এলিস মানরো

সময়ের প্রতিচ্ছবি

এলিস মানরো তার গল্পে নারীর জীবনের টানাপড়েন খতিয়ে দেখেছেন নানাভাবে। নারীজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়েই লিখেছেন বেশি

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

নন্দিনী ডেস্ক
কানাডার আন্তন চেখভ পরিচয় যার, তিনি ছোটগল্পের লেখিকা এলিস মানরো। তিনি গল্প লিখেছেন মানবিক সম্পর্কের গভীরতর তলদেশে থাকা ব্যাপারগুলো নিয়ে। সাধারণ মানুষের কথা লিখতে গিয়ে হাতে আসে অসাধারণ জাদু। ১৯৩১ সালের ১০ জুলাই অন্টারিও প্রদেশের উইংহ্যামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১৩ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার এবং ২০০৯ সালের ম্যান বকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি গদ্যের জন্য তিনবার কানাডার গভর্নর জেনারেল পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি তার গল্পে দক্ষিণ-পশ্চিম অন্টারিও এলাকা, স্কচ-আইরিশ বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগাঁথা বর্ণনা করেছেন। মানরোর লেখাগুলোয় উপমার ব্যবহার ও বর্ণনাত্মক ভঙ্গিমায় স্তবকাকারে বাধ্যগত, অর্থনৈতিক দিক ও প্রগাঢ়তা লাভ করেছে। পাশাপাশি তার লেখাতে সাধারণ ব্যক্তিদের গভীর ও জটিল মনোগত দিক প্রকাশ করা হয়েছে। এলিস অল্প বয়স থেকে পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি ১১ বছর বয়সে লেখা শুরু করেছিলেন। উচ্চ বিদ্যালয় সমাপ্ত করেই মানরো সাংবাদিকতায় আগ্রহী হন। তিনি ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা এবং ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৫১ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়ে গেলে পড়াশোনায় সাময়িক ছেদ পড়ে। এ পর্যায়ে তিনি স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় 'ভিক্টোরিয়া'তে। দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ এবং স্বাভাবিক আয়ের একটি উৎস তৈরি করার লক্ষ্যে। এ দম্পতি সেখানে একটি পুস্তকের দোকান খোলেন এবং সমাজে নিজেদের পরিচয় নির্মাণ করেন সাহিত্যের নিবিষ্ট পাঠক হিসেবে। সে সময়টাতে তিনি দোকান পরিচালনা এবং গল্প রচনায় ব্রতী হন। বিশেষত, ছোটগল্পেই তার প্রসার ঘটে। মূলত এ সময় কালটাই মানরোর জীবনে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্তির মূল পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। এলিস মানরো তার গল্পে নারীজীবনের টানাপড়েন খতিয়ে দেখেছেন নানাভাবে। নারীজীবন অভিজ্ঞতা নিয়েই লিখেছেন বেশি। এ কারণে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি 'নারীবাদী' কিনা। মানরোর পরিষ্কার উত্তর, 'ফেমিনিস্ট' শব্দ বা তত্ত্ব দিয়ে আসলে কী বোঝানো হয় তা আমার বুঝে আসে না। নারীবাদী তত্ত্ব দিয়ে যা বোঝানো হয়, আমি সে রকম নারীবাদী কেউ নই। আমাকে নারীবাদী বলতে পারেন এই অর্থে, আমি নারীর জীবনের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। (দি আটলান্টিক)। এলিস মানরোর পাঁচটি বই পাঠকপ্রিয়। সেগুলো তাকে এনে দিয়েছে পুরস্কারের পর পুরস্কার। তার প্রথম গল্পগ্রন্থ 'ড্যান্স অব দ্য হেপি শেইডস' আনে গভর্নর জেনারেল অ্যাওয়ার্ড। 'দ্য লাইভস অব দ্য গার্লস অ্যান্ড উইমেন' বইটির জন্য পান কানাডিয়ান বুকসেলার অ্যাওয়ার্ড। 'হু ডু ইউ থিংক ইউ আর' শীর্ষক গল্পের বইটি আনে আবার গভর্নর জেনারেল অ্যাওয়ার্ড। 'দ্য লাভ অব অ্যা গুড উইমেন' বইটির জন্য পান ন্যাশনাল বুক ক্রিটিকস সার্কেল অ্যাওয়ার্ড এবং সর্বশেষ 'ডিয়ার লাইফ' বইটির জন্য তাকে ট্রিলিয়াম বুক অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এলিস মানরোর গভর্নর জেনারেলের পুরস্কার হলো (১৯৬৯, ১৯৭৮, ১৯৮৭), বিসি লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশনের অসামান্য কথাসাহিত্য লেখকের পুরস্কার, (১৯৭২), গ্রেট লেক কলেজ অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার (১৯৭৪), অ্যান্টোনিও কাউন্সিল ফর আর্টস অ্যাওয়ার্ড (১৯৭৪), কানাডা-অস্ট্রেলিয়া সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৭), ন্যাশনাল ম্যাগাজিন অ্যাওয়ার্ডস ফাউন্ডেশন স্বর্ণ পদক পুরস্কার (১৯৭৭, ১৯৮২), ফাউন্ডেশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব কানাডিয়ান লেটারস এবং কানাডার লেখক পুরস্কারের প্যারিওডিকাল ডিস্ট্রিবিউটরস (১৯৮০), মারিয়ান এঙ্গেল পুরস্কার (১৯৮৬), কানাডা কাউন্সিল মোলসন পুরস্কার (১৯৯১), কমনওয়েলথ লেখক পুরস্কার (কানাডা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চল (১৯৯১), ট্রিলিয়াম বই পুরস্কার (১৯৯১), ওরন্টোর মেডেল অর্ডার (১৯৯৪), কানাডা-অস্ট্রেলিয়া সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৪, কানাডিয়ান বুক্সেলার্স অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য ইয়ার পুরস্কার, ১৯৯৫, গিলার প্রাইজ, ১৯৯৮, ২০০৪, ডি। লিট. : ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৬), সাহিত্য পদক, ন্যাশনাল আর্টস ক্লাব নিউইয়র্ক (২০০৫), লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ভ্যানকুভার পাবলিক লাইব্রেরি (২০০৫)।