একটি স্ফুলিঙ্গ, হ্যাশট্যাগÑ আমিও

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

রিমা লিমা
ঘটনা ১ : স্কুল থেকে ফেরার পরই মা বললেন আজ সন্ধ্যায় রফিক আঙ্কেলরা আসবেন। মা স্নান করে ভালো জামাও পরতে বললেন। রফিক আঙ্কেলকে রুম্পার একটুও পছন্দ নয়। তিনি যখন আসেন সবসময় অনেক গিফট আনেন রুম্পার জন্য, অনেক মজার গল্প করেন; তবুও রুম্পার ভালো লাগে না। ইদানীং তিনি শুধু কারণে-অকারণে রুম্পাকে আদর করতে চান। শুধু শুধু রুম্পার পিঠে হাত দেন, না হয় পাশে বসে কোমরে হাত রাখেন। কাজটা মা-বাবার সামনেই করেন। রুম্পার এত অস্বস্তি হয়। কিন্তু কেউ বোঝে না। মাকে একদিন বলেছিল মা তো বুঝলোই না বরং বকা দিয়ে দিল বলল ‘তোমাকে এত আদর করে আর তুমি পছন্দ করো না কেন? তিনি তোমাকে তার মেয়ের মতো স্নেহ করেন।’ ঘটনা ২ : মিতু চাকরিজীবী। তার দুই ছেলে ও এক কন্যাসন্তান। তার বাসায় একজন বয়স্কা মহিলা আছেন যিনি সব কাজ সামলান। রহিমা খালার বয়স হয়েছে তাই তার সাহায্যের জন্য একজন ১২ বছর বয়সী মেয়েকে রাখা হয়েছে। একদিন ছুটি নিয়ে মিতু বাসায় ছিল। দুপুরে কোনো এক প্রয়োজনে রান্নাঘরের দরজা ধাক্কা দিতেই দেখলেন সেই মেয়েটি এক হাত দিয়ে দরজা ধরে রেখেছে আর ভয়ে কঁাপছে। মিতু এর কারণ জেরা করে যেটা বুঝতে পারলেন তা হলো এর আগে যে বাসায় মেয়েটি ছিল সেখানে সে প্রতিনিয়ত শারীরিকভাবে অত্যাচারিত হয়েছে। দুপুরে যখন সবাই ঘুমিয়ে যেত তখন বাসায় থাকা বয়স্ক লোকটির হাতে সে লাঞ্ছিত হয়েছে তাই তার মধ্যে ভয় ঢুকে গিয়েছে। মিতুর কষ্টে চোখে পানি চলে এলো কারণ তার মেয়েটিও এই বয়সী। ঘটনা ৩ : রাহেলা সন্তানসম্ভবা। তার দেখাশোনার জন্য গ্রাম থেকে তার এক আত্মীয়া এসেছে থাকবে বলে। রাহেলার অগোচরে তার বিশ্বস্ত স্বামীজী তার বোনকে নানাভাবে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। অসহায় মেয়েটি না তার মা-বাবাকে বা বোনকে কিছু বলতে পারে! এ ক্ষেত্রে দিনের পর দিন যৌন নিপীড়িত হয়ে তাকে দিন কাটাতে হয়! ঘটনা ৪ : অফিসের বস স্মৃতিকে যেন একটু বেশিই তার কক্ষে কারণে-অকারণে ডাকেন। কাজ বুঝে নেয়ার নাম করে কখনো পিঠে বা কোমরে হাত রাখেন। অথচ বস স্মৃতির বাবার বয়সী। ঘটনা ৫ : রিঙ্কি এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করার পর তার খালুকে সালাম করতেই তিনি তাকে আশীবার্দ করার নাম করে সবার সামনেই জড়িয়ে ধরে দোয়া করলেন। রিঙ্কির প্রচÐ অস্বস্তি হলেও কিছু বলার ছিল না। অথচ কাজটা সবার সামনেই ঘটেছিল। ঘটনা ৬ : কলেজে প্রতিদিন বাসেই যাতায়াত করে সিমি। পাশের সিটে যে মহাপুরুষ থাকেন তিনি শাহেনশাহের মতো হাত-পা ছড়িয়ে বসেন। সিমি অতি কষ্টে গা বঁাচিয়ে জড়সড় হয়ে বসার চেষ্টা করে যাতে