চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর অংশগ্রহণ ও সীমাবদ্ধতা

বতর্মান পৃথিবী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পৃথিবী। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় প্রযুক্তি শিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনে প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। যদিও প্রযুক্তি বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ আমাদেরকে অনেকটাই আশাবাদী করে তুলেছে। যেমন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থার একটি প্রকল্পের নাম ‘জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ’...

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

এম রুমা
নারীরা ঘরের গÐি পেরিয়ে বাইরের পৃথিবীর আলো-বাতাসে নিজেকে মেলে ধরলেও, চ্যালেঞ্জিং পেশাতে নারীর অংশগ্রহণ প্রত্যাশা অনুযায়ী কম
বতর্মান সামাজিক প্রেক্ষাপটে সবের্ক্ষত্রে নারীর স্বতঃস্ফ‚তর্ অংশগ্রহণ লক্ষ্যণীয়। অতীতের তুলনায় আজকের নারীরা অনেক বেশি ক্যারিয়ার সচেতন। কিন্তু অনুতাপের বিষয় হলো- নারীরা ঘরের গÐি পেরিয়ে বাইরের পৃথিবীর আলো-বাতাসে নিজেকে মেলে ধরলেও, চ্যালেঞ্জিং পেশাতে নারীর অংশগ্রহণ প্রত্যাশা অনুযায়ী কম। এর পেছনে বহুবিধ কারণ থাকতে পারে। যেমন, শৈশব থেকে নারীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে দুবর্ল রূপে তুলে ধরা হয়। যদিও অনেক নারীরই ইতিমধ্যে সমাজের এই প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছেন। নারীদের দুবর্ল রূপে তুলে ধরার পেছনে পুরুষ সমাজের অবদান যতটুকু, তার চেয়েও বেশি অবদান নারী সমাজের। পরিবারের নারী সদস্যদের মানসকিতা লক্ষ্য করলে বিষয়টি খুব সহজেই অনুধাবন করা যায়। একজন মানুষ হিসেবে জীবনে ভালো কিছু করার জন্য নিজের ওপর যে আত্মবিশ্বাসটুকু থাকা জরুরি, প্রায় নারীই শৈশব থেকে সেই আত্মবিশ্বাসটুকু নিজের ভেতর লালন করার ধারাবাহিক পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেন না। ফলে সেসব নারীর স্বপ্ন দেখার পরিধি ছোট হয়ে আসে। সমস্যার মুখোমুখি হতে তাদের অনেকেই ভয় পেয়ে যান। এক্ষেত্রে তারা শিক্ষকতা, ব্যাংক কমর্কতার্, স্বাস্থ্যকমীর্র মতো সহজ পেশাগুলোকে বেছে নিতেই নিরাপদবোধ করেন। বতর্মান পৃথিবী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পৃথিবী। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় প্রযুক্তি শিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনে প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। যদিও প্রযুক্তি বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ আমাদেরকে অনেকটাই আশাবাদী করে তুলেছে। যেমন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংস্থার একটি প্রকল্পের নাম ‘জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ’। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য দেশের শিক্ষিত নারীদের তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে কমর্সংস্থান এবং যোগাযোগ প্রযুক্তিনিভর্র উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষিত নারীকে কম্পিউটারবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে কমর্সংস্থান ও আথির্ক স্বনিভর্রতা অজের্ন সহায়তা করা। মূলত প্রযুক্তি শিক্ষায় নারী-পুরুষ উভয়েরই স্বতঃস্ফ‚তর্ অংশগ্রহণ খুব জরুরি। সবের্ক্ষত্রে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ আমাদের দেশকে সফলতার সবোর্চ্চ সীমায় পেঁৗছে দিতে পারে। আধুনিক এই পৃথিবীতে দঁাড়িয়ে একথা অস্বীকার করার কোনো পথ খোলা নেই যে, নারীরা যোগ্য নয়। বরং নারীদেরকে অযোগ্য করে রাখার জন্য এখনো যে নানা ধরনের অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে সেই বিষয়কে মোটেও অস্বীকার করা যায় না। এক নারীর সফলতার গল্প হাজারও নারীকে সফলতার পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারে নারীর মনে তৈরি হওয়া দ্বিধা-দ্ব›েদ্বর দেয়াল। নারীরা নিদ্বির্ধায় কমের্ক্ষত্রে নিজেদের প্রকৃত যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখার সাহস অজর্ন করতে পারে। সম্প্রতি নাসার পুরস্কারপ্রাপ্ত এমনই এক আলোকিত বাংলাদেশি নারীর কথা আমরা বলতে পারি। ২০১৭ সালের ঘঅঝঅ এড়ফফধৎফং ঋণ১৭ ওজঅউ ওহহড়াধঃড়ৎ ড়ভ ঃযব ুবধৎ পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশি মাহমুদা। এমনকি নাসার সাময়িকী ঈঁঃঃরহম ঊফমব এর লেটেস্ট ইস্যুর প্রচ্ছদ প্রতিবেদনই করা হয়েছে মাহমুদাকে নিয়ে। তিন পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে শুধু মাহমুদাকে নিয়েই ছিল বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের মুগ্ধতার বন্যা। কাজেই এক মাহমুদা হতে পারে আমাদের অনেকের কাছেই সফলতার বাতিঘর। শুধু যে কমের্ক্ষত্রে সফলতার জন্যই প্রযুক্তি শিক্ষার প্রয়োজন এমনটা নয়; বরং সন্তানদের সুষ্ঠুভাবে বেড়ে তোলার জন্য, তাদের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গড়ে তোলার জন্য মায়েদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানাজর্ন খুব জরুরি। কেননা শৈশবের সময়টুকু শিশুর মানসিক বিকাশের সময়। আর এই সময়টুকু শিশু তার মায়ের সংস্পশের্ই কাটায়। সুতরাং একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত শিক্ষা অজর্ন এবং প্রযুক্তিগত পেশা নিবার্চন নারীর জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে দঁাড়িয়েছে। নারীর জন্য প্রযুক্তি শিক্ষার গুরুত্বের বিষয়টি আমরা যত দ্রæত অনুধাবন করতে পারব, দেশ ও দশের জন্য বিষয়টি ততই মঙ্গলজনক হয়ে উঠবে।