শ্রদ্ধা

মহীয়সী কবি সুফিয়া কামাল

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

শবনম তাহিতি
প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসা¤প্রদায়িক আন্দোলন-সংগ্রামের অন্যতম পুরোধা মহীয়সী নারী সুফিয়া কামাল মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। অনন্য প্রতিভার অধিকারিণী এ কবির জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদের এক অভিজাত পরিবারে। ১৯২৩ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সাহিত্যচচার্র জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন তিনি। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার কতৃর্ক জাতীয় পুরস্কার ‘তমঘা-ই-ইমতিয়াজ’ লাভ করেন। তবে ১৯৬৯ সালে বাঙালিদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি তা বজর্ন করেন। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসিরউদ্দিন স্বণর্পদক, উইমেনস ফেডারেশন ফর ওয়াল্ডর্ ডিস ক্রেস্ট, বেগম রোকেয়া পদক, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বণর্পদক ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ত্রিশের দশকে কলকাতায় অবস্থানকালে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র যেমন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র প্রমুখের দেখা পান। যা তার জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। ১৯৯২ সালে গঠিত একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমূর্ল কমিটি এবং গণআদালতে গোলাম আজমসহ যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। তিনি আমৃত্যু একাত্তরের নরঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছেন। তিনি ছিলেন মানবতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে এবং যাবতীয় অন্যায়, দুনীির্ত ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন সমাজসেবী ও নারী নেত্রী। সাহিত্য ক্ষেত্রে রবীন্দ্র-নজরুলের প্রত্যক্ষ সংস্পশের্ উজ্জীবিত ও প্রশংসাধন্য, নারী মুক্তি আন্দোলনে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং দেশবাসীর মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি বঁাকে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। সুফিয়া কামালের বয়স যখন সাত তখন সুফিয়ার বাবা সাধকদের অনুসরণে নিরুদ্দেশ যাত্রা করেন। স্বামীর নিরুদ্দেশ যাত্রায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে সুফিয়ার মা সাবেরা খাতুন বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সুফিয়া কামালের স্বামী ছিলেন প্রগতিবাদী ও নারী শিক্ষার সমথর্ক। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘কেয়ার কঁাটা’ ও ১৯৩৮ সালে কাব্যগ্রন্থ ‘সঁাঝের মায়া’। কবি বেনজীর আহমদ নিজ খরচায় ‘কেয়ার কঁাটা’ ও ‘সঁাঝের মায়া’ প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং লেখক সম্মানীর ব্যবস্থাও করেছিলেন। এভাবেই সাহিত্যসমাজে নতুন পরিচয়ে আবিভার্ব ঘটে সুফিয়ার। কৃতজ্ঞতার নিদশর্নস্বরূপ তিনি তার মন ও জীবন কাব্যগ্রন্থটি বেনজীর আহমদকে উৎসগর্ করেন। কাজী নজরুল ইসলাম স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ‘সঁাঝের মায়া’র ভূমিকা লিখে সুফিয়ার সাহিত্যিক মযার্দা দিয়েছিলেন। নজরুলের যে কোনো বই প্রকাশ হলেই তিনি সুফিয়াকে এক কপি উপহার পাঠাতেন। একই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রশংসা ও আশীবার্দ বাংলাসাহিত্যে তাকে একটি স্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত করে। বেনজীর আহমদের মাধ্যমে নৃপেন্দ্র কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুফিয়ার পরিচয় ঘটে। এই সূত্র ধরে তিনি-ই প্রথম মুসলমান মহিলা হিসেবে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে স্বরচিত কবিতা পাঠের সুযোগ লাভ করেছিলেন। কলকাতায় সওগাত অফিস থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বেগমের প্রথম সম্পাদিকা মনোনীত হয়েছিলেন কবি সুফিয়া। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। পূণর্ রাষ্ট্রীয় মযার্দায় সমাহিত করা হয় তাকে। বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মান লাভ করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে কিছু মানুষের নাম স্বণার্ক্ষরে লেখা থাকবে আজীবন। তাদেরই একজন হলেন বেগম সুফিয়া কামাল।