অনাকাক্সিক্ষত স্পশর্ থেকে বঁাচা যায়। আর যদি দঁাড়িয়ে যেতে হয় তবে পিছনে থাকা মহামানবটি তার বিশেষ অঙ্গটি দিয়ে অকারণে ধাক্কা দিতে থাকে। এসবই কখনো না কখনো যে কোনো মেয়ের জীবনে ঘটে থাকে। এভাবে প্রতিনিয়ত প্রতিদিন মেয়েরা ঘরে বা বাইরে চলার পথে নিগ্রহের শিকার হয়। একটা মেয়ে জানে এই অবস্থার সম্মুখীন হলে তা তাকে কতটা বিপযর্স্ত করে। আর তাই আসুন আমরা আমাদের সন্তান বা বোনকে এসব বিষয়ে সচেতন করে তুলি। একটা শিশুকে রক্ষা করার দায়িত্ব তার বাবা-মায়ের। বিকৃত মানসিকতার পশুরা খুব কাছের হতে পারে সে হয়তো আপনারই ভাই বা আত্মীয়। তাই চোখ-কান খুলে রাখুন। আপনি একটু বিশেষ লক্ষ্য রাখলেই বিষয়টা বুঝতে পারবেন। অনেকেই আপনার শিশুকন্যার সঙ্গে কথা বলার সময় অকারণে তার গাল ধরে টানবে নয়তো তার অনাবৃত পিঠে হাত বুলাবে অহেতুক জড়িয়ে ধরবে! এমন দেখলে সামনেই প্রতিবাদ করুন। বাচ্চাকে বুঝান তার শরীরের স্পশর্কাতর অংশ কোনটি। আত্মীয়-স্বজনদের কেউ কেউ তাকে কীভাবে ব্যবহার করতে চাইতে পারে তা জানাতে হবে। প্রয়োজনে সেইফ এবং আনসেইফ স্পশর্ এবং তার স্পশর্কাতর অঙ্গটি চিনিয়ে দিতে হবে। তবেই সে বুঝবে কীভাবে চলতে হবে। নিজের বাচ্চাকে শিখান প্রতিবাদী হতে এবং সবকিছু আপনার সঙ্গে শেয়ার করতে। সচেতনতা একটি বড় বিষয়। আমার বাচ্চা কার সঙ্গে মিশছে বা পাশের বাড়িতে যে শিশুটির সঙ্গে খেলছে তার বাসার পরিবেশ সম্পকের্ সচেতন হোন। আপনি যখন কাজে ব্যস্ত তখন সে বাসায়ই কোনো অন্যায়ের শিকার হচ্ছে কিনা তা আপনাকেই খেয়াল রাখতে হবে। আপনি সচেতন হলে বাচ্চা নিজেও সচেতন হতে শিখবে। প্রতিবাদ করা লজ্জার কিছু নয় বরং দুষ্ট যে তার জন্যই অপমানজনক এটা শিখাতে হবে। আমি চাইনা আমার সন্তান বা অন্য কারও সন্তান যৌন নিগ্রহের অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হোক। কিছু প্রাথমিক আত্মরক্ষার কৌশল শিখান বাচ্চাকে। এখন এগুলো ইন্টারনেটে লানির্ং ভিডিও দেখেও নিজে এবং বাচ্চাকে শেখানো যায়। এখন বাচ্চাদের উপযোগী বিভিন্ন ভিডিও আছে যাতে সেইফ টাচ এবং আরসেইফ টাচ বিভিন্ন ঘটনা বা নাটিকা আকারে পাওয়া যায়। সচেতনতা পরিবার থেকে শিখাতে হবে। নিজেকে বঁাচিয়ে চলা শিখাতে হবে। আমি সেখানেই আমার বাচ্চাকে দীঘর্ সময় কাটাতে দিব যেখানে আমি নিজে থাকতে পারবো। সচেতন মা তার বাচ্চাকে সব অবস্থায় সচেতনতার সঙ্গে চলতে শিখাতে পারেন। চাই না আর কোনো মেয়ে তার জীবনের সমস্ত সুবণর্ সময়জুড়ে এই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বেড়ে উঠুক। বরং সচেতনতার সঙ্গে সেই সব নরপিচাশদের মুখোশ খুলে দিই না কেন? কেন ভিক্টিম হবো বরং তাদের কথা জানিয়ে সবার সামনে তার পরিচয় তুলে ধরব। খুলে দেব তার নগ্ন পৈশাচিক মুখোশ।