বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
সময়ের প্রতিচ্ছবি

অ্যাডা লাভলেস

নন্দিনী ডেস্ক
  ১১ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

১৯ শতকের নারী গণিতবিদ অগাস্টা অ্যাডার পুরো নাম অ্যাডা অগাস্টা কিং। তাকে ডাকা হতো কাউন্টেস অব লাভলেস বা শুধুই অ্যাডা লাভলেস নামে। অগাস্টা অ্যাডা প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামের ধারণা দেন। তিনি বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি লর্ড বায়রন এবং আনা ইসাবেলা বায়রনের কন্যা।

অগাস্টা অ্যাডা বায়রন ১৮১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর লন্ডন, ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই অ্যাডার মা তাকে গণিত ও বিজ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে চাইতেন। ১৮২৯ থেকে তিনি হাম এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ততায় ভুগছিলেন। কিন্তু ক্র্যাচে ভর দিয়ে তিনি শিক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন। ১৮৩২-এ যখন তার বয়স ১৭ তখন তার বিশেষ গাণিতিক প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। তার শিক্ষক ছিলেন গণিতজ্ঞ ও যুক্তিবিদ ডি-মরগ্যান। স্যার চার্লস ডিকেন্স, স্যার চার্লস হুইটস্টোন এবং বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের সঙ্গেও তার জানাশোনা ছিল। ১৮৩৩ সালের ৫ জুন তার সঙ্গে পরিচয় হয় বিশ্ববিখ্যাত স্যার চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে।

১৮৪১ সালের দিকে চার্লস ব্যাবেজ ডিফারেন্স ইঞ্জিনের চেয়ে অধিকতর আধুনিক এবং জটিল কম্পিউটার 'অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন'-এর ধারণা উপস্থাপন করেন। অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিনের পরিকল্পনা করতে গিয়ে ব্যাবেজ যে সমস্যার সম্মুখীন হন তা হচ্ছে- এই ইঞ্জিনের গাণিতিক হিসাবগুলো কোন পদ্ধতিতে করবে তা। এ ক্ষেত্রে ব্যাবেজকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন অ্যাডা। তিনি অসংখ্য বীজগাণিতিক উপায় যোগ করেন তার নোটগুলোতে। অন্যদিকে 'বার্নোলি সংখ্যা' নামক একটি জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হন ব্যাবেজ। অ্যাডা এই সমস্যার সমাধান করেন। তিনি পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার অ্যালগরিদম রচনা করেন। বার্নোলি সংখ্যার এ অ্যালগরিদমের জন্যই অ্যাডা লাভলেসকে বলা হয় পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার।

আজকের যুগের আধুনিক কম্পিউটারের ধারণা প্রবর্তনে ব্যাবেজের পাশাপাশি অ্যাডার ভূমিকাও অপরিসীম। অ্যালগরিদম রচনা করে তিনি অনুধাবন করেন যে, অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন কেবল গণনাযন্ত্র হিসেবে নয়, ব্যবহৃত হবে আরও অসংখ্য কাজে। তিনি তার নোটে লিখেছিলেন, যে কোনো বিষয় যেমন গান, ছবি ইত্যাদিকে যদি সংখ্যায় পরিণত করার উপায় খুঁজে বের করা যায়, তাহলে কম্পিউটারের মাধ্যমে তার পরিবর্তন করা সম্ভব।

ল্যাভলেস ১৮৫২ সালে ২৭ নভেম্বর ক্যান্সার এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যান। মৃতু্যর প্রায় ১৫০ বছর পর ১৯৫০ সালে কম্পিউটার সায়েন্সে অ্যাডা ল্যাভলেসের অবদানটি নজরে আসে এবং ১৯৫৩ সালে ই.ঠ. ইড়ফিবহ অ্যাডার আর্টিকেল 'ঋধংঃবৎ :যধহ ঞযড়ঁমযঃ : অ ঝুসঢ়ড়ংরঁস ড়হ উরমরঃধষ পড়সঢ়ঁঃরহম গধপযরহবং' এ পুনঃপ্রকাশ করেন। ১৯৮০ সালে 'ঞযব ট.ঝ উবঢ়ধৎঃসবহঃ ড়ভ ফবভবহংব' একটি নতুন কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজের নামকরণ করে 'অফধ'। অগাস্টা অ্যাডা ল্যাভলেসের কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে বিশেষ অবদানের জন্য বিশ্বব্যাপী ২৪ মার্চ 'অ্যাডা ল্যাভলেস' দিবস হিসেবে পালিত হয়। 'কনসিভিং অ্যাডা' নামে তাকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে