নারীর পরিবহন ভোগান্তির শেষ কোথায়

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

মাসুমা রুমা
রাজধানী ঢাকায় প্রায় দেড় কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করে। ঘনবসতিপূণর্ এই শহরে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তার মধ্যে পরিবহন সংকট অন্যতম। বিশেষ করে নারীদের জন্য এ সমস্যা বতর্মানে তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঢাকার বিভিন্ন রুটে বিআরটিসির মহিলা বাস সাভির্স চালু থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারেই সামান্য। ফলে রাস্তাঘাটে নারী যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। নারীরা প্রতিনিয়ত শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। তারা পড়াশোনা শেষ করে ঘরে বসে না থেকে কমের্ক্ষত্রে অংশগ্রহণ করছে। সংসারে পুরুষের মতো নারীরাও আথির্ক অবদান রাখছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। সুতরাং নারী কমর্জীবীর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ এই বধির্ত নারী কমর্জীবীদের জন্য নেই পযার্প্ত পরিবহন ব্যবস্থা। ঢাকার লোকাল বাসগুলোর বাস্তবিক চিত্র আমাদের কারও অদেখা নয়, অজানাও নয়। ভিড়ের মধ্যে জোর করে বাসে ওঠা পুরুষের জন্য সম্ভব হলেও, নারীর জন্য তা প্রায়ই সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। এ ছাড়া ভি মাড়িয়ে বাসে উঠলেও লোকাল বাসে একজন নারীর জন্য দঁাড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সবসময় স্বস্তিরও হয় না। নারীদের প্রায়ই সহ্য করতে হয় পুরুষের অশোভন আচরণ, অঙ্গভঙ্গি বা কুদৃষ্টি। দিনভর কমের্ক্ষত্রে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে একজন নারীকে যতটা কষ্ট করতে হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি দুভোর্গ পোহাতে হয় রাস্তাঘাটে পরিবহন সংকটের কারণে। এ ছাড়া গণপরিবহনে নারীধষের্ণর বিষয়টি তো আছেই। বতর্মানে আমাদের দেশে নারীধষর্ণ যে লজ্জাজনকভাবে বেড়ে চলেছে এবং প্রশাসনের সঠিক উদ্যোগ গ্রহণে কিছুটা অবহেলা যে লক্ষণীয় একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। নিরাপদে ঘরে ফেরার নিরাপত্তা না থাকার কারণে নারীদের কমর্জীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে পরিবারের মানুষদের বেশিরভাগ সময়ই আপত্তি থাকে। যদিও আমরা জানি- মাথাব্যথা করলে মাথা কেটে ফেলে দেয়াটাই সঠিক সমাধান নয়। তাছাড়া লোকাল বাসগুলোতে মহিলাদের জন্য নিদির্ষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষিত থাকলেও তা অপযার্প্ত। অনেক সময় এসব সংরক্ষিত আসনের প্রায় অধের্কই থাকে পুরুষের দখলে। দখল হওয়া আসন বুঝে নিতেও নারীকে অনেক সময় তকের্ জড়িয়ে পড়তে হয়। ফলে সৃষ্টি হয় অস্বস্তিকর পরিবেশের। প্রতিটি সমস্যারই সম্ভাব্য সমাধান রয়েছে। নারীর পরিবহন সংকট দূর করতে কমর্প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি সরকারকেও জোরালো ভাবে এগিয়ে আসতে হবে, পযার্প্ত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি কমর্জীবী নারীর জন্য যদি কমের্ক্ষত্রে নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে পরিবহন ভোগান্তি অনেকাংশই কমে আসবে। এক্ষেত্রে সরকার কতৃর্ক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরোক্ষ চাপ প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে আইনও পাস করা যেতে পারে। যাতায়াতে নিয়মিত ভোগান্তির ফলে নারীরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে যে পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হয় তা রীতিমতো দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দঁাড়িয়েছে। সংসার সামলিয়ে নিয়মিত অফিস করার পরও তাদের পরিশ্রম আর ভোগান্তির শেষ হচ্ছে না। ফলে অবসর সময় বলে কমর্জীবী নারীদের জীবনে কিছু থাকছে না। নারীরা সন্তান বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পযার্প্ত সময় দিতে পারছে না, নিতে পারছে না প্রয়োজনীয় যতœ। এতে পরস্পরের মধ্যে মানসিক দূরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কখনো আবার এসবের মাত্রা পেড়িয়ে বিবাহ-বিচ্ছেদের মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনাও ঘটছে। সুতরাং বতর্মান সময়ে নারীদের জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক পযার্প্ত পরিবহন সাভির্স চালু করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।