জাতীয় অথর্নীতিতে নারীর অবদান

সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীরা নানা রকম বৈষম্যের শিকার। বৈষম্যের কারণে নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতার উন্নয়নে নারীর অবদান অনস্বীকাযর্। কিন্তু নারীর এই অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। শিশুর যতœ, রোগীর সেবা, ঘরের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব পালনসহ প্রতিনিয়ত তারা অনেক দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূণর্ কাজ করে যাচ্ছে। নারীদের গৃহস্থালির এসব কাজকে অদৃশ্য শ্রম হিসেবে বিবেচনা করায় তাদের এই অবদানকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। কিন্তু তাদের এসব মুজরিবিহীন কাজ পরিবারে, সমাজে এবং দেশের অথৈর্নতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা রাখছে। লিখেছেন এজাজুল হক মুকুল

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নারীর কাজের গুরুত্ব ও আথির্ক মূল্যায়ন করা হলে তাদের অথৈর্নতিক ও সামাজিক পরিবতর্ন অবশ্যই আসবে ছবি : ইন্টারনেট
নারীর গৃহস্থালী কাজকে যদি আথির্কভাবে মূল্যায়ন করা হয় তাহলে সমাজ রাষ্ট্র, পরিবারসহ সব ক্ষেত্রে নারীর মযার্দা সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীর গৃহস্থালী কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করা হলে পুরুষরা নারীদের মূল্য এবং গুরুত্ব বুঝতে পারবে এবং নারীদের প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল হবে। পাশাপাশি নারীদের আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পাবে যা নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে এবং জাতীয় উন্নয়নে তাদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে সহায়ক হবে। গবেষণায় দেখা যায় ৮১% নারী সরাসরি গৃহস্থালী কাজে নিয়োজিত থাকে অন্যদিকে পুরুষ মাত্র ১.৩%। যেখানে ১৯% নারী চাকরির সঙ্গে যুক্ত সেখানে ৯৮.৭% পুরুষ কোনো না কোনো নিয়মিত বা অনিয়মিত চাকরিতে নিয়োজিত আছে। গবেষণা দেখা যায় ৬০% পুরুষ গৃহস্থালী কাজে নারীকে সাহায্য করে। নারীরা প্রতিদিন দীঘর্ সময় কাজ করে, অধিকাংশ সময়ই তাদের দিনে ১৬-২০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর অনেক রাত পযর্ন্ত তারা বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে। তাদের ছুটি খুব কম এবং অবসর নেই বললেই চলে। যদি একটু অবসর সময় পায়, সে সময়টুকু বন্ধু বা পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে সময় কাটায়, বাচ্চাদের যতœ নেয় বা কোনো অসমাপ্ত কাজ থাকলে সেটা সমাপ্ত করে এবং ব্যক্তিগত কিছু কাজ যেমন (নিজের যতœ, প্রাথর্না এবং কোনো কোনো সময় বই পড়ে) অথবা সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। নারীরা কৃষিকাজসহ বহু কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। যেমন (ধান ভাঙ্গা, সবজির বাগান করা, ফসল কাটা ও ঘরে তোলা, খাবার প্রস্তুত, বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ), পশুপালন (হঁাস, মুরগিও গরু ছাগলের যতœ নেয়া), হস্তশিল্প (ঝুড়ি তৈরি, এমব্রডারি, কাপড় রিপু, সেলাই করাসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি), গৃহকমর্ (ঘর পরিষ্কার করা, রান্নাসহ খাবার তৈরি, হঁাড়ি-পাতিল ও কাপড় পরিষ্কারসহ সব গৃহস্থালী কাজ) এবং পরিবারের সদস্যদের যতœ নেয়া (শিশু, অসুস্থব্যক্তি এবং স্বামী)। এত কাজ করার পরও নারীর গৃহস্থালী কাজের কোনো ক্ষেত্রেই মূল্যায়ন হয় না। গবেষণায় যে হিসাব করা হয়েছে তা আনুমানিক, রান্না করা, বাসন মাজা এবং বাচ্চাদের যতœ নেয়া প্রভৃতি কাজের কোনো সঠিক হিসাব করা সম্ভব নয়। একজন নারীর গৃহের প্রতি দায়িত্ব ও ভালোবাসার মূল্য অনেক, যা টাকার অঙ্কে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। একটি গুরুত্বপূণর্ বিষয় হচ্ছে নারীদের পারিশ্রমিকবিহীন কাজের যদি আথির্কমূল্য বিচার করা হয় তবে দেখা যাবে তা জিডিপির চেয়ে বেশি হবে। গৃহস্থালীতে নারীদের কাজের অবদান নারী-পুরুষ কিংবা সমাজ ও রাষ্ট্র, কোনো পযাের্য়ই গুরুত্বপূণর্ বলে ভাবা হয় না। নারীদের পারিশ্রমিকবিহীন এই কাজের মূল্যায়ন বতর্মানে জিডিপিতে অনুপস্থিত। নারীদের গুরুত্বপূণর্ এসব কাজ সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীদের পক্ষ থেকে ভতুির্ক হিসেবে বিবেচ্য হয়। নারীর কাজের গুরুত্ব ও আথির্ক মূল্যায়ন করা হলে তাদের অথৈর্নতিক ও সামাজিক পরিবতর্ন অবশ্যই আসবে, যা আমাদের সবারই কাম্য।