দীপ্ত পায়ে এগিয়ে চলা

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

লিপি সরকার
লায়লা খানম
লায়লা খানম। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। একাধারে শিল্পী, লেখিকা, উপস্থাপিকা, আবৃতি এবং বিসিএস ক্যাডার। সব মিলিয়ে তিনি একজন সফল নারী। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই নারী টাঙ্গাইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা লুৎফর রহমান খান ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তার বাবা যে বছর মারা যান, সে বছর লায়লা খানম এসএসসি পাস করেন। ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে হতাশায় পড়ে যান তিনি। মা নুরজাহান খানমের উৎসাহ আর নিজে টিউশনি করে লেখাপড়া চালিয়ে যান। অতি কষ্টের মধ্য দিয়ে সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন তিনি। নিজের আগ্রহ, অধ্যবসায় আর মায়ের প্রেরণায় আজ এ পযর্ন্ত আসতে পেরেছেন বলে জানান লায়লা খানম। বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কুমুদিনী সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন। তারপর শিক্ষিকা হিসেবে কমর্জীবন শুরু করেন। ২৪তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার পদে ২০০৫ সালে ময়মনসিংহে যোগদান করেন। বদলি সূত্র লালমনিরহাট, জামালপুর, টাঙ্গাইলে কমর্রত ছিলেন। পদোন্নতি হয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার পদে কমর্রত ছিলেন। বতর্মানে তিনি নিজ জেলা টাঙ্গাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার পদে কমর্রত আছেন। একজন দায়িত্ববান শিক্ষা অফিসার হিসেবে তার সুপরিচিত আছে। এই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শিক্ষক, সংস্কৃতি অঙ্গনেও পরিচিত মুখ। নাচে গানে সমান পারদশীর্। রিনিক ঝিনিক নূপুরের ছন্দে আর সুরের মূছর্নায় মাতিয়ে রাখেন দশর্ক শ্রোতাদের। লায়লা খানম তার প্রতিভার সাফল্য হিসেবে ইতিমধ্যে হামদ-নাত-এ, কোরআন তেলাওয়াত, লালনগীতিতে জেলা, উপজেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় পযাের্য় খ্যাতি পেয়েছেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং কবিতা আবৃত্তিতে জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পযাের্য় পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং প্রায় শতাধিক সাটিির্ফকেট অজর্ন ও অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। লায়লা খানম ২০১৭ সালের জাতীয় পযাের্য় বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে নিবাির্চত হয়েছেন। এ ছাড়াও ২০১৮ সালে জয়িতা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৮ সালে জয়িতা পুরস্কার লাভ করেন। বিটিভির ‘গুঞ্জন’ অনুষ্ঠানে নিয়মিত গান করেন। এ ছাড়াও মিউজিক পরিচালক বাসুদেব ঘোষের ৫১২টি গান নিয়ে অ্যালবাম ‘সূযাের্লাকে শানিত প্রাণের গান’-এ তিনি দুটি গান করেন। লায়লা খানম বাংলাদেশ বেতার ২০১২ সাল থেকে নজরুলসংগীত ও ভাওয়াইয়া গানের তালিকাভুক্ত শিল্পী। বিটিভিতে ২০১৪ সালে থেকে আধুনিক গানের তালিকাভুক্ত শিল্পী। ২০১৫ সাল থেকে এনটিভিতে এক ঘণ্টাব্যাপী প্রোগ্রামে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে আছেন। ২০১৩ সালে তার একটি আধুনিক গানের অ্যালবাম বের হয়। অ্যালবামটির নাম ‘তুমি কেমন বাপের পোলা’। অ্যালবামটির বেশকিছু গান জনপ্রিয়তা পায়। লেখালেখিতে বেশ মনোযোগ তার। এর মধ্যে তার পঁাচটি প্রবন্ধের বই প্রকাশ হয়েছে। বইগুলোর নাম হলোÑ ভালো ছাত্র হওয়ার কৌশল, নোবেল বিজয়ীদের ইতিকথা, জাতীয় আন্তজাির্তক ব্যক্তিত্ব টাঙ্গাইল, বাংলাদেশের নন্দিত নারী ও বায়ান্ন থেকে একাত্তর। শিক্ষা, সমাজসেবা, দেশপ্রেম, জাতি গঠন ও নারী কল্যাণে নিজের অবদান সব সময় রাখতে চান এই প্রতিভাবান। ভবিষ্যতে তিনি নিজেকে অনেক বড় মাপের একজন খ্যাতিমান শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সাহিত্য, সংস্কৃতির জগতে আমাদের নারী প্রতিনিধিরা উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আছেন। এর মধ্যে লায়লা খানমও অন্যতম। লায়লা খানম তার পরিশ্রম করে মেধা দিয়ে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি করতে চান। এবং সাংস্কৃতির অঙ্গনে তার বিশেষ ভ‚মিকা রাখতে চান সব সময়। আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন এই প্রতিভাবান। লায়লা খানমের স্বামী খলিলুর রহমান রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে কমর্রত আছেন। তাদের সংসারে রয়েছে মেয়ে আদ্রিতা রহমান, লামমিন রহমান। আর ছেলে লামজিন রহমান। স্বামী-সন্তান নিয়ে এই বহুমুখী প্রতিভাবানের সুখের সংসার।