বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উ দ্যো ক্তা র গ ল্প ক থা

লিয়া আহমেদ
  ০১ মার্চ ২০২১, ০০:০০
উদ্যোক্তা লিয়া আহমেদ

আমি মূলত একজন সংস্কৃতিকর্মী। একটা সময় পর্যন্ত সংসারের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নিয়েই কাটত আমার অধিকাংশ সময়। করোনাকালে সবকিছু যখন স্থবির, তখন হঠাৎই একদিন শখের বশে ফেসবুকে নিজের সন্তানের নামে 'রাজ্যের সম্ভার' একটি পেজ খুলি।

ছোটবেলা থেকেই রান্না করা আমার শখ। নতুন ধরনের খাবার তৈরি করতে যেমন ভালো লাগে, তেমনি অন্যদের খাওয়াতেও তৃপ্তি পাই। অনেকের কাছে নিজের রান্নার প্রশংসা শুনেই রাজ্যের সম্ভারের পরিকল্পনা মাথায় আসে। রান্না তো আমাদের জীবনেরই একটা অংশ, সেটা যদি মুখরোচক ও দৃষ্টিনন্দন করে কর্মসংস্থানের পন্থা করা যায় তাহলে ক্ষতি কী। আমাদের ঘরে ঘরে অনেকেই আছেন যারা রান্নায় পারদর্শী। তাদের এই শিল্পগুণ সারাজীবন ঘরের কোণেই পড়ে থাকে, কখনোই স্বীকৃতি পায় না। একবার সাহস করে তারাও এগিয়ে আসুন, ধীরে ধীরে অবশ্যই একদিন আমাদের খাদ্যাভ্যাস বদলে যাবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করে আমরা স্বাস্থ্যকর ও মুখরোচক খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠব।

শুরুতে শুধু পরিচিতদের মধ্যে ঘরে বানানো খাবার সরবরাহের চিন্তা থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন স্থান থেকে মেয়েদের শাড়ি, থ্রি-পিস, দেশীয় গহনাসহ বিভিন্ন জিনিসের অর্ডার আসতে থাকে। আমিও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে মনোনিবেশ করতে থাকি ব্যবসায়।

আমার স্বপ্ন দেশীয় ঐতিহ্য ধরে রেখে বাঙালি নারীরা নিজেদের সৌন্দর্য তুলে ধরুক, যা ব্যবহারেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা যায়। যেমন- আমাদের দেশের তাঁতিদের হাতেবোনা জামদানি-মণিপুরি শাড়ি, প্রত্যন্ত অঞ্চলের গৃহিণীদের হাতে তৈরি সুই-সুতায় কাজ করা

পোশাক। পাশাপাশি হ্যান্ডপেইন্টসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়েও কাজ করছি। উৎসব-পার্বণ এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্যও আমার পণ্যগুলো অনেকে সংগ্রহ করে থাকেন।

প্রাথমিকভাবে খুব বেশি কিছু করার চিন্তা ছিল না। কিন্তু সময় গড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন দিক থেকে সবার সাড়া পাওয়ায় ধীরে ধীরে আগ্রহটাও বাড়তে থাকে। বর্তমানে খাবারের মধ্যে বিভিন্ন স্বাদের পিঠা, স্ন্যাকস, পুডিং, পায়েস, বিরিয়ানি যা ব্যক্তিগত বা নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে সরবরাহ করে থাকি। এছাড়া নারীদের বিভিন্ন পোশাক ও গহনা নিয়ে কাজ করছি।

অনেকেরই ধারণা নিজ উদ্যোগে কিছু শুরু করতে হলে বড় অঙ্কের পুঁজি নিয়ে নামতে হয়। শুনতে অনেকটা অবিশ্বাস্য হলেও একেবারেই শূন্য হাতে শুরু হয়েছিল রাজ্যের সম্ভারের পথচলা। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমি বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি। কারণ তাদের সহযোগিতা আর অনুপ্রেরণা ছাড়া এটি সম্ভব হতো না। তবে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পুঁজির প্রয়োজন। আর সেই সঙ্কটকে সঙ্গী করেই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে রাজ্যের সম্ভার। প্রয়োজনীয় পুঁজির সংস্থান করতে পারলে রাজ্যের সম্ভারকে অনলাইনের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ইচ্ছে আছে। যেখানে আরও নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যারা নিজেদের মেধা ও সৃজনশীলতার মধ্যে দিয়ে নতুন নতুন পণ্য উপহার দিতে পারবে আমার ক্রেতাদের।

আমি চেষ্টা করি আমার পণ্যগুলো যেন আরাম ও রুচিশীলতার পাশাপাশি সব শ্রেণির মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে। সেই সঙ্গে পণ্যের গুণগত মানও ধরে রাখতে সচেষ্ট থাকি। আমার এখানে চাইলে ক্রেতা তার পছন্দ অনুযায়ী পণ্য অর্ডার দিয়ে বানিয়েও নিতে পারেন। এখানে ক্রেতা তার পছন্দের কাপড়, রং বা ডিজাইন অনুযায়ী পোশাক ও শাড়ি করিয়ে নিতে পারেন। আমরা অনেকেই ভাবী জামদানি শাড়ির দাম বরাবরই বেশি। তবে রাজ্যের সম্ভারের প্রচেষ্টা থাকে পণ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে স্বল্পমূল্য থেকে শুরু করে ভারী কাজ করা দামি জামদানিও সরবরাহ করা। এর পাশাপাশি কাতান, সুতি, হাফসিল্ক, কাটওয়ার্ক, হ্যান্ডপেইন্টসহ নানা ধরনের পণ্য নিয়েও কাজ করছি। ইচ্ছে আছে সামনে আরও নতুন কিছু পণ্য যুক্ত করার। ঘরের প্রয়োজনীয় ও গৃহসজ্জার সামগ্রী এবং দেশীয় গহনার পাশাপাশি মেটালের জুয়েলারি দ্রম্নতই রাজ্যের সম্ভারে যুক্ত হবে। আসছে ঈদে আমার ক্রেতাদের জন্য নতুন কিছু নিয়ে আসার প্রত্যাশা করি।

যারা অনলাইনে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এটাই বলতে চাই, প্রথমে আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করুন। আপনার প্রথম ক্রেতা তারাই হবেন এবং ব্যবসার প্রচারেও সহযোগিতা করবে।

আমার ছোট্ট রাজ্য, সংসার, নাচ ও সংগঠনে কাজের পাশাপাশি নতুন স্বপ্ন রাজ্যের সম্ভারকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। অল্পদিনেই সবার বেশ ভালোই সাড়া পেয়েছি। আবারও কৃতজ্ঞতা যারা আমার পাশে আছেন। এখন রাজ্যের সম্ভার নিয়েই অনেক দূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। আমি মনে করি, সবার ঐকান্তিক সহযোগিতা আর ভালোবাসা পেলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।

যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স

রাজ্যের-সম্ভার

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে