সময়ের প্রতিচ্ছবি

ডরিস লেসিং

প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০২১, ০০:০০

নন্দিনী ডেস্ক
ডরিস লেসিং একজন ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, কবি, নাট্যকার, জীবনী লেখক এবং ছোট গল্পকার। তিনি ২০০৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। সাহিত্যে প্রবীণতম হিসেবে তিনি আটাশি বছর বয়সে এই পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯১৯ সালের ২২ অক্টোবর পারসিয়ায় (বর্তমান ইরান) জন্মগ্রহণ করেন ডরিস মে টেইলার। বাবা-মা দুজনই ব্রিটিশ। বাবা ছিলেন ইমপেরিয়াল ব্যাংক অব পারসিয়ার কেরানী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পঙ্গু হন ডরিসের বাবা। মা ছিলেন নার্স। মায়ের মুখের ঘুমপাড়ানি গল্প, বাবার মুখে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তিক্ত-অভিজ্ঞতার গল্প শুনতে শুনতে কৈশোর কেটেছে ডরিসের। শৈশবেই তার পরিচয় ঘটে ডিকেন্স, স্কট, স্টিভেনশন ও কিপলিংয়ের মতো সাহিত্যিকদের রচনার সঙ্গে। পাশাপাশি তিনি পাঠ করেন ডিএইচ লরেন্স, তলস্তয় ও দস্তয়েভস্কি। যা তার চিন্তা ও কল্পনাকে সুবিন্যস্ত করে। ১৯৪৯ সালে তার প্রথম উপন্যাস 'দ্য গ্রাস ইজ সিংগিং' প্রকাশের মধ্যদিয়ে তার পেশাদার লেখকজীবনের শুরু। লেসিংয়ের ফিকশন গভীরভাবে আত্মজীবনীমূলক যার অনেকটাজুড়েই আছে আফ্রিকার অভিজ্ঞতা। তার লেখার মধ্যে আছে তার নিজের রাজনীতি-সমাজ-সংশ্লিষ্টতা, নানামুখী সংস্কৃতির বিরোধ, বর্ণবাদকেন্দ্রিক অসাম্যের অবিচার, ব্যক্তির নিজের মধ্যে উপস্থিত বিপরীতমুখী উপাদানগুলোর বিরোধ, ব্যক্তিগত মূল্যবোধ এবং সামষ্টিকতার বিরোধ। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে আফ্রিকার প্রেক্ষাপটে রচিত গল্প-উপন্যাসগুলোতে আছে সাম্রাজ্যবাদের কবলে পড়ে কালোদের সব হারানোর কান্না, দক্ষিণ আফ্রিকায় হোয়াইট কালচারের অসারতা। স্পষ্টভাষণের কারণেই দক্ষিণ রোডেশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত হন লেসিং। ১৯৫১-১৯৫৯ সালে রচিত শিক্ষামূলক সিরিজ উপন্যাস 'চিলড্রেন অব ভায়োলেন্স' লেখার পর অন্য এক ডরিস লেসিং বেরিয়ে আসেন। ১৯৬২-তে এসে তিনি লেখেন 'দ্য গোল্ডেন নোটবুক'-এর মতো অসমসাহসী বর্ণনাত্মক নিরীক্ষাধর্মী বয়ান, যেখানে একজন সমসাময়িক সাহিত্যিকের বিভিন্নমুখী সত্তা ফুটে ওঠে অবিশ্বাস্য গভীরতা এবং ব্যাপ্তি নিয়ে। ডরিস লেসিংয়ের অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আছে 'দ্য গুড টেরোরিস্ট (১৯৮৫)', 'দ্য ফিফথ চাইল্ড (১৯৮৮)'। জেন সমারস ছদ্মনামে তিনি দুটো উপন্যাস প্রকাশ করেন : 'দ্য ডায়েরি অব আ গুড নেইবার (১৯৮৩)' এবং 'ইফ দ্য ওল্ড কুড (১৯৮৪)'। ১৯৯৫ সালের জুনে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অনারারি ডিগ্রি গ্রহণ করেন ডরিস এবং একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণ করেন। ১৯৫৬ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর সেটাই প্রথম ভ্রমণ। চলিস্নশ বছর আগে যেসব বিষয়ের জন্য তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, সেবার সেসব বিষয়ের ওপরই লেখক হিসেবে তাকে স্বাগত জানানো হয়। ওদিকে দীর্ঘ তিরিশ বছর আউট অব প্রিন্ট থাকার পর ১৯৯৬ সালে হার্পারকলিন্স থেকে পুনঃপ্রকাশিত হয় তার 'গোয়িং হোম' এবং 'ইন পারসু্যট অব ইংলিশ'। অসাধারণ বই দুটিতে পাওয়া যায় তার ব্যক্তিত্ব, জীবনদর্শনের গভীর অন্তর্দৃষ্টির সন্ধান। গল্প, উপন্যাস ছাড়াও ডরিস লেসিং কবিতা, নাটক, এমনকি সায়েন্স ফিকশনও লিখেছেন। দীর্ঘ সাত বছরের ব্যবধানে, ১৯৯৬ সালে, প্রকাশিত হলো তার নতুন উপন্যাস 'লাভ এগেইন'। এর আগে তার আত্মজীবনী প্রচারের জন্য বিশ্বভ্রমণের তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্য এই বইটির কোনো প্রচারে বের না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ডরিস। অথচ এই বইয়ের জন্য নোবেল সাহিত্য এবং ব্রিটেনের উইনটারস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড ফর ফিকশনের জন্য মনোনীত হন। তার আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খন্ড 'ওয়াকিং ইন দ্য শেড' প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে এবং সেবারই ন্যাশনাল বুক ক্রিটিকস সার্কল অ্যাওয়ার্ডের জীবনী/আত্মজীবনী বিভাগে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯, নতুন সহস্রাব্দ শুরুর প্রাক্কালে যুক্তরাজ্যের অনার্স লিস্টে 'কম্পেনিয়ন অব অনার' হিসাবে নিযুক্ত হন। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ওই পুরস্কার প্রদান করেন। ২০০৫ সালে প্রথম ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজের শর্টলিস্টে ছিলেন। ২০০৭ সালের ডরিস লেসিং নোবেল সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। ডরিস মোটেও উচ্ছ্বসিত নন এ পুরস্কারে, যেমনটি হননি ২০০৩ সালের নোবেল সাহিত্য বিজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার জেএম কোয়েৎজিও।