মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আখতার হোসেন খান
কুষ্টিয়ার ছেউরিয়াবাড়িতে বসেছিল সাধুর হাট
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’Ñ বাউলসম্রাট লালন সঁাইয়ের এই গানকে সামনে রেখে ১৬ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ছেউরিয়াবাড়িতে বসেছিল সাধুর হাট। তিন দিনব্যাপী এই সাধুর হাটে লালন সঁাইজির জীবনকমর্ নিয়ে আলোচনা করেন প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও আলোচকরা। পরে প্রতি রাতে চলছে লালনসংগীত। সারাদেশের সাধু সন্ন্যাসী ও লালনভক্ত ও লালনশিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। ‘তোমার মতো দয়াল মুশির্দ আর পাবো না’ এই গানের মধ্যে দিয়ে ১৭ জন সাধুদলীয় লালনসংগীত শুরু হয়। এর পর বিশিষ্ট লালনশিল্পী টুনটুন বাঊল ও কাঙ্গালিনি সুফিয়াসহ ৪২ জন শিল্পী লালনসংগীত পরিবেশন করে। দ্বিতীয় দিনে স্বনামধন্য লালনশিল্পী শফি মÐলসহ ৪০ জন বাউল সংগীত পরিবেশন করে। তৃতীয় দিনে চ্যানেল আইয়ের গানরাজ রিংকুসহ ৪৩ জন শিল্পী লালন সঁাইয়ের লালন গান পরিবেশন করে। সারা মঞ্চ মাতিয়ে যিনি ঢোলক বাজান তিনি দৌলতপুরের আব্দুল কদ্দুস ঢুলি, তার সঙ্গে অপূবর্ দৃষ্টিভঙ্গিতে খোল বাজান উপা খ্যাপা। এত গেল মূল মঞ্চের কথা। সারা বিশ্বের সাধুন্ন্যাসী যারা এসেছেন তারা কমই যান মূল মঞ্চে। সব সাধু গুরুর আছে নিজস্ব আখড়া, আছে তাদের নিজস্ব ভক্তরা। প্রত্যেক সাধুর নিজ আস্তানায় চলে লালনসংগীত। আগন্তক দশর্করা ভিড় করেন তাদের আস্তানায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে আস্তানাগুলোয় একই সঙ্গে কেউ গান করছেন আবার কেউ ঘুমাচ্ছেন। খাচ্ছে বসে কেউ কেউ। আছে নারী কিংবা পুরুষ সাধু একসঙ্গে, এক বিছানায়। ভেদাভেদ নেই মানুষে মানুষে। নেই জাত-কুলের ভেদাভেদ, নেই ছোট-বড়র অহমিকা, নেই নারী-পুরুষেও। সবাই মানুষ, সবাই পবিত্র। নেই হুড়াহুড়ি, নেই ধাক্কা-ধাক্কি, নেই ঝগড়া-বিবাদ। ধর-পাকড় নেই পুলিশের। লক্ষ লক্ষ মানুষ, তবে অভিযোগ নেই কারো। গায়ে গায়ে কেউ হেলে পড়ে না, কোনো নারীকে স্পশর্ না কোনো পুরুষ। হারায় না টাকা-পয়সা মানিব্যাগ আর জুতা। বিছানাবিহীন মাটিতে ঘুমায় কেউ কেউ। যার যার ভাবে চলে সবাই। অসাধুরা যেন সাধু হয়ে যায় এখানে এসে। তাই তো এর নাম সাধুর হাট। শুভ্র সাদা মিনারের নিচে লালন মাজারের ভেতর রয়েছে দুটি কবর। প্রবেশ করতেই হাতের ডানে পড়বে সঁাইজির কবর এবং বামে তার মায়ের। উঁচু সাদা গুম্বুজের মাজারের পাশেই রয়েছে শিষ্যদের কবর। পেছনে রয়েছে লালন জাদুঘর ও অডিটরিয়াম। লালন সঁাইজিকে ঘিরে ছেউরিয়াবাড়িতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। অথচ লালনের পালিত পিতা মালম শাহের বংশধর আজও তাদের পূবর্পুষের তঁাত নিয়ে পড়ে আছে। অভাব-অনটনে কাটছে তাদের দিন। লালন একাডেমির আয়োজনে এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সহযোগিতায় প্রথম দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহাবুবুল আলম হানিফ, দ্বিতীয় দিন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং তৃতীয় দিন ও শেষ দিন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। প্রতি বছর পয়লা কাতির্ক আর দোল পূণির্মায় বসে সাধুর হাট ।