অর্জুন বিশ্বাসের জীবন ও গান

প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

জ্যোতিষ সমাদ্দার বাবু
অর্জুন বিশ্বাসের জীবন ও গান- এই শিরোনামে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। লেখক ও সম্পাদক সুমন শিকদার। প্রকাশক দেলোয়ারা খাতুন, বেগবতী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত। প্রচ্ছদ করেছেন তানজুম সাকিব। এই বইতে গান ও সঙ্গীত শিল্পী অর্জুনের জীবন ও তার গান নিয়ে লেখা হয়েছে। বইটি পাওয়া যাচ্ছে একুশে বইমেলায়, স্টল নম্বর ৫৯৫, ৯৩, ৯৭ এবং রকমারি ডট কম এ। অর্জুন পারিবারিকভাবে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন ছোটবেলা থেকেই এবং এমন গান নিয়ে তার স্বপ্ন ছিল যে, গান মানুষকে জাগরিত করবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। প্রথমে গীতি কবিতা লেখা শুরু করেন, পরে সুর করেন এবং নিজেই গাইতে শুরু করেন। ইত্যাদিতে তার গান গাওয়ার ইচ্ছা ছিল। ২০১১ সালে এপ্রিলে মিডিয়াতে আসেন ইত্যাদি-খ্যাত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের রচনা ও উপস্থাপক হানিফ সংকেতের হাত ধরে। সেখানেও তিনি প্রচুর গান গেয়েছেন। তার প্রতি তিনি অনেক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেনে গানে গানে। গীতিকার-সুরকার এবং গায়ক অর্জুন বিশ্বাস একজন জীবনমুখী সঙ্গীতশিল্পী। তিনি জীবনের গান জীবন ছোঁয়ার গান গেয়েছেন, লিখেছেন এবং সুরও দিয়েছেন। জীবন বদলে যাওয়ার কথামালায় মানুষকে বিমোহিত করতে চেষ্টা করছেন। জীবনমুখী বাস্তব কথামালায় তিনি সাজিয়েছেন লিরিক্স, এরপর সুর দিয়ে করেছেন ঋদ্ধ অতপর নিজেই গেয়েছেন। একের মধ্যেই তিন, তিনিই অর্জুন বিশ্বাস। গণমানুষকে গানের সঙ্গে একাত্ম করতে পেরেছেন। তিনি মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। তার গানের রিলিক্স, সুর ও গায়কী অসাধারণ, তিনি সব ক্ষেত্রেই তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। একজন মানবিক শিল্পী হিসেবে তিনি যথেষ্ট সম্মান কুড়িয়েছেন। তার লেখা ও সুর করা চার শতাধিক গান আছে, তবে এই বইতে স্থান পেয়েছে ৪০১টি গানের রিলিক্স। গানগুলো যেথায়, মানবতা হবে আসল ধর্ম মানুষ হবে ভাই ভাই। সবার ওপর মানুষ সত্য তাহার ওপর নাই। একটি হাড়ির ভাত টিপে দেখলে যেমন বোঝা যায়, হাড়ির ভাত খাওয়ার উপযোগী হয়েছে কিনা, তেমনি তার একটি গান শুনলেই বুঝা যাবে, আপনি তার গান পছন্দ করবেন কিনা। মানুষের মনের সঙ্গে সঙ্গীত যে গানের বন্ধন। তার গানগুলো জীবন ছোঁয়ায় বাস্তববাদী। তিনি অনেক ধরনের গান গেয়েছেন। এর একটি সংখ্যামান এখানে উলেস্নখ করা হলো। গানগুলো সংখ্যা বিবেচনায় জীবনমুখী-৫৫টি, গণসঙ্গীত-৫১, আত্মমূল্যায়ন-৪টি, আধুনিক-২৮টি, ভজন-১৯টি, দেশাত্মবোধক- ৭টি, মা-১৩টি, বাবা-২টি, ভক্তিমূলক-৬টি, অধ্যাত্মিক-১০টি, মানবতা ধর্ম- ২৩টি, সমাজ ভাবনা-২৫টি, আধুনিক ফোক-৩৭টি, রম্য-৪৩টি, বাঙালি