বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে নারীর নিজের প্রতি আর উদাসীনতা নয়

শামীমা সুলতানা
  ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

আদিকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সচেতন মানুষ মানুষ মানেই মনে করে নারী মানেই অন্যের হিতকারী স্নেহ আর ভালোবাসামন্ডিত এক ঐশ্বর্যময় সত্তা। কাছের মানুষগুলোর কাছে যত্ন, আদর আর মায়া-মমতার এক জীবন্ত প্রতিভূ। সংসারের হাজারো কাজের মাধ্যমে সবাইকে আগলে রাখেন তিনি। তবে বর্তমান আধুনিক সময়ে এই আদিম ধারণা কিন্তু অনেকটাই বদলে গেছে। এখন বাঙালি নারী আর চার-দেয়ালে সীমাবদ্ধ নেই। নারী আজ সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক সকল স্তরে দায়িত্ব পালন করছে নিজস্ব যোগ্যতায়। ঘরের সীমানা পেরিয়ে তারা আজ সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শত বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে।

তবে এত কিছুর পরও এখনো আমরা অনেক নারী-ই নিজেদের ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন। প্রতিদিনের অফিস-বাসার কতশত কাজের মাঝে হয়তো সময়ই করে উঠতে পারি না নিজের পরিচর্যার। দিনে দিনে পুরো ব্যাপারটা মন থেকে বলতে গেলে হারিয়েই যায়।

ব্যস্ততা সে তো থাকবেই। নারী হিসেবে আমাদের দায়িত্বগুলো পালন করে যেতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো বিতর্কের সুযোগ নেই। কিন্তু পাশাপাশি আমাদের নিজেদের যত্নের দিকেও খেয়াল রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা হয়তো ভাবনায়ই আনিনা নিজের যত্ন একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নিজে যদি মানসিক বা শারীরিকভাবে ভালো না থাকি তা হলে অন্যকেও ভালো রাখা সম্ভব নয়। তাই সবার যত্নের সঙ্গে, যত্ন নিতে হবে নিজেরও।

নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিন আমরা নারীরা নিজের মন ও শরীর ভালো রাখতে কি কি করতে পারি সে বিষয়ে আলোচনা জরুরি।

খাদ্যাভ্যাস :

মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সময়মতো এবং পরিমিত খাদ্যাভ্যাস। আর যেহেতু আমরা জানি দুর্বল শরীরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার তীব্রতা অনেক বেশি হয়। তাই খাবারের পুষ্টিগুণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে হ্রাস না পায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন হরমোনজনিত কারণে মেয়েদের একটু মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শরীর ভারী হয়ে যাওয়ার জন্য নানাবিধ শারীরিক জটিলতা দেখা যায়। আর এই শরীর ভারী হয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তা সঠিক খাদ্যাভ্যাস থাকলে সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যায়।

অনেকেই এটা কঠিন মনে করলেও পুরো ব্যাপারটিই আসলে অভ্যাসের উপর নির্ভরশীল। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে তা হয়ে ওঠে অনেক সহজ। এছাড়া কি খাবার খাচ্ছি, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। হাই-প্রোটিন ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে খাদ্য-তালিকায় ভেজিটেবল, ফলসহ পুষ্টিকর খাবার বেছে নিতে হবে।

আমরা কি খাচ্ছি সেটির সঙ্গে সমান গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঠিক সময়ে খাচ্ছি কিনা। সকালের ব্যস্ততায় অনেক সময়ই দেখা যায়, অনেক নারীই ঠিকমতো ব্রেকফাস্ট না করেই কাজে চলে যাচ্ছেন। আবার হয়তো সময়মতো লাঞ্চ করছেন না। এটা একেবারেই ঠিক নয়। তাই একটু সচেষ্ট হয়ে রুটিন-মাফিক খাওয়া-দাওয়া করলে নিজের যত্ন অনেকাংশেই নিশ্চিত করা যায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেটা হলো অনেকাংশ নারীরা রান্নাঘরে রান্না করছেন প্রচন্ড জল পিপাসা থাকা সত্ত্বেও রান্না পুড়ে যাওয়ার ভয়সহ নানা কারণে পানি পান করতে অলসতা করেন এটা একেবারেই উচিত নয়। এ ব্যাপারেও একটু খেয়াল করলেই সুস্থতা অনেকটাই নিশ্চিত করা যায়।

বিশ্রাম ও ঘুম :

দায়িত্বের চাপে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে অতিরিক্ত টেনশন ও ক্লান্তি, যা প্রভাব ফেলে ঘুমে। বিপরীত দিকে আবার লগডাউনের কারণে কর্মজীবী নারীদের অনেকেরই কর্মস্থল বন্ধ, কিংবা গৃহিণী নারীদেরও অনেকেরই স্বামীর কর্মস্থল বন্ধ তাই রাতজাগা, সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এটা শরীরের জন্য খুবই খারাপ। পর্যাপ্ত ও শান্তির ঘুম না হলে মানসিক প্রশান্তি আসবে না। শুধু পর্যাপ্ত ঘুম নয়, প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রামেরও। এ ক্ষেত্রে রুটিন-মাফিক বেশি রাত না জেগে তাড়াতাড়ি বিছানায় চলে যাওয়া এবং খুব ভোরে দিন শুরু করলে শরীর ও মন দুটোই চাঙা রাখা সম্ভব। সকাল সকাল দিন শুরু করলে সারাদিনে কাজ শেষ করার সময়ও বেশি পাওয়া যায়।

আত্মতৃপ্তিদায়ক কিছু কাজ :

নারী মানেই মায়ের দায়িত্ব, ব্যস্ততা থাকবেই। কিন্তু এরপরও নিজের মনে আনন্দের খোরাকের জন্যই যদি মাঝেমধ্যে কিছুটা সময় নিজের পছন্দমতো কিছু একটা করা সত্যিই উচিত। সেটা হতে পারে বই পড়া, গান শোনা আর লেখালেখির নেশায় যিনি মত্ত খাতা, কলম কিংবা মোবাইল, ল্যাপটপ নিয়ে নতুন সৃষ্টির নেশায় মনোনিবেশ করা মোটকথা যেটাই মন চায়।

সবুজের মাঝে খোলা আকাশের নিচে কিছুটা সময় কাটানো। বর্তমান সময় যেহেতু আমরা বাসায় থাকছি তাই বাড়ির ছাদে অথবা বারান্দায় একটি ছোট সবুজ বাগানের পরিচর্যা করলেও মন অনেক ভালো থাকে। নিজস্ব রুচি মতো নিজের পছন্দের কাজ করা। মনে রাখতে হবে নারীদের জীবনটা শুধু দায়িত্ব পালনের জন্যই নয়- পাশাপাশি জীবনটাকে সঠিকভাবে উপভোগ করাটাও নারীদের প্রাপ্য, নারীর পরিচয় কেবল নারী নয় মানুষ।

শারীরিক ব্যায়াম ও মেডিটেশন:

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল আর সুস্থ শরীরের সঙ্গে চাই সুস্থ মন। প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা হালকা ব্যায়াম অথবা মেডিটেশন সত্যিই শরীর ও মন দুটোই নিমিষেই করে ফেলতে পারে চাঙা। আর এটা কেবল অতিমারীর সময়ই নয় সুস্থ স্বাভাবিক সময়ও এই অভ্যাস রাখা ভালো। ব্যায়াম বলতে যে জিমে গিয়ে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে শরীরচর্চা করতে হবে এমনটি কিন্তু নয়। আজকাল এ বিষয় অনেকেরই কম-বেশি ধারণা আছে।

প্রতিদিন ভোরবেলা মোবাইলে নিজের পছন্দের গান শুনতে শুনতে বাসার ছাদে হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। নিজের ছাদবাগানে ফুলগাছে, সবজিগাছে হেঁটে হেঁটে পানি দেওয়া যায়। এতে যেমন শারীরিক ব্যায়াম হবে মনও প্রফুলস্ন হয়। এমনকি ঘরের কাজ করেও শরীর অনেকটাই ফিট রাখা সম্ভব। প্রতিদিন আমাদের এই ছোট্ট কাজগুলোর জন্য হার্ট-রেট বজায় থাকবে, শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াও স্বাভাবিক থাকবে।

আর মেডিটেশন বলতে আমরা এখনো মনে করি আলাদাভাবে নিরিবিলি সময় বের করতে হবে। আর সময়ের অভাববোধ থেকে মেডিটেশন ব্যাপারটি আমরা মাথাতেই ঢুকাই না। কিন্তু খেয়াল করতে হবে আমরা যখন রূপচর্চা করি পার্লারে বা ঘরে, আমাদের মনটা কিন্তু বেশ প্রফুলস্ন থাকে। ফেইজ ম্যাসেজ বা ফেশিয়াল করার ফলে মুখটা দেখতে ভালো লাগে নিজেকে সুন্দর দেখতে লাগছে বলে আনন্দিত হই। আসলে এটাকেই কিন্তু আমরা মনে মনে মেডিটেশন হিসেবে নিয়ে আরও একটু মনোযোগী হতে পারি। মনের আড়ষ্টতা দূর করতে এ কাজগুলো কিন্তু বেশ কার্যকরী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে