বিষমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদনে সাফল্য

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

রোকসানা আক্তার
মোছা. জাহানারা বেগমের বয়স ৩৫ বছর। তিনি পশ্চিম সমশ্চুড়া আইপিএম ক্লাবের একজন সদস্য। নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগঁাও ইউনিয়নের পশ্চিম সমশ্চুড়া আইপিএম স্কুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ২০০৪ সালে। শিক্ষাগত যোগ্যতায় তিনি ৭ম শ্রেণি পাস। দারিদ্র্যের কারণে তিনি পড়াশোনায় বেশিদূর এগোতে না পারলেও আইপিএম প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর কৃষিক্ষেত্রে এগিয়েছেন অনেকদূর। বসতভিটায় সমন্বিত বাগান ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সবজি উৎপাদন, এডবিøউডি ও এসআরআই পদ্ধতিসহ অনেক আধুনিক পদ্ধতিতে ধান ও সবজি উৎপাদন করে তিনি এলাকার অনেকের অনুকরণযোগ্য এবং প্রশংসার পাত্রী হয়ে উঠেছেন। সেই সঙ্গে সংসারে ফিরিয়ে এনেছেন সমৃদ্ধি ও দূর করেছেন আথির্ক অনটন। আইপিএম স্কুলে প্রশিক্ষণ শেষে গৃহবধূ জাহানারা নিয়মিতভাবে কৃষি কাজে জড়িয়ে পড়েন। সমশ্চুড়া উঁচু এলাকা হওয়ায় সেচের পানির সংকটের কারণে তিনি সবজি চাষকেই প্রাধান্য দেন। তিনি তার বসত বাড়ির পাশ্বের্ মাত্র ২০ শতাংশ জমি নিয়ে শুরু করেন মৌসুমি সবজির চাষাবাদ। এক্ষেত্রে তিনি প্রয়োগ করেন আইপিএম পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন প্রযুক্তি, সুষম সার বিশেষ করে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার, ফেরোমন ফঁাদ ব্যবহার, সাশ্রয়ী সেচ পদ্ধতিসহ তার ট্রেনিং লব্ধ সকল জ্ঞান। এক্ষেত্রে তার স্বামী তাকে উৎসাহ ও সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করেন। প্রতি মৌসুমেই তার উৎপাদিত বেগুন, কুমড়াজাতীয় ফসল (করলা, ঝিঙ্গা, লাউ, চালকুমড়া ইত্যাদি), পুঁইশাক, পাটশাক প্রভৃতি স্থানীয় বাজারসহ আশপাশের বাজারে বিক্রি শুরু হয়। আসে উল্লেখযোগ্য মুনাফা এবং ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে তার জীবনমান। নতুন টিনের ঘর ওঠে এবং আসে বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবনযাত্রার সামগ্রী। জাহানারার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার অনেক কৃষানি কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আইপিএম এবং আইএফএমসি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বিষমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদন শুরু করে। ২০১৬ সালে আইএফএমসি প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা কৃষি অফিস হতে ঐ এলাকায় একটি বিজনেস স্কুল স্থাপন করা হলে জাহানারাসহ মোট ২৫ জন কৃষানি একত্রে বাজার সংযোগবিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবতিের্ত জাহানারার নেতৃত্বে শুরু হয় সমকালীন চাষাবাদ। কয়েকজন মিলে একত্রে একই জাতীয় ফসল উৎপাদনের এক অভিনব প্রক্রিয়া যার ফলে বীজ প্রাপ্তি, চাষ, অন্তবর্তীর্কালীন পরিচযার্, ফসল সংগ্রহ ও বিপণন সহজতর হয়ে ওঠে। বিপণন সহজতর করতে ও ন্যায্য দাম প্রাপ্তির কথা ভেবে তৈরি হয় ছোট ছোট কালেকশন পয়েন্ট। নিদির্ষ্ট ফসলের কালেকশন পয়েন্টে নিদির্ষ্ট দিনে জমা হয় গ্রæপ করে উৎপাদিত ফসল এবং এখান থেকেই আড়তদাররা ন্যায্য দামে কিনে নিয়ে যান আইপিএম পদ্ধতিতে উৎপাদিত নিরাপদ ফসল। এখন পশ্চিম সমশ্চুড়া এলাকার অনেক কৃষক পরিবারের জীবন ও জীবিকার মানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। জাহানারার মতো কৃষানি এবং আইপিএম এর মত আধুনিক ও নিরাপদ প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন পদ্ধতি দ্রæততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে নালিতাবাড়ীর অন্যান্য ইউনিয়নে।