কমর্জীবী নারীর আবাসন যেন না হয় প্রহসন

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মাসুমা রুমা
জীবিকার তাগিদে কিংবা আত্মসম্মান বা সামাজিক মযার্দা সৃষ্টির জন্য নারীরা চাকরি করতে অধিক আগ্রহী ছবি : ইন্টারনেট
কমর্জীবনে মেয়েদের অংশগ্রহণ আগের তুলনায় অনেক বেশি। জীবিকার তাগিদে কিংবা আত্মসম্মান বা সামাজিক মযার্দা সৃষ্টির জন্য নারীরা চাকরি করতে অধিক আগ্রহী। অন্যদিকে প্রতিবছর হাজার হাজার নারী শিক্ষাথীর্ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতির্র লক্ষ্যে রাজধানীর বুকে পাড়ি জমায়। এসব শিক্ষাথীর্ বা কমর্জীবী নারীর সিংহভাগই গ্রাম থেকে আসা। অথচ তাদের জন্য নেই পযার্প্ত আবাসন সুবিধা। যার ফলে কমর্জীবন বা উচ্চশিক্ষা জীবনের শুরুতেই তাদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। অভিভাবকরা মেয়েসন্তানের সুন্দর ও নিরাপদ জীবন নিয়ে প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় থাকেন। অভিভাবকদের এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করার দায়ভার সরকার, আমার কিংবা আপনার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীরা তাদের যোগ্যতা আর দক্ষতার যথাযথ প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছে। নারীর অবদানকে উপেক্ষা করার কোনো পথ খোলা নেই। দেশে কমর্জীবী নারীর জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হোস্টেলের মোট সংখ্যা আটটি এবং রাজধানীতে চারটি। হোস্টেলের মোট আসনের বিপরীতে কেবল রাজধানীতেই কমর্জীবী নারীর সংখ্যা কয়েক হাজারগুণ বেশি। ফলে এক রকম বাধ্য হয়েই তাদের ব্যক্তিমালিকাধীন হোস্টেলে থাকতে হয়। হোস্টেল ছাড়াও বিভিন্ন মেস, কয়েকজন মিলে ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া নেয়া কিংবা সাবলেট হিসেবেও থাকতে হচ্ছে নারীদের। পড়াশোনার জন্য গ্রাম থেকে আসা শিক্ষাথীের্দর জন্য হোস্টেল বা মেসই শেষ ভরসা। বাসস্থানের নিরাপত্তার অভাবে অনেক নারীই কমির্বমুখ হয়ে পড়ছে। ফলে ইচ্ছা বা যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও তারা পারিবারিক সচ্ছলতা বা দেশের অথর্নীতিতে অবদান রাখতে পারছে না। শিক্ষাথীের্দর নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। ফলে তারা সঠিকভাবে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে ব্যথর্ হয়। অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলে হোস্টেলের কড়াকড়ি নিয়ম অনেক ক্ষেত্রে কমর্জীবী নারীদের বিড়ম্বনায় ফেলে দেয়। অনেক সময় তাদের হোস্টেলে ঢুকতেও দেয়া হয় না। ফলে তাদের অসহায় অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। কিছুদিন পর পর সিট ভাড়া বৃদ্ধি করা হোস্টেল বা মেস মালিকদের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। তারা কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকেন। অথচ কোনো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয় না। ফলে বাড়তি সিট ভাড়ার টাকা গুনতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় নারীদের। অস্বাস্থ্যকর খাবারব্যবস্থা নারীদের ভোগান্তির আরও একটি পযার্য়। পযার্প্ত টাকা নিয়েও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সরবরাহ করে না হোস্টেল কতৃর্পক্ষ। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার দরুণ কমর্জীবী নারী বা শিক্ষাথীর্রা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সময় রোগ জটিল পযাের্য় পৌঁছালে চাকরি বা পড়াশোনা ছেড়ে তারা গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। যেমনÑ রাজধানীতে ‘নিবেদিকা ছাত্রী হোস্টেল’-এর প্রায় ৫০টি শাখা আছে। এই হোস্টেল মালিকের মোহনা, আপনঘরসহ বিভিন্ন নামেও ছাত্রী হোস্টেল আছে। অথচ হোস্টেল কতৃর্পক্ষ খাবার, পয়ঃনিষ্কাশন কিংবা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে আগ্রহী না হয়ে শাখা বৃদ্ধিতেই অধিক মনোযোগী। যখন-তখন সিট ছেড়ে দেয়ার হুমকি নতুন কিছু নয়। সিট ছাড়ার ভয়ে অনেক শিক্ষাথীর্ বা কমর্জীবী নারী মুখ বুজে নানা অব্যবস্থাপনাকে মেনে নেন। কারণ হোস্টেল বদল করা অনেক কষ্টসাপেক্ষ ও বিড়ম্বনার বিষয়। তা ছাড়া বেশির ভাগ সময় সহজে, অল্প সময়ে সিট পাওয়াও যায় না। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও প্রয়োজনের তুলনায় নারী হোস্টেল খুবই নগণ্য। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কোনো হোস্টেলই নিমার্ণ করা হয়নি। সরকারি উদ্যোগে কমর্জীবী নারীদের জন্য আবাসন সংখ্যা ও সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। বেসরকারি হোস্টেলগুলো যেন অনিয়ম বা দুনীির্ত করতে না পারে সেদিকে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। নারী শিক্ষাথীের্দর কথা মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আরও অধিক হোস্টেল নিমার্ণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পযার্প্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ও অহেতুক বিড়ম্বনার হাত থেকে নারীদের মুক্তি দিতে হোস্টেল মালিকদের বিবেকবোধ ও মানবিকতাবোধকে জাগ্রত করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার সরবারহ বন্ধ করতে হবে। যখন-তখন ভাড়া বৃদ্ধি করা বা নোটিশ ছাড়া যেন সিট ছাড়ার নিদের্শ দেয়া না হয় সেজন্য সরকার কতৃর্ক বেসরকারি হোস্টেলগুলোর জন্য সঠিক নীতিমালা তৈরি করতে হবে এবং তা কাযর্কর ব্যবস্থা নিতে হবে। সবোর্পরি আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করতে হবে। বাধাগুলো অতিক্রম করে নারীদের সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরাপদ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা হলে নারীরা আরও অধিক মাত্রায় দেশের উন্নয়নে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে অবদান রাখতে পারবে। ফলে নারী-পুরুষের সমান প্রচেষ্টা আর অবদানে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশও হয়ে উঠবে একটি সমৃদ্ধ দেশ।