জড়িয়ে থাকা সম্পকর্গুলো

বাবা-মায়ের পছন্দের এই জীবনসঙ্গী তার জন্য খুব পজিটিভ একজন মানুষ হলেও শ্বশুরবাড়ি যে তার জন্য একবারেই ভয়াবহ এটা বুঝতে তার খুব বেশি সময় লাগেনি। তৃষ্ণার জীবনসঙ্গী, যার নাম সাগর। এই সাগর তৃষ্ণার মনকে এমনই আচ্ছন্ন করে রেখেছিল যে সব প্রতিক‚লতাকে তৃষ্ণা এক ঝটকায় সরিয়ে দিতে পেরেছিল...

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ডা. তানজিনা আল-মিজান
তৃষ্ণার দাম্পত্য জীবনের ১৪ বছর পার হয়েছে। সময় বড় অদ্ভুত। যখন পার হয়, হয়েই যায়। যখন বোঝায় খুব আয়েশ করেই বুঝিয়ে যায়। কিন্তু এই ‘সময়’ তৃষ্ণাকে কি বোঝাচ্ছে? কেন তৃষ্ণাকে অস্থির করে তুলছে সময়? সময়ের আর কি দোষ? সম্পকর্ নামক কঠিন বিষয়টি সময়কে জটিল করে। খুবই পরিচিত একটি শব্দ হচ্ছে ‘সম্পকর্’ কিন্তু এই শব্দটিকে এক কথায় সংজ্ঞায়িত করা যায় না বরং এই সম্পকর্ দিয়েই অনেক কিছুকে সঙ্গায়িত করা যায়। যেমন-স্বামী-স্ত্রীর সম্পকর্, বন্ধুত্বের সম্পকর্ ইত্যাদি। এই সম্পকর্ই সবাইকে পরিচালিত করে। মানুষ কেমন ব্যবহার করবে, কেমন করে কথা বলবে, কেমন করে হাসবে সবকিছু। তৃষ্ণা এগুলো ১৪ বছর পর ভাবছে কেন? এই সময় আর সময়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সম্পকর্গুলোই তো তাকে ভাবাচ্ছে। এই ভাবনা সে তো ভাবতে চায় না। কিন্তু সময় তাকে ভাবাচ্ছে সম্পকের্র অবহেলায়। তৃষ্ণা সারাজীবন সুখে থাকতে চেয়েছে। সুখী মানুষ হতে চেয়েছে। কিন্তু ক্রমেই সে আয়নায় একজন অসুুখী মানুষকে দেখছে। অসুখী মানুষকে দেখছে আর ভাবছে সেই ১৪ বছর আগের কথা। বেশির ভাগ মেয়েদেরই বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। স্বপ্ন থাকে জীবনসঙ্গীকে নিয়ে, শ্বশুরবাড়ি নিয়ে। কিন্তু তৃষ্ণার কেন যেন এগুলো নিয়ে কোনো চিন্তা ছিল না, হঠাৎ করেই বাবা-মায়ের ইচ্ছায় তার বিয়ে হয়ে গেল একজন সুদশর্ন পুরুষের সঙ্গে। যেহেতু প্রেমের তেমন কোনো প্রভাব তার জীবনে ছিল না কাজেই এই সুদশর্ন পুরুষটিকে তার না করার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু বাবা-মায়ের পছন্দের এই জীবনসঙ্গী তার জন্য খুব পজিটিভ একজন মানুষ হলেও শ্বশুরবাড়ি যে তার জন্য একবারেই ভয়াবহ এটা বুঝতে তার খুব বেশি সময় লাগেনি। তৃষ্ণার জীবনসঙ্গী, যার নাম সাগর। এই সাগর তৃষ্ণার মনকে এমনই আচ্ছন্ন করে রেখেছিল যে সব প্রতিক‚লতাকে তৃষ্ণা এক ঝটকায় সরিয়ে দিতে পেরেছিল। পেরেছিল সমাজের এই কলুষিত দিকটিকে জয় করতে। যে সাগরকে পেয়ে তৃষ্ণা তার জীবনের সব পিপাসা মেটাতে সক্ষম হয়েছিল সে কেন আজ তৃষ্ণাতর্? যেই সম্পকর্ তাকে করেছিল সমৃদ্ধ, যে জীবনসঙ্গী তাকে করেছিল অদম্য সাহসী আজ সেই সাগর কেন এমন করে? তৃষ্ণা তো কখনো প্রশ্ন করেনি সাগরকে। তৃষ্ণা যখন অবহেলিত হয়েছে সাগরের পরিবার দিয়ে তখন সেই মানুষটির জন্য তৃষ্ণা সব সহ্য করেছে। এক কথায় সে কিছুই মনে করেনি এগুলোকে। আজ যখন সাগর আগের সব কিছু ভুলে তৃষ্ণাকে কষ্ট দেয় তখন তৃষ্ণার বড় অবাক লাগে। তৃষ্ণা যখন বোঝে সাগর তার মনকে মূল্যায়ন করছে না, তার চাওয়া-পাওয়াগুলোকে আমলে আনছে না তখনই সে কষ্ট পাচ্ছে। আর ভাবছে, আসলে কোনো কিছুরই বাড়াবাড়ি ঠিক না। এমনকি সহ্য করার বাড়াবাড়ি হলেও ঠিক না। বেশি সহ্যও বুঝি করতে নেই। কিন্তু কি করবে তৃষ্ণা? আজ ১৪ বছর পর সে ভাবে, তার এই পথচলা কি তাহলে ভুল ছিল! কিবা করতে পারত সে? সে যদি সহ্য না করত তবে তার সংসার নামক জিনিসটা আজ ভেঙে চুরমার হয়ে যেত। কিন্তু সহ্য করেই বা সে কি পাচ্ছে আজ? সাগরের বিরক্তি আর ভুল বোঝা! যে তৃষ্ণা জীবনে দুঃখকে এতটুকু স্থান নিতে দেয়নি, সে আজ মাঝেমধ্যেই চোখের পানি ঝরায় গোপনে। মেয়ে বলে দুবর্ল হতে সে শেখেনি। কোনোভাবেই সে মানতে রাজি নয়, মেয়ে বলে সব সহ্য করতে হবে । কিন্তু সময় বুঝি অনেক কিছু পাল্টে দেয়। তবে এখনো তৃষ্ণা দুবর্ল নয়। এত প্রতিক‚লতা সত্যেও তৃষ্ণা সাগরের উন্নতি, তার দীঘর্ সুস্থ জীবন চায়। আর এই চাওয়াই তৃষ্ণাকে অনেকের চেয়ে উন্নত করে রেখেছে, তাকে সম্মানিত করে রেখেছে তার সামনে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা আর তার সন্তানকে সভ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার অদম্য প্রচেষ্টা। সমাজে তৃষ্ণাদের কোনো অভাব নেই। শত প্রতিক‚লতা সত্তে¡ও তৃষ্ণারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক, ঠঁাই করে নিক সব উচ্চ স্থানে- এই কামনাই আমাদের সবার।