্দর্যমন্ডিত হোক বাংলাদেশ।