আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে প্রয়োজন সাহসিকতা

প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
ইদানীং আমাদের দেশে মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন সহস্রাধিক নারী ও পুরুষ আত্মহত্যার অপচেষ্টা করে ব্যথর্ হন। তাদের অধিকাংশ আবার ছাত্রী ও গৃহবধূ। এসব আত্মহত্যার নেপথ্যে থাকে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কারো পরকীয়া সম্পকর্, পারিবারিক শাসন, প্রেমের ক্ষেত্রে পরস্পরের সম্পকের্র অবনতি ইত্যাদি। কয়েকটি এনজিও সূত্রে জানা গেছে, এসব আত্মহত্যার পেছনে তারা যেসব কারণ চিহ্নিত করেছে সেগুলো হচ্ছেÑ ইভ টিজিং, যৌন হয়রানি, পারিবারিক নিযার্তন, যৌতুক, প্রেমে ব্যথর্তা, পরকীয়া, পরীক্ষায় ফেল করা, ধমীর্য় ও পারিবারিক মূল্যবোধের অভাব, সামাজিক বৈষম্য, অভীষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗছাতে না পারা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য। বাংলাদেশে প্রচলিত আইনে আত্মহত্যার প্ররোচণা দেয়ার অপরাধে শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে এমন অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় শাস্তিদানের ঘটনা বিরল। আইনজীবীরা মনে করেন, আইনে আত্মহত্যার প্ররোচণার সুনিদির্ষ্ট সংজ্ঞা না থাকার কারণেই আত্মহত্যার প্ররোচণা মামলায় আসামিরা খালাস পেয়ে যায়। আইনবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শারীরিক ও মানসিক নিযার্তনের শিকার হয়ে সাধারণত নারীরাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। কিন্তু প্ররোচণার আইনগত সংজ্ঞা না থাকায় নিযার্তনকারীদের শান্তি হয় না। আর কঠিন শাস্তির মুখোমুখি না হওয়ায় পুরুষরা নারীদের প্রতি নিযার্তনের মাত্রা না থামানোয় বতর্মানে আত্মহত্যার পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করাও আইনে অপরাধ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মামলাই হয় না। বহুল আলোচিত সিমি আত্মহত্যার ঘটনার প্রায় ১০ বছর হয়ে গেলেও সিমির আত্মহননে প্ররোচণা মামলার চ‚ড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। নিম্ন আদালত এ মামলায় অভিযুক্ত ছয়জনের পঁাচজনকে এক বছর করে কারাদÐ ও এক হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। ওই আদালত যুক্তি দেন, দÐবিধিতে উল্লিখিত ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচণা বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা হচ্ছে সতীদাহ প্রথার মতো। যদি কেউ আত্মহত্যার জন্য কাউকে বাধ্য করে তবেই সেটা আত্মহত্যার প্ররোচনা হবে। এর বিরুদ্ধে সিমির বাবা জজ আদালতে আপিল করেন। আসামি পক্ষ সিমির বাবার আপিলকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোটের্ আবেদন করে। আবেদন খারিজ হলে তারা সুপ্রিমকোটের্ আপিল বিভাগে যায়। আপিল বিভাগ শুনানির জন্য এটি তালিকাভুক্ত করে এবং বিষয়টি এখনো শুনানির অপেক্ষায়। নারী ও শিশু নিযার্তন আইনে আত্মহত্যার যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, এতে স্বামীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এ ধারায় আনা যায় না। এখানেও আত্মহত্যার প্ররোচনার সংজ্ঞা স্পষ্ট নয়। আত্মহত্যার প্ররোচনায় শাস্তি না পাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, শুধু মা-ই আত্মহত্যা করছে না; তারা সন্তানদের মেরে তারপর নিজে আত্মহত্যা করছে। আইনের চোখে এটি তৃশংসতা। আমাদের দেশে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা করা হয়, এমনটি শোনা যায় না। বাংলাদেশে প্রচলিত আইনে আত্মহত্যাকে কোনো অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। তবে আত্মহত্যার চেষ্টাকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করতে এ আইন করা হয়েছে।