দেশে মহিলাদের কাজী পদে নিয়োগ

আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন ফুলবাড়ীর আয়শা সিদ্দিকা

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

মো. রজব আলী
আয়েশা সিদ্দিকা
শুধু নিজের জন্য নয়, পুরুষদের পাশাপাশি সব পেশার মতো কাজী (নিকাহ রেজিস্টার) পদে নারীদের নিয়োগের লক্ষ্যে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন দিনজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী গ্রামের হোমিও চিকিৎসক আয়েশা সিদ্দিকা। তিনি নিজে কাজী নিয়োগের জন্য সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও শুধু নারী বলে তাকে কাজী (নিকাহ রেজিস্টার) পদে নিয়োগ দিতে অস্বীকার করে আইন মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি ২০১৪ সাল থেকে আইনি লড়াই করে আসছেন। ২০২০ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে হাইকোর্ট তার রিট পিটিশন খারিজ করে দেওয়ার পরেও তিনি দমে যাননি। ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত লড়ে যাবেন বলে তিনি জানান। আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, এ লড়াই তার একার নয়, সারাদেশের আলেম নারীরাও যাতে কাজী (নিকাহ রেজিস্টার) পদে নিয়োগ পায়, সেই কারণে তিনি এ লড়াই করছেন। আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলে শিক্ষিত নারীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সামাজিক লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেও জানান। আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ২০১২ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনি কাজী (নিকাহ রেজিস্টার) পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। ধাপে ধাপে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, স্থানীয় নিয়োগ পরীক্ষা বোর্ড তাকে কাজী (নিকাহ রেজিস্টার) পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে প্যানেল পাঠায়। এরপর ২০১৪ সালের ১৬ জুন আইন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে মহিলাদের নিকাহ রেজিস্টার পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয় বলে মত দিয়ে নিয়োগ বোর্ডের দেওয়া প্যানেল বাতিল করে দেয়। ওই মত তিনি মানতে পারেননি। এরপর তিনি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ওই বছর হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ২০২০ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে হাইকোর্ট তার রিট পিটিশন খারিজ করে দেন। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি রায়ের পূর্ণাঙ্গ আদেশ হাতে নিয়ে তিনি হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ২০১৪ সালে নিকাহ রেজিস্টার পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হলে তিনিই বাংলাদেশের প্রথম মহিলা নিকাহ রেজিস্টার হতেন। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করে তাকে নিকাহ রেজিস্টার পদের নিয়োগ বাতিল করেছেন। যেখানে রাষ্ট্রের বড় বড় দায়িত্ব নারীরা সুনামের সঙ্গে পালন করছেন, সেখানে নিকাহ রেজিস্টার পদে নারী কেন দায়িত্ব পালন করতে পারবে না? আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, নিকাহ রেজিস্টাররা কোনো ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করে না, কেবল নিকাহ রেজিস্ট্রি করেন। রেজিস্ট্রার বইতে বিয়ে পড়ানোর জন্য একজন ইমামের পৃথক কলাম রয়েছে। যে ইমাম বিয়ে পড়াবেন তার নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ থাকবে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ধর্মীয় কারণে যদি একজন মহিলা নিকাহ রেজিস্টার না হতে পারে, তাহলে ধর্মের কারণে পুরুষদেরও অনেক সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, নিকাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হলে নিকাহ রেজিস্টারকে বর ও কনের বয়স ও শারীরিক অবস্থান নির্ণয় করতে হয়। একজন পুরুষ নিকাহ রেজিস্টার একজন নববধূর সামনে গিয়ে তার বয়সসহ শারীরিক অবস্থান নির্ণয় করতে গেলে ইসলামি শরিয়তে ওই নববধূর পর্দার খেলাপ হয়। সেটা যদি ধর্ম মানতে পারে তাহলে মহিলা মানবে না কেন? এদিকে আয়েশা সিদ্দিকাকে আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা দিয়ে আসছেন তার স্বামী হোমিও চিকিৎসক সোলায়মান মন্ডল। সোলায়মান মন্ডল বলেন, যতদিন পর্যন্ত তার স্ত্রী এ লড়াই চালিয়ে যাবেন ততদিন পর্যন্ত তিনিও তার স্ত্রীর সঙ্গে লড়াই করবেন। তিনি বলেন, শুধু আইনে নয়, নারীদের এ অধিকার আদায়ে আইনের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনও গড়ে ওঠা উচিত এজন্য তিনি সমাজের সচেতন মহলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, তার পিতা মরহুম আবুল কালাম আজাদ একজন হোমিও চিকিৎসক। তার পিতা-মাতার তিন সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। পিতার হাত ধরে তিনি হোমিও চিকিৎসায় পা রাখেন। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে দাখিল (এসএসসি) পাস করার পর বিয়ে হওয়ার পরও তিনি লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। ফুলবাড়ী দারুসুন্নাহ সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে আলিম ও ফাজিল পাস করেছেন। একই সঙ্গে হোমিও কলেজে লেখাপড়া করেছেন। ৩৯ বছর বয়সি আয়েশা সিদ্দিকা সংসার জীবনে দুই মেয়ে ও এক ছেলের মা। তার বড় মেয়ে মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে অধ্যায়ন করছেন, ছোট মেয়ে সৈয়দপুর পাবলিক কলেজে দশম শ্রেণিতে ও ছেলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। আয়েশা সিদ্দিকার স্বামী হোমিও চিকিৎসক সোলায়মান মন্ডল বলেন, বিয়ের পর থেকে তিনি ও তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা হোমিও চিকিৎসক হিসেবে চিকিৎসাসেবা করে আসছেন।