সাফল্যের উপায় তৈরি করে প্রবল ইচ্ছাশক্তি

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২১, ০০:০০

রামপ্রসাদ দিপু, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
জীবনটা কুসুমাস্তীর্ণ কিংবা ফুল বিছানো নয়। জীবনে ফুলের সৌরভ পেতে হলে পরিশ্রম আর ঘাম ঝরিয়েই তা অর্জন করতে হয়। রান্নাঘরে আগুনের উত্তাপ সইতে না পারলে ভালো রাঁধুনী হওয়ার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকেই যায়। রসনা জাগিয়ে ভালো খাবারের আস্বাদ নেওয়া আর হয়ে ওঠে না। তাই যা কিছু সুন্দর আর যা কিছু শ্রেষ্ঠ তার পেছনে থাকে নিরবচ্ছিন্ন শ্রম আর অধ্যবসয়। গভীর আত্মবিশ্বাসে কথাগুলো বলছিলেন নারী উদ্যোক্তা অপ্সরা বুটিকসের স্বত্ব্বাধিকারী রীনা নাসরীন। সচ্ছল বাবার ঘরে লালিত-পালিত হলেও নিজে কিছু করার ইচ্ছা থেকে গড়ে তুলেছিলেন বিউটি পার্লার। সেটি বেশ জমেও উঠেছিল। কিন্তু বিয়ের পর সেটিকে আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। চলে গিয়েছিলেন স্বামীর সংসারে। কিন্তু তার ইচ্ছার মৃতু্য হয়নি। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা সদরের পাশের বাসায় শুরু করেন হস্তশিল্প বস্নক বুটিকের কাজ। নিজস্ব সুন্দর ডিজাইনে থ্রি-পিস ও শাড়ির কাজ করে দৃষ্টি কাড়েন ক্রেতা সাধারণের। বাসায় বসেই তা বিপণন করেন তিনি। মাত্র দশ হাজার টাকা পুঁজিতে শুরু করলেও এখন তার মূলধন তিন লাখ টাকার উপরে। ব্যবসার একটু বিস্তৃতি ঘটলে তিনি শো-রুম নেন মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের পাশে গঙ্গাধর পট্টিতে। দেবেন্দ্র কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীরাই তার শো-রুমের মূল ক্রেতা। শো-রুম পরিচালনায় সহায়তা করেন তার ছোট বোন সালমা আক্তার। জানতে চাইলে নাসরীন জানান, তার ব্যবসার প্রথম পুঁজি তার মা-ই তাকে দিয়েছিলেন। মায়ের সহযোগিতা আর উৎসাহ না পেলে এতদূর আসতে পারতেন না বলে জানান তিনি। গত দশটি বছর ধরে ক্ষুদ্র ব্যবসা হিসেবে তিনি সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলছেন। করোনার এই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তার শো-রুমের বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। তবে বাসা থেকে পুরনো গ্রাহক আর পরিচিতজনদের কাছে যা বিক্রি হয় সেটাও একেবারে খারাপ নয়। করোনার ঝুঁকি থাকলেও তাতে বড় বেশি সমস্যা হবে না বলে উলেস্নখ করেন তিনি। নাসরীন বলেন, স্বামী ও শাশুড়ির আন্তরিক সহযোগিতা পাচ্ছি বলে দুই ছেলে আর সংসার সামলিয়েও একটি ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে। যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। আর কথায় আছে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। প্রবল ইচ্ছাশক্তির কারণেই উপায় খুঁজে পেয়েছি। তবে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সহায়ক না হলে সাফল্য অর্জন অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ ব্যবসা সফল হওয়া কোনো সহজ কাজ নয়। এর অনেক সুবিধা-অসুবিধা আছে। এখানে ধৈর্যের সঙ্গে টিকে থাকার একটা ব্যাপার আছে। অপ্সরা বুটিকসের স্স্নোগান 'হাতের কাজের দারুণ ডিজাইন/ আমাদের পণ্যে সর্বদাই নতুনত্ব। নতুনত্বই নাকি তার ব্যবসার মূল রহস্য। রীনা নাসরীনের বাসা ও তার শো-রুম ঘুরে দেখা গেল তার কাজে সত্যি নতুনত্ব ও সৃজনশীলতা আছে। শো-রুমের পরিবেশ অত্যন্ত পরিপাটি ও দৃষ্টিনন্দন। থ্রি-পিস ও শাড়ি কিনতে আসা অপ্সরার গ্রাহক রোকেয়া জানান, এখানকার পণ্যের মান বেশ ভালো দামটাও আয়ত্তের মধ্যে। তাই আমার প্রয়োজনের যা কিছু এখানে পাই নিয়ে যাই। অপ্সরার মালিকের আন্তরিক ব্যবহারের কথাও তিনি উলেস্নখ করেন। নাসরীন আকতার মন্তব্য করেন, লেখাপড়া করে শুধু চাকরির পেছনে না ঘুরে আজকাল মেয়েরা ক্ষুদ্র ব্যবসা করে সংসারে সচ্ছলতা আনতে পারে। হস্তশিল্প, তৈরি পোশাক শুধু নয়- বিভিন্ন কাজই এখন নারীরা করতে পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশে যোগাযোগ এখন অনেক সহজসাধ্য হয়েছে। নারীরা কোথায় কে কীভাবে সফল হচ্ছে তা আমরা মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে জানতে পারছি। হেলায়-ফেলায় সময়কে নষ্ট না করে কাজের মধ্যে ডুবে থাকলে সাফল্য ধরা দেবেই।