পথেঘাটে মেয়েদের হয়রানি

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

সামরিন ইসলাম
বতর্মানে বাংলাদেশে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা হচ্ছে যৌন হয়রানির প্রকাশ্য, বেপরোয়া এবং মারাত্মক রূপ। প্রায়ই রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে বিভিন্নভাবে অপদস্থ, হেনস্তা বা হয়রানির শিকার হতে হয় মেয়েদের। বিশেষ করে কিশোরী বয়সের মেয়েদের প্রতি এ আক্রমণ তীব্র হয়। তবে এই ব্যাপারটি আগেও ছিল। এখন এর মাত্রা বেড়েছে। আগে মেয়েরা এখনকার মতো এত পড়ালেখা বা জীবন- জীবিকার জন্য এত ঘর থেকে বের হতো না । তাই মাত্রাটা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। বতর্মানে মেয়েদের স্কুল-কলেজে যাওয়ার হার বেড়েছে। তাই এর মাত্রাও বেড়েছে। আর তাই মেয়েরা স্কুল-কলেজে যাওয়ার সময় তাদের নিরপত্তাও বিঘিœত হচ্ছে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা বলতে আগে রাস্তা-ঘাটে মেয়েদের প্রতি অশোভন উক্তি দ্বারা হয়রানিকে বোঝাতো। বতর্মানে হয়রানির শিকার হয়ে অনেক মেয়ে আত্মহত্যা করছে। অনেক সময় এ ধরনের ঘটনা নিবৃত্তের জন্য মেয়েটির মা, ভাই বা শিক্ষককেও নিমর্ম নিযার্তনের শিকার হতে হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালের পত্র-পত্রিকায় যৌন হয়রানির খবর প্রকাশিত হয়েছে ৬৫৩টি এবং ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পযর্ন্ত যৌন হয়রানির খবর প্রকাশিত হয় ৪৯৭টি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১০ সালে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা ঘটেছে ৮০১টি। উত্ত্যক্ত করার কারণে অত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ২৭টি। ২০১১ সালের প্রথম ছয় মাসে উত্ত্যক্তকরণের ঘটনা ৫৫২টি এবং এ কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৭টি। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে সাম্প্রতিককালে যৌন হয়রানি করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেলেও এর বিরদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধের ব্যাপারটি এখনো ক্ষীণ। ছেলেদের উঠতি বয়সের রোমান্টিকতা, পৌরুষত্ব জাহির, নিছক মজা করা ইত্যাদি নানা অজুহাতে এই ব্যাপারটিকে ছোট করে দেখা হয়। অন্যদিকে মেয়েদের পোশাক-আশাক তাদের স্বভাব-চরিত্র বা চাল-চলনকেই দায়ী করা হয়। এ ছাড়া যৌন হয়রানিকে লঘু অপরাধে দেখা হয় কারণ এর ফলে নারীদের সাধারণত দৃশ্যমান বা শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি হয় না যা অন্যান্য নিযার্তনের ফলে হতে পারে। কিন্তু এ ঘটনায় নারীর ওপর যে ব্যাপক মানসিক চাপ পড়ে তা কেউ আমলে নেয় না। নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকে লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়। বা অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়। অনেকে মানসিকভাবে বিপযর্স্ত হয়ে আত্মহত্যা করে। কেন এমন হয় : মেয়েদের এ ধরনের হয়রানির নানাবিধ কারণ রয়েছে। নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, সমাজের নিলির্প্ততা, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বিষয়টির গুরুত্ব না পাওয়া। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারণ হলো নারী ও পুরুষের মধ্যকার বিরাজমান অসমতা বা বৈষম্য। যা মেয়েদের অসম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখার প্রবণতার জন্ম দেয়। বিশেষ করে বতর্মানে যেভাবে বিজ্ঞাপনে মেয়েদের উপস্থাপন করা হয় তার ফলে এ ধরনের অপকমের্ক আরও উসকানো হয়। যৌন হয়রানি বলতে যৌন ইঙ্গিতপূণর্ মন্তব্য বা রসিকতা, গায়ে হাত দেয়া বা দেয়ার চেষ্টা করা, ই-মেইল, এসএমএস, টেলিফোনে বিড়ম্বনা, পনোর্গ্রাফি বা যে কোনো ধরনের অশ্লীল ছবি, দেয়াল লিখনের মাধ্যমে হয়রানি, অশ্লীল উক্তিসহ আপত্তিকর কোনো ধরনের কিছু করা, কাউকে ইঙ্গিতপূণর্ভাবে সুন্দরী বলা, কোনো নারীকে ভয়ভীতি প্রদশর্ন, যে কোনো চাপ প্রয়োগ করা, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সম্পকর্ স্থাপন করা, যৌনসম্পকর্ স্থাপনের দাবি বা অনুরোধ এবং যেকোনো শারীরিক বা ভাষাগত আচরণ, যার মধ্যে যৌন ইঙ্গিত স্পষ্ট। সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, বস্তিবাসী- যেকোনো পরিবারের সন্তানদের দ্বারাই এই অপকর্মটি সাধিত হতে পারে। মেয়েদের যারা এভাবে উত্ত্যক্ত করে তারা বেশিরভাগই এলাকার মস্তান বা সন্ত্রাসী। অনেক সময় এরা আবার রাজনৈতিক দলেরও হয়ে থাকে। তবে যে মস্তান বা বখাটেরাই রাস্তায় উত্ত্যক্ত করে তা নয় । শিক্ষিত, মাজির্ত বা ভদ্র্র ঘরের ছেলেদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও সুয়োগ পেলে উত্ত্যক্ত করতে পিছপা হয় না। আবার স্কুল বা কলেজের শিক্ষকদের দ্বারাও অনেক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন।