ইন্টারনেট আসক্তি শিশু ও নারীদের

ইন্টারনেট আসক্তির ব্যাপারটা প্রথমবারের মতো মনোবিজ্ঞানীদের নজরে আসে ১৯৯৭ সালে ঈরহপরহহধঃর ঈধংব-এর মাধ্যমে। ঝধহফৎধ ঐধপশবৎ নামে একজন মহিলা তার তিনটি শিশু সন্তানকে অবহেলা করে ও নিজর্ন কামরায় আবদ্ধ রেখে দৈনিক ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ইন্টারনেটে অতিবাহিত করতেন। এই মহিলাকে পযের্বক্ষণ করে মনোবিজ্ঞানীদের অনেকেই সম্মত হলেন যে সিগারেট, মদ ও ড্রাগের মতো ইন্টারনেটেরও পড়সঢ়ঁষংরাব ক্ষমতা আছে অথার্ৎ যা একটি পযাের্য় এসে মানুষ ইচ্ছার বিরুদ্ধেও ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। সেই ধারণা থেকেই ‘ওহঃবৎহবঃ অফফরপঃরড়হ’ কথাটির সৃষ্টি...

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সোরিয়া রওনক
ইন্টারনেটের পড়সঢ়ঁষংরাব ক্ষমতা আছে যা একপযাের্য় মানুষ নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও ব্যবহার করতে বাধ্য হয় প্রতীকী ছবি
সারা পৃথিবী এখন সাইবার জগতে সক্রিয় এবং উন্নতি করছে। দ্রæতগামী হচ্ছে যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদান এবং সেবা প্রদানের সাবির্ক ব্যবস্থা। প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে কে কত বেশি উন্নতমানের সেবা অনলাইনে দিতে পারে। এ রকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম পিছিয়ে থাকুক- এটা কারোই কাম্য নয়। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বতর্মান সরকার ‘রূপকল্প ২০২১ : ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করার জন্য ষষ্ঠ শ্রেণি হতে দ্বাদশ শ্রেণি পযর্ন্ত তথ্য প্রযুক্তির বিষয়কে আবশ্যকীয় বিষয় হিসেবে অন্তভুর্ক্ত করার নিদের্শ দিয়েছেন এবং এখন তা চালু আছে। এ তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষায় ইন্টারনেটের ব্যবহার শিক্ষণ ও প্রয়োগ তাই বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এটিকে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখতে হবে। আর আমাদের শিশুদেরও সে স্বাভাবিক বিকাশের সুযোগ দিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিতে হবে। আজ থেকে দশ-বারো বছর আগে কম্পিউটার নিয়ে যারা বেশির ভাগ সময় কাটাতেন তারা ছিলেন প্রধানত তথ্যপ্রযুক্তির লোক এবং সেই সময়টুকুর জন্য তাদেরকে বেতন-ভাতা দেওয়া হতো। ইন্টারনেটের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে আজ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ কম্পিউটার নিয়ে বেশির ভাগ সময় কাটায় এবং সেই সময়টুকুর জন্য নিজেরাই মূল্য পরিশোধ করে। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট আজ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সংবাদ, তথ্য, যোগাযোগ, কেনাকাটা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সোশ্যাল নেটওয়াকর্, বিনোদন ইত্যাদি অনেক কিছুর জন্য মানুষ এখন ইন্টারনেটের ওপর নিভর্রশীল। কিন্তু কেউ যদি ইন্টারনেটের ওপর অতিমাত্রায় নিভর্রশীল হয়ে পড়ে, ইন্টারনেটের কারণে যদি কারো স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘিœত হয় এবং সিগারেট, মদ ও ড্রাগের মতো ইন্টারনেটের প্রতি যদি কেউ আসক্ত হয়ে পড়ে তখনই সমস্যা। এক কথায় ইন্টারনেট আসক্তিকে রোধ করা বেশ কঠিন ব্যাপার। ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে মানুষের যে ব্যাপক কৌত‚হল, সাবর্ক্ষণিক চিন্তা, অদমনীয় ইচ্ছা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং অসংযত আচরণবোধ এসব কিছুকেই ইন্টারনেট আসক্তি বলা যায়। ইন্টারনেট আসক্তির ব্যাপারটা প্রথমবারের মতো মনোবিজ্ঞানীদের নজরে আসে ১৯৯৭ সালে ঈরহপরহহধঃর ঈধংব-এর মাধ্যমে। ঝধহফৎধ ঐধপশবৎ নামে একজন মহিলা তার তিনটি শিশু সন্তানকে অবহেলা করে ও নিজর্ন কামরায় আবদ্ধ রেখে দৈনিক ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ইন্টারনেটে অতিবাহিত করতেন। এই মহিলাকে পযের্বক্ষণ করে মনোবিজ্ঞানীদের অনেকেই সম্মত হলেন যে সিগারেট, মদ ও ড্রাগের মতো ইন্টারনেটেরও পড়সঢ়ঁষংরাব ক্ষমতা আছে অথার্ৎ যা একটি পযাের্য় এসে মানুষ ইচ্ছার বিরুদ্ধেও ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। সেই ধারণা থেকেই ‘ওহঃবৎহবঃ অফফরপঃরড়হ’ কথাটির সৃষ্টি। ইন্টারনেটে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা কাদের বেশিÑ ১. যারা আগে থেকেই অন্য কোনো কারণে উদ্বেগে রয়েছেন। ২. যারা বিষণœতায় বা একাকিত্বে ভুগছেন। ৩. যারা ড্রাগ, অ্যালকোহল, জুয়াখেলা এবং বিকৃত মানসিকতায় আসক্ত। ৪. টিনএজার, যারা রোমাঞ্চপ্রিয় ও সব কিছুতে অতি উৎসাহী। ৫. শারীরিকভাবে যারা অলস ও ঘরকুনো। ৬ যারা কোনো কিছুকেই হালকাভাবে নিতে পারে না। ৭ বাস্তবজীবনে যাদের বন্ধু-বান্ধব খুবই কম ও বিপদ-আপদে সাহায্য করার মতো কেউ নেই। ৮. যারা অসামাজিক, লাজুক এবং মানুষের সঙ্গে মিশতে ভয় পায়। ৯. যারা বাস্তবজীবনের সমস্যাকে এড়িয়ে চলতে চায়। প্রতিকার : ১. চিত্তবিনোদনের অন্য উপায়গুলোর মাঝে নিজেকে পরিব্যাপ্ত করা। ২. পরিবারের সঙ্গে দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে আরও বেশি সময় দেয়া। ৩. নিজের প্রকৃত দুঃখ-কষ্ট-সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা এবং তা দূর করার জন্য সচেষ্ট হওয়া। ৪. নিজের সমস্যাগুলো নিজের মাঝে গুটিয়ে না রেখে আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুবান্ধবের সাথে আলোচনা করা। ৫. ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে নিজের সহায়ক কাজেই একমাত্র ব্যবহার করা, নিভর্রতা যেন পারিবারিক বা সামাজিক গÐিকে অতিক্রম না করে। ৬. ড্রাগ, অ্যালকোহল বা অন্য কোনো মানসিক সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা করা। ৭. বাস্তবজীবনে বেশি মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পকর্ গড়ে তোলা। তখন ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পকর্ কম থাকলেও চলবে। ৮. অসামাজিক, লাজুক বা ঘরকুনো স্বভাব থাকলে তা পরিবতর্ন করা। ৯. প্রয়োজনে মানসিক বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হয়ে চিকিৎসা নেয়া। ১০. ধাপে ধাপে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় ও গুরুত্ব কমিয়ে আনা। বাচ্চাদের খাওয়াতে গিয়ে কিংবা বিভিন্ন ধরনের রাইমস শেখাতে গিয়ে বাবা-মাও তাদের সামনে মোবাইল বা কম্পিউটারে মেলে ধরেন গেমস বা ভিডিও। কখনো নিজেদের ব্যস্ততার কারণেও ছেলেমেয়েদের ব্যস্ত রাখেন এভাবে। শিশুদের সামাজিকতার বিকাশের ক্ষেত্রেও বিষয়টি বাধা হয়ে দঁাড়াচ্ছে। যা চিন্তিত করছে অভিভাবকদের। স্কুল, কোচিং শেষে পড়াশোনার চাপ সামলে বাইরে খেলতে যেতে আগ্রহ পাচ্ছে না তারা। তাদের আবার কোনো কোনো শিশু শিক্ষাথীর্ জানালো তারা বাইরে খেলতে যেতে চাইলেও সে সুযোগ নেই। শারীরিক ক্রীড়া নৈপুণ্যের প্রতি আগ্রহী করা, স্কুলের খেলার মাঠ না থাকলে অন্য মাঠ ব্যবহার করা, বইয়ের প্রতি আগ্রহী করা, সাংস্কৃতিক চচার্ ও বিকাশের ব্যবস্থা করার কথা বলেন তিনি। তবে ব্যতিক্রম যেসব শিশু আছে তাদের ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, অভিবাবকরা নিজেদের ব্যস্ততার কারণে বাইরে নিয়ে যেতে পারেন না। আবার নিরাপত্তার কথা ভেবে একা ছাড়তেও আগ্রহী হন না। একটানা দীঘর্সময় মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে একদিকে চোখের ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে মানসিক বিভিন্ন সমস্যা। শিশুদের কল্পনাশক্তি, চিন্তা শক্তিও কমে যাচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ইন্টারনেট হলো বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত অসংখ্য নেটওয়াকের্র সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশাল নেটওয়াকর্ ব্যবস্থা। এ নেটওয়াকের্র মাধ্যমে বিশ্বের এক বিশাল তথ্য ভাÐারে অনলাইনে সহজেই প্রবেশ করা যায়। এ প্রবেশ সুবিধা অবারিত। যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের এটি একটি অন্যতম মাধ্যম। এ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে তথ্য সঞ্চালন ও আহরণ করা যায়। সবার চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে অনলাইনে অজানা বিস্ময় কিংবা অদেখা নতুন জগৎ। শুরুতে শুধু তথ্যের আদান-প্রদানের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার হলেও যতই দিন যাচ্ছে, ততই এর ব্যবহারের বহুমুখিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জন্য ইন্টারনেট এখন উন্মুক্ত। এর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারও নতুন মাত্রা পাচ্ছে। সুতরাং তথ্যের আদান-প্রদান, তথ্য আহরণ, শিক্ষাক্ষেত্রে জ্ঞানাজর্ন, অনলাইন মিডিয়া, বিনোদন ও বাণিজ্যিক কাজে সবর্ত্র ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের শিশু-কিশোরদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ নয়, বরং নিরাপদ করার জন্য কিছু সতকর্তামূলক ও সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তারা কি ধরনের সাইটে প্রবেশ করবে এবং কি ধরনের সাইটে প্রবেশ করবে নাÑ সে বিষয়ে কাউন্সেলিং করতে হবে। আজকাল অনেক শিক্ষণীয় বিষয় ইন্টারনেট ব্রাউজ করেই ছেলেমেয়েরা শিখছে- যা তাদের পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট। শিশুদের জন্য উপযুক্ত কিছু কনটেন্ট তৈরি করে তাদের বিনোদনের ক্ষেত্র বা সুযোগও করে দিতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের জন্য কনটেন্ট ফিল্টার করা দরকার।