নারীর নিজের প্রতি যা করণীয়

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

সুমাইয়া হোসাইন
রোগব্যাধির কারণ, লক্ষণ, করণীয় নিয়ে আমরা প্রায়ই পত্র-পত্রিকার স্বাস্থ্যপাতা বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অথবা বইপত্রে নানা ধরনের লেখা পড়ি। এসব লেখা আমাদের ভেতর কম-বেশি প্রতিক্রিয়া বা সচেতনতার সৃষ্টি করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের নারীদের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, বিশেষ করে গ্রামের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য। এসব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আমাদের বতর্মান নারীদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করে। এখন প্রশ্ন হলোÑ এই উদ্যোগগুলো যে নারীদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গ্রহণ করা হচ্ছে বা হয়েছে এই বিষয়টি নারীরা নিজেরা কতটুকু উপলব্ধি করতে পারে বা পারছে? অথবা নারীরা এগুলো নিজেদের ভেতর কতটুকু ধারণ করতে পারছে? একজন মানুষের জীবনে শিক্ষার প্রভাব কতটুকু জরুরি সেটা আমরা তার স্বাস্থ্যগত দিক চিন্তা করলেও উপলব্ধি করতে পারি। যে কোন বিষয় থেকে ইতিবাচক ফলাফল গ্রহণ করতে চাইলে প্রথমে বিষয়টি কী সেটা বুঝবে হবে, বিষয় সম্পকের্ পযার্প্ত তথ্য জানতে হবে, জ্ঞানাজর্ন করতে হবে এবং সবের্শষে তা নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে। নইলে সম্পূণর্ উদ্দেশ্যই বৃথা হয়ে যাবে। এখন, একজন নারী যদি শিক্ষিত না হন, তিনি জানতেই পারবেন না তার নিজের প্রতি নিজের করণীয় কী। একজন মানুষ নারী হোক কিংবা পুরুষ, তিনি নিজে যদি সুস্থ, স্বাভাবিক, উৎফুল্ল না থাকেন, তাহলে তিনি তার চারপাশের মানুষগুলোকেও ভালো রাখার ক্ষমতা দিন দিন হারিয়ে ফেলেন। একটা সময় পর এসবের নেতিবাচক প্রভাব তার কিংবা তার পরিবারের ওপর মারাত্মক হতে পারে। কাজেই নিজের প্রতি নিজের করণীয় বা কতর্ব্যগুলো কী সেসব জানা সবার আগে জরুরি। শহুরে নারীদের চেয়ে গ্রামের নারীদের সুবিধার দিক হলোÑ গ্রামের নারীরা একটু সচেতন হলেই নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির জায়গাটুকু সহজেই পূরণ করতে পারেন। গ্রামে প্রায় বাড়িতেই পতিত জমি, উঠান বা আঙিনা থাকে। নারীরা চাইলেই সেখানে নানা ধরনের শাক-সবজি বা ফলের চাষ করতে পারেন। চাষ করতে পারেন নানা ধরনের ঔষধি গাছও। অথবা পালন করতে পারেন হঁাস-মুরগি-গরু-ছাগল। যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য শুধু উপকারিই নয়, প্রয়োজনীয়ও বটে। অথচ অনুতাপের বিষয় হলো- যখন আপনি একজন নারীর প্রতিদিনের কাজকমর্ খেয়াল করবেন, সেখানে পরিবারের সমস্ত সদস্যদের জন্য অগণিত কাজের বণর্না পাবেন। কিন্তু এমন কাজের হিসাব খুব কমই মিলবে, যেখানে নারীরা নিজেদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে গুরুত্ব সহকারে করে থাকেন। এমনকি খাবার গ্রহণের বিষয়েও তাদের ভেতর পযার্প্ত অনীহা বা অসচেতনতা লক্ষ্য করা যায়। এগুলো কি নারীদের নিজের প্রতি নিজের অবহেলা নয়? প্রতিটি নারীই হতে চান একজন ভালো মা, ভালো স্ত্রী, ভালো বোন, সবোর্পরি একজন ভালো মানুষ। কিন্তু এসবের কোনটিই সম্ভব হয় না, যখন একজন নারী দিনের পর দিন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকেন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন নিজেকে এবং পরিবারের সদস্যের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালনে ব্যথর্ হন। কেবল আবেগ, অনুভবের জায়গা থেকে জীবন সঠিক গন্তব্যে কখনোই পেঁৗছাতে পারে না। জীবনকে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূণর্ রেখে পরিচালনার জন্য আবেগ, অনুভূতির কাযর্কর অবস্থার সৃষ্টি করা জরুরি এবং এসব ব্যক্তি মানুষের নিজের ওপর বতার্য়। তার জন্য ব্যক্তিকে আগে নিজে ভালো থাকতে হবে, নিজের প্রতি নিজের দায়িত্বগুলো সচেতনতার সাথে পালন করতে হবে। যা পরোক্ষভাবে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক হয়ে উঠবে। এভাবেই নারীদের সচেতন হয়ে উঠতে হবে শিক্ষার প্রতি, স্বাস্থ্যের প্রতি। ভালোবাসার জন্ম দিতে হবে ব্যক্তি মানুষটির প্রতি। এতে কিছু নিমর্ল সম্পকের্র মেয়াদ যেমন বাড়বে, বাড়বে জীবনের প্রতি সুন্দর মনোভাব, ইতিবাচক চেতনা। বদলে যাবে জীবন, সামাজিকতা, পরিবেশ। পূণর্ হবে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য, আমাদের স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা।