বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ

নন্দিনী ডেস্ক
  ৩০ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর-১০ ডিসেম্বর) পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ২৫ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিচালক, লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লবি অ্যাডভোকেট মাকছুদা আখতার। লিখিত বক্তব্য শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম।

'ধর্ষণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ'- আসুন নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের লক্ষ্যে এ বছর বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বহুমুখী কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ২৯টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশে বলা হয়-

১. নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার নারীকে দায়ী করার মানসিকতা পরিহার করতে সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে হবে। ২. ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে ধর্ষণের শিকার নারীর পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি, চিকিৎসাসহ ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করতে হবে। ৩. নারী ও কন্যা নির্যাতনের ঘটনার বিচারে সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

৪. নারী ও কন্যা নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দৃশ্যমান করতে হবে। ৫. কোর্টে ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন নিষিদ্ধ করে প্রচলিত সাক্ষ্য আইনের বিধান পরিবর্তন করতে হবে। ৬. বৈবাহিক ধর্ষণের শাস্তির বিধান আইনে যুক্ত করতে হবে।

৭. ছেলেদের স্কুল-কলেজগুলোতে নারী ও কন্যা নির্যাতন বিরোধী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। ৮. নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সব সামাজিক শক্তিকে এক হতে হবে।

৯. শিশু, কিশোর-কিশোরীদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ১০. নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি ও সাক্ষীর সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করতে হবে। ১১. ধর্ষণের শিকার নারী নয়, ধর্ষক পুরুষদের নিয়ে গবেষণা করে ধর্ষণের মূল কারণগুলো অনুসন্ধান করতে হবে। ১২. বিদ্যমান আইনের প্রয়োগসহ দ্রম্নত মামলার বিচার ও শাস্তি কার্যকর করতে হবে। ১৩. নারী ও কন্যা নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়, প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ১৪. অপরাধীকে চিহ্নিত করে পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বয়কট এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে পাড়া-মহলস্নায় গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ১৫. মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১৬. নিরাপদ অভিবাসনসহ দেশে ও বিদেশে নারী শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ১৭. নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে অধিকতর কার্যকর, দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে পৃথক পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় করতে হবে। ১৮. হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে ঘটনাস্থলকে মুখ্য বিবেচনা না করে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন বা এ ধরনের আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় কোনো বৈষম্য, বিলম্ব ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে থানায় অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে হবে। ১৯. উত্ত্যক্তকরণ, যৌন নিপীড়ন বন্ধে হাইকোর্ট বিভাগের রায় বাস্তবায়ন ও রায়ের আলোকে আইন প্রণয়ন করতে হবে। ২০. ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি (মেডিকো-লিগ্যাল) পরীক্ষার ক্ষেত্রে 'দ্বি-আঙ্গুলের পরীক্ষা' বা 'টু ফিঙ্গার টেস্ট' নিষিদ্ধ করে দেওয়া হাইকোর্ট বিভাগের রায় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্তে প্রোটোকল বাস্তবায়ন করতে হবে। ২১. ধর্ষণকারীর মেডিকেল পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ২২. ধর্ষণকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে সে ধর্ষণ করেনি- এ বিধান আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ২৩. পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-র বাস্তবায়ন করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় নারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ২৪. পারিবারিক সংহিসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০১০-র বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার সব পদক্ষেপ নিতে হবে। ২৫. সামজিক অনাচার প্রতিরোধে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে। ২৬. বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭-এর কন্যার বিবাহর বয়সসংক্রান্ত বিশেষ বিধান বাতিল করে আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে। ২৭. সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় সঠিকভাবে মামলা দায়েরসহ সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ২৮. জাতিসংঘের সিডও সনদের অনুচ্ছেদ-২ ও ১৬(১)(গ)-এর ওপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। ২৯. বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করতে হবে (বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, দত্তক, সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়গুলো)।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে