শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্যোক্তা রাইদা

১৬ বছরের কিশোরী রাইদা ইসলাম। পড়াশোনায় সবে মাধ্যমিক শেষে উচ্চ মাধ্যমিকে। সময়টা স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়ানো কিংবা খেলাধুলা করে কাটানোর কথা, কিন্তু এ বয়সে নিজের জগৎকে সাজিয়েছেন ভিন্নভাবে। ইতিমধ্যেই স্বপ্নের হাতছানিকে ছুঁয়ে দেখতে নিজের নাম লিখিয়েছেন উদ্যোক্তার তালিকায়। রাইদার রূপকথার গল্প জানাচ্ছেন তানজিদ শুভ্র
নতুনধারা
  ০৪ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

বগুড়া জেলার শেরপুরে ২০০৩ সালে ডিসেম্বরে স্কুল শিক্ষক বাবা আর গৃহিণী মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন রাইদা ইসলাম। বাবা-মায়ের আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই যুক্ত হয় পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য রাইদা। সাড়ে ৩ বছর বয়সে একটি রঙ-পেন্সিল কোম্পানির সৌজন্যে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করে জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে স্থান করে নেয় বিজয়ীদের তালিকায় সপ্তম অবস্থানে। শখের বশে নাচ শিখে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা রয়েছে কিশোরী রাইদার।

রঙ-পেন্সিলের আঁচড় ভুলতে না পেরে পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছে আঁকাআঁকিতে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজের নাম লিখিয়েছে উদ্যোক্তার তালিকায়। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের যুগে 'জঁঢ়শড়ঃযধ'ং ডড়ৎষফু উৎধরিহম চড়রহঃ' নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ফেসবুক মার্কেটিংয়ে নিজের উদ্যোক্তা পরিচয় তুলে ধরেছে রাইদা। উদ্যোক্তা হওয়ার ভাবনার শুরু জানতে চাইলে রাইদা জানায়, '৯ম শ্রেণিতে পড়ার সময় অনলাইন থেকে একটি কাঠের গহনা কিনি এবং আমার মা আমাকে বলেন- 'তুমিও তো বানাতে পারবে।' তারপর থেকেই ভাবনা শুরু। নিজের স্বপ্নকে পথ দেখাতে জঁঢ়শড়ঃযধ'ং ডড়ৎষফ নাম নিয়ে যাত্রা শুরু করি।' রাইদার জঁঢ়শড়ঃযধ'ং ডড়ৎষফ-এ কাঠের গহনার পাশাপাশি হাতে পেইন্ট করা কামিজ, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি এবং কুশন কভার পাওয়া যায়।

রাইদা তার কাজকর্ম নিয়ে জানায়, 'এ ধরনের কাজ আমার মতো বয়সের খুব একটা কেউ করে না। এজন্য শুরুতে ভয়ে ছিলাম যে আমার থেকে কেউ নেবে কিনা। কিন্তু সাহস করে কাঠের গহনা তৈরির কাঁচামাল এনে সব কিছু নিজ হাতে করি। এরপর কাঠের গহনার পাশাপাশি হাতে পেইন্ট করা কামিজ, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি এবং কুশন কভার বানানো শুরু করি।' ঈদ, পূজা, নববর্ষ, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সাড়া ফেলে রাইদার জঁঢ়শড়ঃযধ'ং ডড়ৎষফ-এর কার্যক্রম।

শখ থেকে শুরু করা কাজের মূল অনুপ্রেরণা দিয়েছে মা রায়হানা পারভীন আর সহায়তা পেয়েছেন বাবা রফিকুল ইসলাম রঞ্জুর ড্রয়িং প্রতিষ্ঠান থেকে। নিজের প্রাপ্তি নিয়ে বলতে গিয়ে রাইদা বলে, 'অল্প সময়েই গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করে সফল নারী উদ্যোক্তার খাতায় নাম লেখাতে পেরেছি এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। তাছাড়া পরিবারের সবাই আমার কাজে খুব খুশি। সব শিক্ষকও আমার এ কাজের প্রশংসা করেছেন।' করোনাকালে অবসর কাটাতে শখের উদ্যোক্তা সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'উদ্যোক্তা হওয়া সহজ তবে টিকে থাকা কঠিন। অনেকেই ফ্রি সময় কি করব ভেবে বিজনেস সম্পর্কে কিছু না জেনে-বুঝেই উদ্যোক্তা হতে চায়। যারা হুজুকে শুরু করছে তারা আজ আছে কাল নাই।'

রাইদা ইসলাম চলতি বছর শেরপুর সামিট স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। একই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ভবিষ্যতে চারুকলায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ আর জঁঢ়শড়ঃযধ'ং ডড়ৎষফ-এর প্রসারের স্বপ্ন দেখে কিশোরী উদ্যোক্তা রাইদা ইসলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে