স্বপ্নে নয় বাস্তবতায় বিশ্বাসী

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

রুমান হাফিজ
পাহাড়কন্যা মৃদুলা আমাতুন নূর
ছোট্টোবেলা থেকেই চঞ্চল স্বাভাবের। স্কুলের গÐী শেষ করতে না করতেই নেপাল ছুটেছিল প্যারাগøাইডিং ও রাফটিং করতে। তাছাড়া কলেজে ছিল বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) ক্যাডেট সাজের্ন্ট। পাহাড় দাপিয়ে বেড়ানোর মানসিক শক্তিটা সেখান থেকেই জন্ম। বলছিলাম পাহাড়কন্যা মৃদুলার কথা। পুরো নাম মৃদুলা আমাতুন নূর। পড়ছে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় বষের্। বাবা মো. আবু হেনা ও মা ফরিদা আক্তারের এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে মৃদুলাই বড়। গ্রামের বাড়ি ফেনীতে হলেও মৃদুলার জন্ম, বেড়ে ওঠা সবকিছু ঢাকায়। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মৃদুলা দেশ-বিদেশের পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায়। দক্ষতা বাড়াতে পবর্তারোহনের ওপর প্রশিক্ষণও নিয়েছে। পাহাড়কে ঘিরেই তার স্বপ্ন। গত বছর এপ্রিলে বের হয় এভারেস্ট অভিযানে। তাদের দলে মোট পঁাচজন। প্রতিক‚ল আবহাওয়া আর দলের আহত একজনের পাশে দাঁড়াতেই এভারেস্টের ২২ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে নেমে আসতে হয়। কিন্তু স্বপ্ন থেমে যায়নি। এ বছর ৪ মাচর্ বাংলাদেশের কনিষ্ঠ নারী পবর্তারোহী হিসেবে জয় করেছে ১৯ হাজার ৩৪১ ফুট উচ্চতার আফ্রিকার সবোর্চ্চ শৃঙ্গ কিলিমাঞ্জারো! গত ২৭ আগস্ট ভারতের ইউনাম চূড়ায় উড়ায় বাংলাদেশের পতাকা। সব ঠিক থাকলে আবারও এভারেস্টের চূড়ায় উড়বে বাংলাদেশের পতাকা। এ জন্য প্রচুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানায় মৃদুলা। নিজের সম্পকের্ জানতে চাইলে মৃদুলা বলেন, ‘আমার ছোটবেলা কেটেছে দাদা-দাদি, নানা-নানির সঙ্গে। নানা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। নানার কাছে অনেক অনুপ্রেরণার গল্প শুনতাম। আব্বু-আম্মু দু’জনেই চাকরিজীবী ছিলেন। আমি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়তাম। আব্বু-আম্মু সবসময়ই চাইত আমি যেন সব থেকে ভালো ফল করি। এটা আমার ওপর এক ধরনের চাপ ছিল। তবে তাদের খুব একটা নিরাশ হতে হয়নি।’ পারিবারিক সাপোটর্ কেমন ছিল জানতে চাইলে মৃদুলা বলেন, ‘পরিবার তো কারো খারাপ চায় না। আর বাবা-মা তো না ই। তবে প্রথম প্রথম বাবা-মা অবশ্য আমার আবদার মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু আমার আগ্রহ আর ভালো করা দেখে সমথর্ন দিয়েছেন।’ এসবের অনুপ্রেরণা কার কাছ থেকে পেয়েছে প্রশ্নের উত্তরে যেমনটা বলছিল, ‘অনুপ্রেরণা বেশি পেয়েছি আমার পবর্তারোহী প্রশিক্ষকদের থেকে। উনারা সবসময় আমাকে সাপোটর্ দিয়েছেন। আমার সঙ্গের বন্ধুরা সবসময় বলতো ‘তুই পারবি’। তাছাড়া ভারতে যখন গেলাম তখন সেখানকার ডিফেন্স আমির্রা যখন জানলো যে আমি বিএনসিসি ক্যাডেট এবং মেডিকেলের শিক্ষাথীর্ তারা আমাকে অগ্রাধিকারের পাশাপাশি সহযোগিতা করেছে অনেক।’ মা, মাটি এবং মানুষের জন্য কাজ করতেও ভালোবাসে মৃদুলা। দেশ এবং দেশের বাইরে নিজের ডাক্তারি শিক্ষাকে কাজে লাগাতে চায়। বিশেষ করে পবর্তারোহীদের জন্য। দেশের নারীদের প্রসঙ্গে মৃদুলা বলে, ‘সামাজিক গোড়ামি আর পযার্প্ত সুযোগ সুবিধার কারণে এ দেশের নারীরা চ্যালেঞ্জিং কাজে জড়াতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে থাকেন। এসব ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে আসতে হবে। ইচ্ছাশক্তি আর মনোবল নারীকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেই। এ জন্য দরকার প্রবল আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্নের বাস্তবায়ন।’ ইচ্ছাশক্তি আর মনোবল নারীকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেই। মৃদুলাও তার ব্যতিক্রম নয়। স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে মৃদুলা জানায়, “আমি স্বপ্নে নয় স্বপ্নের বাস্তবতায় বিশ্বাসী। বলতে পারো বাস্তববাদী মেয়ে! সবোর্চ্চ পাহাড়গুলো জয় করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজের পদচিহ্ন রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিজের দেশকে উপস্থাপন করা। সেই ভাবনাতেই মৃদুলার এখন পযর্ন্ত লক্ষ্য, সাত মহাদেশের সাত শীষর্ পবতর্শৃঙ্গ জয়ের (সেভেন সামিট) অভিযান শুরু করা।’ আকাশছেঁায়া স্বপ্ন দেখা মেয়েটা তার স্বপ্নের পথেই হঁাটছে। করে যাচ্ছে প্রাণপণ প্রচেষ্টা। কে জানে মৃদুলা আমাতুন নূরের হাত ধরেই এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উড়বে আরও একবার।