মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সাবরিনা খানম
যে কোনো দেশের নাগরিকদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করতে হলে প্রথমেই মায়েদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে হবে। ভবিষ্যতের নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে গভার্বস্থায়ই নারীর স্বাস্থ্য পরিচযার্ করতে হবে। এতে নবজাতকের সুস্বাস্থ্য তথা ভবিষ্যতে একজন স্বাস্থ্যবান নাগরিক পাওয়ার আশা করা যেতে পারে। আমাদের দেশের জন্যও তা অক্ষরে অক্ষরে ঠিক। অথৈর্নতিক দৈন্যের সঙ্গে ধমীর্য় ও সামাজিক গেঁাড়ামি ও কুসংস্কার আমাদের গভর্বতী মহিলাদের বিভিন্ন সময়েই বিবিধ সমস্যায় ফেলে। ইদানীং কিছুটা সচেতনতা পরিলক্ষিত হলেও এখনো পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত চিন্তাভাবনার পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পারিনি। গভর্বতীর খাদ্য : গভর্বতী মহিলার নিজের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে অন্য আর দশজনের মতোই খাদ্য দরকার। আর তার গভের্ প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠতে থাকা শিশুটির জন্য তাকে আরও অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। বহু বছর ধরে আমাদের সমাজে গভর্কালে নারীদের কম খাওয়ার সংস্কার ছিল। এতে মা ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগতেন। আর শিশুটিও পড়ত মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে। এমনকি বহু শিশু হয় মায়ের গভের্ই মৃত্যুবরণ করত নতুবা জন্মের পর কিছুদিনের মধ্যেই মারা যেত। যারা বেঁচে থাকত তারাও আজন্ম দুবর্ল ও অপুষ্টিজনিত সমস্যাকাতরতা নিয়ে জীবন ধারণ করত। আসলে গভর্বতী মহিলাদের এ সময় প্রচুর পরিমাণে আমিষজাতীয় খাদ্য, যেমনÑ মাছ, গোশত, ডাল, ডিম ইত্যাদি খাওয়া উচিত। মায়ের দেহের আমিষের চাহিদা মিটিয়ে শিশুরও দৈনিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করার মতো আমিষ তাকে প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে একটি ডিম, পযার্প্ত মাছ, গোশত ও ডাল খেতে হবে। মা যে রকম খাদ্য গ্রহণ করবেন, শিশুর দৈহিক বৃদ্ধিও তদ্রƒপ হবে। শুধু তাই নয়, গভর্স্থ শিশুর পুষ্টির চাহিদা মেটানোর মানের ওপর পরবতীর্কালে তার দৈহিক গঠনের মূল কাঠামো নিভর্র করে। শারীরিক শ্রম ও কাজকমর্ : গভর্ধারণের প্রথম তিন মাসে তাকে যথেষ্ট পরিমাণ বিশ্রামে রাখতে হবে। এ সময় ভ্রমণ নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। আর ছোটাছুটি করা যাবে না। ঘরের কাজকমর্ও দেখেশুনে করতে হবে। আর যাদের আগে গভর্পাত ঘটেছে, তাদের আরও যতœবান হতে হবে। চতুথর্ মাস থেকে নিয়ন্ত্রিতভাবে ঘোরাফেরা করতে পারবেন। তবে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, এমন কোনো কাজ করতে যাবেন না। গভার্বস্থার শেষ দিকে নিজের প্রাত্যহিক কাজকমের্র প্রয়োজন হলে ঘনিষ্ঠজনদের সহায়তা নেবেন। বিশ্রাম : গভর্বতী মহিলার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য বিশ্রাম জরুরি। তাকে দিনের বিশাল অংশজুড়েই বিশ্রাম নিতে হবে। দিবাভাগের কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা তাকে আরামে বসে বা শুয়ে থাকতে হবে। আর গভর্কালের অষ্টম বা নবম মাসের দিকে আরও বেশি বিশ্রাম নিতে হবে। টিকা প্রদান : গভর্বতী মহিলা যদি আগে থেকে টিটেনাসের সব কটি টিকা না নিয়ে থাকেন, তবে তাকে পঞ্চম মাসে একটি ও সপ্তম মাসে একটি টিকা নিতে হবে। আর একটি নিতে হবে সন্তান প্রসবের পরপরই। ইদানীং হাম, রুবেলা ও মাম্পসেরও টিকা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও গভর্বতী মহিলাকে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ওষুধ সেবন : গভর্বতী নারীকে ওষুধ দেয়ার হাজার রকম চিন্তা মাথায় আনতে হবে। সহজ কথায় তাকে প্রথম তিন মাসে শুধু জীবন রক্ষার প্রসঙ্গ ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে ওষুধ সেবন করানো যাবে না। তার পরের মাসগুলোতে প্রয়োজন ও ওষুধের প্রতিক্রিয়া ও সন্তানের স্বাস্থ্য বিবেচনা করে কিছু কিছু ওষুধ দেয়া যেতে পারে। মহিলাদের গভর্ধারণের আগেই এসব জ্ঞানাজর্ন করা উচিত। আর যারা পারছেন না, তাদেরও কুসংস্কার ও গেঁাড়ামিতে কান না দিয়ে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত কারও এবং সবচেয়ে ভালো হয় কোনো চিকিৎসকের পরামশর্ নিতে পারেন এবং তার নিদেির্শত পন্থায় চলতে থাকেন। গভর্কালীন সময়টাকে গুরুত্বীহনভাবে নেয়ার কোনো উপায় নেই। গভর্বতী নারী ও আগন্তুক শিশুর সুস্বাস্থ্য এবং ফলস্বরূপ একটি স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠনে গভর্বতী মায়ের স্বাস্থ্য পরিচযার্ অতি জরুরি। আর এভাবেই একটি স্বাস্থ্যবান শিশু তথা সুনাগরিক জন্মদানের মাধ্যমে একজন মা একটি সুস্থ সুন্দর সমাজের জন্ম দিতে পারবেন। তাই আমাদের সবার উচিত নিজ নিজ পরিবারের গভর্কালীন মায়ের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।