মায়ের স্বাস্থ্যে মেয়ের খেয়াল

আমাদের সমাজব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেকটাই ইতিবাচক অথের্ বদলে গেছে। নারীরা এখন শিক্ষিত হচ্ছে, কমের্ক্ষত্রে যোগ্যতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করছে। মেয়েরা সচেতন হচ্ছে মায়েদের নানামুখী প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে। কন্যাসন্তানদের এই সচেতনতা বৃদ্ধি সমাজকে ইতিবাচক অথের্ বদলে দিচ্ছে। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাইরের নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। ফলে পরিবারের নারী সদস্যদের সঙ্গে তাদের তেমন একটা সখ্য গড়ে ওঠে না...

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

মাসুমা রুমা
মেয়েরা সচেতন হচ্ছে মায়েদের নানামুখী প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ছবি : ইন্টারনেট
শৈশব থেকেই শুনে আসছি কন্যাসন্তানদের প্রতি মায়েদের অনেক দায়িত্ববোধ থাকে। কিন্তু মায়েদের প্রতিও যে কন্যাসন্তানের সমান দায়িত্ববোধ থাকা উচিত, সে বিষয়টি পযার্প্ত অথের্ উঠে আসেনি আমাদের সমাজব্যবস্থায়। বিষয়টি আমাকে প্রায়ই ভাবিয়ে তোলে। বিশেষ করে মায়েদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়াবলি নিয়ে আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কারণ আজকের কন্যা শিশুই একজন ভবিষ্যৎ মা! আমাদের পারিবারিক অবস্থান সূ² দৃষ্টিতে পযের্বক্ষণ করলে দেখা যায়Ñ মায়েরা তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে কতটা উদাসীন! পুষ্টিকর খাবারের সিংহভাগ তারা তুলে দেন সন্তান কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের মুখে। মায়েদের নিজেদের সঞ্চয় বলতে কেবল মানসিক প্রশান্তিটুকুই থাকে! অথচ সুস্থতার জন্য শরীর ও মন উভয়ের প্রফুল্লতার প্রয়োজন। আর শারীরিক প্রফুল্লতার জন্য পযার্প্ত পুষ্টি জরুরি, যা আমাদের মায়েরা প্রায়ই ভুলে যান কিংবা বুঝেও না বোঝার মনোভাব প্রকাশ করেন। আমাদের সমাজব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেকটাই ইতিবাচক অথের্ বদলে গেছে। নারীরা এখন শিক্ষিত হচ্ছে, কমের্ক্ষত্রে যোগ্যতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করছে। মেয়েরা সচেতন হচ্ছে মায়েদের নানামুখী প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে। কন্যাসন্তানদের এই সচেতনতা বৃদ্ধি সমাজকে ইতিবাচক অথের্ বদলে দিচ্ছে। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাইরের নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। ফলে পরিবারের নারী সদস্যদের সঙ্গে তাদের তেমন একটা সখ্য গড়ে ওঠে না। নারীরা মন খুলে পুরুষকে বলতে পারে না তাদের প্রয়োজনীয়তা ও সমস্যার কথা। তাই কন্যাসন্তানের সঙ্গে মায়েদের সুসম্পকর্ তৈরি হওয়া ভীষণ জরুরি। কারণ মা ও মেয়ের মধ্যে একটি সচেতনতামূলক সুসম্পকর্ই পারে উভয়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধি করতে। জাহানারা বেগম একজন মধ্যবয়স্ক গৃহিণী। তিনি শারীরিকভাবে প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী তিনি। মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে, ছেলে স্কুল শিক্ষাথীর্। তার স্বামী সাইফুল ইসলাম পেশাজনিত কারণে বছরের বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে জাহানারা বেগম তার কন্যাসন্তানের ওপর নিভর্রশীল, বাজার করা থেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া সব কাজেতে। মেয়ে সুমি মায়ের প্রতি বেশ সচেতন। মায়ের সুস্থতার জন্য কোনো কাজ করতেই তার বিরক্তবোধ হয় না। পড়াশোনার ব্যস্ততার মধ্যেও মায়ের জন্য ঠিকই সে সময় ম্যানেজ করে ফেলে। মাকে সুস্থ করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করে সুমি। মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া, সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো, সময়মতো ওষুধ খাওয়ানো, পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা, পযার্প্ত বিশ্রামের সুযোগ দেয়া, রান্নাবান্নায় সহযোগিতা করা কিংবা বিনোদনের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে সুমি যথেষ্ট সচেতনতার পরিচয় দেয়। মাঝে মাঝে মাকে নিয়ে ঘুরতে যায় প্রকৃতির কাছে। তাদের মা-মেয়ের মধ্যে বন্ধুর মতো সম্পকর্ বিদ্যমান। ফলে জাহানারা বেগম মাঝে মাঝে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও তিনি মানসিকভাবে সবসময় প্রফুল্ল থাকে। তার মনের জোর বৃদ্ধি পায় একথা ভেবে যে, তিনি একজন সচেতন কন্যাসন্তানের জননী। সুমির মতো একজন সচেতন কন্যাসন্তান প্রতিটি পরিবারের জন্য আবশ্যক, প্রয়োজন প্রতিটি মায়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য। আমাদের সমাজে এমন নারীর অভাব নেই যারা উচ্চ শিক্ষিত অথচ দায়িত্ববোধে অসচেতন। নারীদের নিজেদের কল্যাণের জন্য নিজেদের মনোভাব বদলাতে হবে। দায়িত্ব পালনে অলসতা ও কাপর্ণ্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নতুনভাবে নিজেদের তৈরি করতে হবে। কতর্ব্য পালনে সামথের্্যর পরিচয় দিতে হবে। তবেই ধীরে ধীরে এ সমাজে নারীর অবস্থান বদলে যাবে। পুরুষরা নারীদের প্রতিযোগী না ভেবে সহযোগী ভাবতে বাধ্য হবে। নারীদের ওপর দায়িত্ব অপর্ণ করে তারা দুশ্চিন্তামুক্ত থাকবে। এভাবে একদিন আমাদের বাংলাদেশের চিরচেনা অপ্রত্যাশিত চিত্রটাই বদলে যাবে। আমরা কোনো একদিন খুঁজে পাব আমাদের স্বপ্নের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে, যেখানে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ বলে কিছু থাকবে না।