শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবসান হোক নারীর বঞ্চনা-অবমাননার

শোনো মর্ত্যরে জীব! অন্যেরে যত করিবে পীড়ন, নিজে হবে তত ক্লীব! সেদিন সুদূর নয়- যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়! জাতীয় কবি নারীর অবমাননার বিরুদ্ধে যে দ্রোহের উচ্চারণ করেছেন তা আমাদের বিবেকবোধকে নাড়া দেয়। মাতৃকুলের প্রতি শ্রদ্ধায় আমাদের স্পর্ধার শির অবনমিত হয়। নারীকে তিনি জ্ঞানের ল²ী, গানের ল²ী, শষ্য-ল²ী ও বিজয় ল²ী বলেছেন। কারণ মানবজাতি ও সভ্যতার বিকাশ ঘটে নারীর মধ্য দিয়েই। একটি অসহায় মানব শিশু মায়ের কোলে লালিত-পালিত হয়েই সে পৃথিবীকে জানতে শেখে। মধুরতম পরিবেশে সে বড় হয়, শক্তিমান হয়ে ওঠে। মহিমান্বিত নারীজাতি মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে পুরো পৃথিবীকে প্রেম ও প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। তারা যদি অপমান অসম্মান ও পাশবিকতার শিকার হয় তবে সেটি চ‚ড়ান্তভাবে মানবতার অপমান। সংবেদনশীল এ বিষয়ে কয়েকজন কৃতী নারী শিক্ষার্থী যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতা, ভাবনা ও মতামত।
নন্দিনী ডেস্ক
  ২১ জুন ২০২১, ০০:০০

প্রতিটি মেয়েই ইভ টিজিংয়ের শিকার

জান্নাতুল মাওয়া

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইভ টিজিং এমন একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা যার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ের নাম দুর্ভাগ্যজনকভাবে জড়িত। সবকিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েরা তাদের আশপাশের মানুষজনের দ্বারা টিজিংয়ের শিকার হয়। আর একসময় আমরা এটায় অভ্যস্ত হয়ে যাই। কারণ সমাজ মানতে বাধ্য করে এটা মেয়েদের জন্য একেবারেই স্বাভাবিক।

এটা শুরু হয় পরিবার থেকেই, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর পরিধি বিস্তৃৃত হতেই থাকে। বেশির ভাগ মেয়েকে এটা নিয়ে কথা বলার ইতিবাচক পরিবেশ দেওয়া হয় না। কারণ বেশির ভাগ পরিবারই মেয়েদের দোষারোপ করে, ফলস্বরূপ বাল্যবিয়ে হয়, মেধাবী তরুণী অকালে ঝরে যায়। টিজিংয়ের শিকার মেয়েদের মধ্যে যে কী ধরনের মানসিক অস্থিরতা বিরাজ করে তা কোনো ছেলে তোয়াক্কাই করে না। সমাজ নারীদের অসম্মান ও অবমাননা করায় এটা বেড়েই চলেছে যার বিরূপ প্রভাব হলো ধর্ষণ। আর সমাজ ধর্ষিত নারীকেই দোষারোপ করে, মেয়েদের পোশাককে দায়ী করে। এটা যদি কারণ হয় তাহলে ৬ মাসের বাচ্চা কেন ধর্ষিত হচ্ছে? জনসম্মুখে কোনো মেয়ে যদি যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করে, সে পুরুষের সমর্থন পায় না, উল্টো দমে যেতে বলা হয়। সমাজ প্রতিনিয়ত

শেখাচ্ছে যে নারীরা পণ্য।

শিক্ষিত সমাজেও দেখেছি মেয়েদের অবমাননা করতে, কোনো মেয়ে ভালো রেজাল্ট করলে বা পদোন্নতি হলে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, অথচ মেয়েটার অধ্যবসায়ের মূল্যই দেওয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রে আমরা

মেয়েরাই মেয়েদের অসম্মান করি।

নারীরা সব জায়গাতেই অনিরাপদ। সেলিব্রেটিসহ সাধারণ মেয়ে সবাই সাইবার বুলিংয়ের স্বীকার হচ্ছে। বাংলা চলচ্চিত্রে টিজিংয়ের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন দেখানো হচ্ছে। এই দৃশ্যগুলো যুবকদের কল্পনার জগৎকে প্রভাবিত করে। ফলে তারা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে হিরো সাজার বৃথা চেষ্টা করে। প্রতিটি মায়ের উচিত তার ছেলেকে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনাগুলো জানানো। তাহলে ছেলেরা টিজিংয়ের বিরূপ প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারবে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের শিক্ষা দিতে হবে কীভাবে নারীদের সঙ্গে আচরণ করতে হয়। মিডিয়ায় বডি শেমিং, ফর্সা মানেই সুন্দর এসব

দেখানো বন্ধ করতে হবে।

পরিশেষে একটা সুস্থ, নিরাপদ সমাজের প্রত্যাশা করি যেখানে মেয়েরা নির্দ্বিধায় চলাফেরা করতে পারবে, পোশাক নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না, চাকরিতে মেয়েকর্মীদেরও ছেলেদের সমান বেতন প্রদান করা হবে, ইন্টারভিউ বোর্ডে উদ্ভট প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না, সব জায়গায় মেয়েদের কর্মদক্ষতার মাপকাঠিতে বিচার করা হবে, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে

সবাইকে সমান চোখে দেখা হবে।

বিনাবাক্যে নিজেদের অবলা মেনেছে নারী

তানজিলা আরাফা

শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

‘অবলা মেয়ে মানুষ’ অর্থাৎ নারী। নারীর প্রতিশব্দ হিসেবে অবলা, মহিলা, রমণী শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়। অবলা অর্থ যার শরীরে বল নেই, মহিলা অর্থ যে মহলে বা ঘরের মধ্যে থাকে, আর রমণী অর্থ যাকে রমণ করা যায়। পুরুষ প্রধান সমাজে এভাবেই নারীকে মানসিকভাবে দাবিয়ে রাখা হয়। বহুকাল ধরে চলে আসা নারীর প্রতি পুরুষের এমন দৃষ্টিভঙ্গিই আজকের ইভ টিজিংয়ের কারণ। তবে শুধু পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে দোষ দিলে হবে না। নারীরাও মনসিকভাবে দুর্বল হয়ে বিনাবাক্যে নিজেদের অবলা বলে মেনে নিয়েছে।

অথচ মানবসভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করে আমরা জানতে পারি, শিকার যুগে মানুষ যখন গুহায় বাস করত তখন এই নারীরাই ছিল সমাজপ্রধান। কারণ তারা সন্তান ধারণ করে গোষ্ঠীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারত।

তাহলে সেই নারীরা কি করে আজকে অবলা, মহিলা বা রমণী হয়? হয় না। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ও মানসিক পরিচর্যা একটি মেয়েকে একটি ছেলের মতোই শক্ত সামর্থ্য করে তোলে। তবুও নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য নারীরা ঘরের-বাইরে অনিরাপদ। তাই বেশির ভাগ পরিবারই মেয়েদের একলা বাইরে যেতে দিতে চায় না। তবে সব সময় কি কাউকে সঙ্গে রাখা সম্ভব?

আমি ছোট থাকতে প্রায়ই ভাইয়ার সঙ্গে মার্কেটে যেতাম। সে আমার পেছনে থেকে আশপাশে চোখ রাখত। মাঝেমধ্যে হাত আগায় দিয়ে গায়ের কাছে আসা মানুষকে সরিয়ে দিত।

আজকে যে আমি ভিড়ের মধ্যে সামনের দিকে হাত উঁচু করে হাঁটি সেটা ভাইয়ারই শেখানো। কেউ ধারে-কাছে আসতে গেলে নিজেই নিজেই ব্যবস্থা নিতে পারি। আর পেছনে এখন রেখে দিই একটা ব্যাগ। বেশি ভিড়ের মধ্যে নিজেকে সামলাতে থাকে প্রয়োজনীয় প্রস্কুতি। কারণ কেউ গায়ে হাত দিলে চিৎকার করেও রাস্তার মানুষের সাহায্য পাওয়া যায় না। উল্টে সবাই মেয়েদের পোশাকের দোষ দেয়, বা কোনোভাবে মেয়েদের থামানোর চেষ্টা করে। একটা মানুষও যদি সাহায্য করার মানসিকতা রাখত, তাহলে দেশে গ্যাং রেপের মতো ঘটনা ঘটত না।

নিজের দেশে এভাবে পথ চলা সত্যিই অনেক দুঃখজনক। এর থেকে মুক্তির উপায় ছেলেসন্তানদের বাবা-মায়েরা করে দিতে পারেন, ছেলেদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে, যেন তারা মেয়েদের সম্মান করে। আর মেয়েদের বাবা-মায়েরা করতে পারেন মেয়েদের মনোবল বাড়িয়ে।

নারীর অবমাননা ইভ টিজিং শব্দে সীমাবদ্ধ নয়

সৈয়দা ফারজানা হোসাইন

শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা প্রায় ক্ষেত্রেই নির্যাতিত, অবহেলিত। নারীর প্রতি পূরুষের তির্যক দৃষ্টিভঙ্গি ফলে ইভ টিজিং নামক উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। সাধারণ অর্থে খুব সহজ করে ইভ টিজিং বলতে ‘নারীকে উত্ত্যক্ত করা’কেই বোঝায়। বিশদভাবে ইভ টিজিং বলতে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যৌন হয়রানি, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, অশালীন মন্তব্য, উদ্দেশ্যমূলকভাবে নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা, উস্কানিমূলক বাক্য, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা, অহেতুক হাস্যরসের উদ্রেক করা প্রভৃতিকে বোঝায়। যদিও নারী অবমাননা বা অসম্মানকে ইভ টিজিং নামক এই শব্দটি দিয়ে সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়।

আমাদের সমাজে নারীরা শিশু, কিশোরী, যুবতী কিংবা বৃদ্ধা প্রায় প্রতিটি অবস্থায়ই ইভ টিজিংয়ের শিকার হন। তবে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৮০ ভাগ স্কুল-কলেজে পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীরা ইভ টিজিংয়ের শিকার বেশি হচ্ছে। যেহেতু নারী শিক্ষার্থীরাই ইভ টিজিং নামক সামাজিক ব্যাধিতে বেশি ভুক্তভোগী তাই নারী শিক্ষার্থীদের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ইভ টিজিং প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ইভ টিজিংয়ের প্রভাবে নারী মানসিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসংখ্য মেয়ে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ে। অকারণে বন্ধ হয়ে যায় অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। ইভ টিজিং প্রতিরোধে প্রতিটি নারীকে মানসিক মনোবল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে। নৈতিক মূল্যবোধের প্রয়োগ যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক অবক্ষয় রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে ইভ টিজিং প্রতিরোধ করা সম্ভব। পারিবারিক মূল্যবোধের বিপর্যয়ে পুরুষরা বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এসময় কাÐজ্ঞানহীনভাবে তারা ইভ টিজিংয়ে জড়ায়। পারিবারিক মূল্যবোধের বিপর্যয় রোধে নারী শিক্ষা অগ্রগণ্য ভ‚মিকা পালন করে। ফলে নারী শিক্ষা ইভ টিজিং প্রতিরোধে কার্যকর প্রভাব রাখতে সক্ষম।

শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়াশোনার সুযোগ পেলে উভয়ের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতার সৃষ্টি হয়। এর ফলে ইভ টিজিং অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া পাঠ্যপুস্তকে ইভ টিজিংয়ের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা যেতে পারে। সর্বোপরি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রবণতা ইভ টিজিং প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম।

শাস্তির ভয় যেন অপরাধীকে আতঙ্কিত করে

কনক চাঁপা

শিক্ষার্থী, শমরিতা মেডিকেল কলেজ

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় সামাজিক ব্যাধির নাম ইভ টিজিং। অথচ এটি কোনো সভ্যসমাজের চিত্র হতে পারে না। ক্রমেই ধর্ষণের মতন জঘন্য অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্ষণের মতো পৈশাচিক ঘটনা একটি নারীর জীবনে কতটা বিপর্যয় তৈরি করে, তার পরিবারের জন্য কতটা বেদনার ও দুঃসহ হতে পারে তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয় না। নারীর প্রতি এই সহিংসতা রোধে সমন্বিত উদ্যোগ ও রাষ্ট্রের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। সামাজিক এই ব্যাধির বিস্তার রোধ করতে না পারলে নারীর সামাজিক অধিকারই শুধু ক্ষুণ হবে না রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যদি তার নারীশক্তি অচল হয়ে যায়। তাই নারীর স্বাধীনভাবে, নিরাপদ চলাচলের জন্য তার সম্মানহানি ও ইভ টিজিং বন্ধ করতে হবে।

একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, ইভ টিজিং রোধে যার যার নিজস্ব অবস্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের সহপাঠী পুরুষ শিক্ষার্থীদের নারীর প্রতি সদাচরণ ও সম্মান প্রদর্শনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কোথাও ইভ টিজিং হতে দেখলে চুপ করে না দেখে প্রতিবাদ করতে হবে। নিজের সঙ্গে ঘটলে ভয় না পেয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। আশপাশের মানুষকে, শিক্ষকদের, অভিভাবককে জানাতে হবে। নিকটস্থ থানায় লিখিত অভিযোগ জানাতে হবে।

জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯-এ কল দিতে হবে। ফোনের ইমার্জেন্সি কন্টাক্টে বিপদে সাহায্য করবে এমন মানুষের নাম্বার সেভ করে রাখতে হবে। পরিবারে ছোট অথবা বড় ভাইকে বোন হিসেবে মেয়েদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দিতে হবে। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস, ইভ টিজিংয়ের শাস্তিস্বরূপ প্রণয়নকৃত আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে যেন পরবর্তীতে কেউ এ ধরনের কাজ করার আগে শাস্তির কথা ভেবে ভয়ে নিজেকে সংযত রাখে। ইভ টিজিং নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নারীর চলাফেরা করা, নিজ কর্মস্থল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া সব দুষ্কর হয়ে যাবে। অনতিবিলম্বে সবাই মিলে ইভ টিজিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে।

নিজের নিরাপত্তা নিতে হবে নিজেকেই

অর্পিতা দাশ

শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

পৃথিবীতে সব ধর্ম ও আইনে নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। নারী-পুরুষের অধিকার সমান। উভয়ে একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলোÑ সময়ের সঙ্গে সভ্যতার পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি মানুষের মানসিকতার। কমেনি নারীর প্রতি সহিংসতা, বরং বেড়েছে। বর্তমান সমাজে ইভ টিজিং এক ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায় ইভ টিজিংয়ের কারণে বর্বরতা, প্রাণহানি ও আত্মহননের মতো খবর। শিশু, যুবতী, বৃদ্ধ, বিবাহিত, অবিবাহিত কোনো নারীই ইভ টিজিং ব্যাধি হতে নিরাপদ নয়। পরিবার, কর্মস্থল, শিক্ষাঙ্গন, গণপরিপরিবহণ প্রায় সর্বত্রই নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর ফলে নারীরা অনেক পিছিয়ে পড়ছে। ইভ টিজিংয়ের অন্যতম কারণ হলো বখাটে ছেলেদের বিকৃত মানসিকতা, নৈতিক চরিত্রের অবনতি মূল্যবোধের অভাব আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ইত্যাদি। নারীর ইভ টিজিং রোধে আইন ব্যবস্থা কঠোর হতে হবে। তবে কঠোর আইন থাকা সত্তে¡ও অপরাধের লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে। পারিবারিকভাবে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। ইরেজিতে একটি কথা আছে ঈযধৎরঃু নবমরহং ধঃ যড়সব. যে কোনো ভালো কাজ পরিবার থেকে শুরু করতে হয়। তাই প্রত্যেক মায়ের উচিত তার শিশুর মানসিকতা এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে কোনো ঘৃণ্য কর্মকাÐে লিপ্ত না হয়। তাই শিশুপুত্রকে পুরুষ নয় ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া কন্যাশিশুকে ক্যারাটের মতো সামাজিক কার্যক্রম শেখাতে হবে। সে যেন সব প্রতিক‚ল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে। সবশেষে বলতে চাই পথভ্রষ্ট যুবকরা আলোর পথে ফিরে আসুক, সমাজ থেকে দূর হোক ইভ টিজিংয়ের ছায়া। মুছে যাক ইভ টিজিংয়ের নির্মম চিত্র, ইভ টিজিংবিহীন সমাজে সকল নারী নিরাপদ থাকুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

প্রতিনিয়ত অবমাননার শিকার নারী

ময়না আক্তার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

‘আমিই পাপী, বুঝি তাই এ জন্মই আমার আজন্ম পাপ।’ একজন নারী হিসেবে এই বাক্যটি বলার হাজারটা কারণ আছে। আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত একজন নারী যেভাবে হেনস্তা হচ্ছে, শুধু নারী বললে ভুল হবে শিশু, কিশোরী, মা, বোন এমনকি বাদ যাচ্ছে না ৬০ বছরের বৃদ্ধাও। তার প্রতিবাদ না করে প্রথমে আঙ্গুল তোলা হয় ওই নারীর প্রতিই। পোশাক, পর্দা, পেশা এবং তার চলাফেরার ধরন?ই যেন তার প্রতি অন্যায়ের মানদÐ হয়ে দাঁড়ায়। চিত্রনায়িকা পরীমনির ঘটনার কথাই যদি বলি সেখানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সঠিক ঘটনা না জানার আগেই তাকে নিয়ে কিরকম নেতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে। সে একজন চিত্রনায়িকা এটাই যেন তার সবচেয়ে বড় অন্যায়। এটা একটা উদাহরণমাত্র। রাস্তা-ঘাটে, কর্মক্ষেত্রে, ঘরে, বাইরে সব জায়গায় প্রতিনিয়ত একজন নারী নানাভাবে ইভ টিজিং এবং অবমাননার শিকার হয়। এটি যেন আমাদের সবার কাছে

খুবই সাধারণ একটা চিত্র।

একটা ছেলে একটা মেয়ের ওড়না ধরে যখন টান দেয় তখন আমরা বলি তাকে অসম্মান করা হয়েছে, প্রতিবাদ করি। কিন্তু খেলার সময় একটা মেয়ের কাছে হেরে গেলে তার আশপাশের মানুষ যখন-আরে একটা মেয়ের কাছে হেরে আসছে বলে মজা করে, নানা মন্তব্য কটুকাটব্য করে থাকে। ছোট ছোট বাক্য দিয়েও একজন নারীকে যে অবমাননা করা হয় এটা কেন অনুধাবন করি না। এরকম মন্তব্য এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তাদের উৎসাহিত করা হয়। ছোট ছোট এই বাক্য এক সময় ধর্ষণের মতো ঘটনায় রূপ নেয়। ইভ টিজিং এবং নারীর প্রতি অবমাননার পরিমাণ কমাতে চাইলে এসব ছোট ছোট বিষয়গুলোতে আমাদের নজর দিতে হবে। পোশাক, পর্দা, পেশা ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে আমাদের নিজেদের চিন্তা-ভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। তখনই সুদিনের আশা করা যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে