পিটার হান্ডকের গোলকধাঁধা

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রূপান্তর- দীপঙ্কর মাহমুদ ঘুমোতে গেলেই আমি শুধু জেগে উঠি আমি তাকাই না কোনো দৃশ্যে, দৃশ্যই তাকিয়ে দেখে আমার চেহারা; আমি কখনো নড়ি না, পায়ের নিচের মেঝেটাই আমাকে নড়ায়, আমি কখনো দর্পণে দেখি না নিজেকে, দর্পণের ভিতরের 'আমি' দেখে আমার চেহারা; আমি বলিনাকো কথা, কথারা আমাকে করে উচ্চারণ; আমি জানালায় গেলে, আমাকে কে যেন খোলে। উঠে দাঁড়ালেই আমি নুয়ে পড়ি: আমি খুলি না আমার দু'টি চোখ, চোখ-ই আমাকে খোলে; আমিতো শুনি না কোনো ধ্বনি, ধ্বনিরা আমাকে শুনে; আমি পান করি না কখনো জল, জল-ই আমাকে করে পান, আমি কখনো ধরি না কোনো বস্তু, বস্তুরা আমার দিকে বাড়ায় তাদের হাত; আমি পোশাক খুলি না, পোশাক আমাকে খুলে ফেলে; আমি শব্দ দ্বারা নিজেকে করি না প্ররোচিত, শব্দেরা আমাকে প্ররোচিত করে নিয়ে যায়; আমি দরজার দিকে যাই, হাতল আমাকে করে হতাশ, বিষণ্ন্ন, জানালার খড়খড়ি তোলা হয়, রাত্রি নামে, বাতাসকে ধরবো বলে আমি জলে ডুবাই নিজেকে। পাথুরে মেঝেতে হাঁটি, গোড়ালি পর্যন্ত ডুবে যায়; একটি গাড়ির চালকের সিটে বসে এক পায় সামনে রাখি আরেক পা; ছাতা হাতে এক মহিলাকে দেখে আমার শরীর হতে ঝরে পড়ে রাত্রির ঘামের বিন্দু, বাতাসের দিকে বাড়াতেই হাত- বাতাসে আগুন ধরে যায়; একটি আপেলের দিকে হাত বাড়াতেই সে আমাকে কামড়ে দেয়; আমি হাঁটি খালি পায়ে, তবু মনে হয় আমার জুতোর মধ্যে কে যেন রেখেছে নুড়ি; ক্ষত থেকে যেই পস্নাস্টার উঠিয়ে ফেলি-পস্নাস্টারের সঙ্গে ক্ষত উঠে আসে; খবরের কাগজ কিনলে-খরাদি নজর বুলিয়ে নেয় আমার ওপর; কাউকে ভয় দেখিয়ে মারলে বাকরুদ্ধ হই নিজে, আমি নিজ কানে তুলো দিয়ে চিৎকার করি; জলপরীদের তীক্ষ্নকণ্ঠ শুনতেই আমার ভিতর দিয়ে বয়ে যায় খ্রিস্টমাস মিছিলসমূহ; যখন ফুটাই ছাতা, পায়ের তলায় পুড়তে থাকে মাটি; আমি ছুটে মুক্ত প্রান্তরে গেলেই বন্দি হয়ে যাই। কাঠ বসানো মেঝেতে কেবল হোঁচট খেতে থাকি।