সংস্কৃতি-৬টি, বাউল- ৫টি, নারী- ৩টি, রাজনীতি- ৫টি, বঙ্গবন্ধু- ৭টি, শেখ হাসিনা-৬টি, প্রশংসামূলক-১৩টি, গণসচেতনতা- ১০টি, বিরহ-৩টি, কাওয়ালী- ৩টি, রাগাশ্রয়ী- ৫টি, বাংলা খেয়াল- ৫টি, শ্যামা সঙ্গীত- ১টি, শিশুতোষ- ২টি, অন্যান্য- ৫টি। এবার তার ব্যক্তি জীবনের প্রসঙ্গ। অর্জুন বিশ্বাস জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৬ সালের ৩ মার্চ। মাদারীপুর জেলার পৈতৃক বাড়িতে। পিতা স্বর্গীয় সুরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, মাতা স্বর্গীয়া মঙ্গলি বিশ্বাস। ভাইবোনের সংখ্যা- পাঁচ ভাই, এক বোন। ভাইবোনের মধ্যে অর্জুন বিশ্বাসই সবার ছোট। ১৯৮৮ সালে সরকারি সঙ্গীত বিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলার অব মিউজিকে ফার্স্ট ক্লাম ফার্স্ট হন এবং ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বিবাহিত জীবনে দুই সন্তানের জনক। বইটিতে তার জীবনের অনেক ঘটনা সংবলিত লেখা আছে। তিনি স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, 'ও আমার শিল্প-সংস্কৃতিচর্চায় অপার সহযোগিতা-প্রেরণা ও শক্তি জুগিয়েছে।' তাই জীবনের শ্রেষ্ঠ সাফল্য হলো- কবিতা দিয়ে বিয়ে। তার উলেস্নখযোগ্য হলো- ১. পন্ডিত সম্মাননা (আলো ট্রাস্ট, পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা); সঙ্গীত-রত্ন অ্যাওয়ার্ড (পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা); বিনোদনধারা পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড (শ্রেষ্ঠ শিল্পী); বিনোদন ধারা পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড (আলোচিত শিল্পী); গণশিল্পী পদক (বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, ঝিনাইদহ); চেতনা সুহৃদ সম্মাননা (বঙ্গীয় হরিগুরু চাঁদ আম্বেদকর চেতনা মঞ্চ বগুলা নদীয়া); আজীবন সম্মাননা (সনি বাংলা টিভি) তিনি ফ্রিল্যান্সার সঙ্গীত-শিল্পী। নিজের রয়েছে অডিও ভিজু্যয়াল স্টুডিও, ইফটিউবে অগ্নি টিভি অনলাইন চ্যানেল। এ সবই মূলত কর্মযজ্ঞের ক্ষেত্র। টেলিভিশন মিডিয়ায় গান করা, স্টেজ পারফর্ম করা, গান লেখা, সুর করা, কম্পোজিশন করা, ভিডিও নির্মাণ করা নিজের চ্যানেল অগ্নি টিভিতে প্রচার করাই মূলত তার বর্তমান কর্মযজ্ঞ। 'মানুষ এসেছে পৃথিবীতে আগে আসেনি তো আগে ধর্ম আসুন খুঁজি' বিদ্রোহী কবির এই বাণীর মূল মর্ম। ধর্ম নিয়ে জন্মগ্রহণ করেনি কেউ ভবে, ধর্ম নিয়ে কেন বাড়াবাড়ি কেন হানাহানি তবে? মানুষ যদি না-ই থাকে, ধর্মটা বৃথাই। সবার ওপর মানুষ সত্য তাহার ওপর নাই। অর্জুন বিশ্বাসের গীতি কবিতা ও গান সম্পর্কে বিভিন্ন গুণীজনের মন্তব্য- ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; 'মহাভারতের অর্জুনের মতো হও। শুভকামনা তোমার জন্য।' ড. হুমায়ুন আজাদ, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তিনি বলেছিলেন - কবিতায় যেমন ছন্দ আছে, ভাব-ভাষা-অলংকার আছে, তেমন প্রতিবাদের সুর আছে।