পৃথিবীর পথে পথে বাংলাদেশের নাজমুন

প্রকাশ | ২৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মাহবুব এ রহমান
বাংলাদেশের পতাকা হাতে আজারবাইজানের বাকু শহরে নাজমুন নাহার
নাজমুন নাহার। এক অনুপ্রেরণার নাম। সব ভয় আর বাধাকে মাড়িয়ে স্বপ্নের পথে হঁাটার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। লাল-সবুজের পতাকা হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পৃথিবীর পথে পথে। ‘থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে দেখবো এবার জগৎটাকে কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূণির্পাকে।’ কাজী নজরুল ইসলামের সেই কবিতায় সঙ্কল্পবদ্ধ হয়ে দেখছেন বিশ্বকে। ইতোমধ্যে ১১০টি দেশ ভ্রমণ শেষে ১১১তম দেশ হিসেবে পা দিয়েছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়া। যেমনটা মেসেঞ্জারে জানিয়েছিলেন নাজমুন ‘বিশ্ব ভ্রমণের ম্যাজিকাল সংখ্যা ১১১তম দেশে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানোর উদ্দেশে এই মুহূতের্ আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে স্পেনের গ্রান্ড ক্যানারিয়া দ্বীপে অবস্থান করছি। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার ভ্রমণের ১১১তম দেশ পশ্চিম আফ্রিকার মৌরিতানিয়াতে উড়বে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্পেনীয়ই টাইম দুপুর ১২টায় মৌরিতানিয়া এয়ারলাইন্সে করে রওনা হচ্ছি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়া। এরপর দেশটির রাজধানী নৌআকচট থেকে বাই রোডে যাত্রা করবো সেনেগাল, গাম্বিয়া, গিনিবিসাও হয়ে পশ্চিম আটলান্টিকের পাশ ঘেঁষে যাওয়া দেশগুলোয়। সেখান থেকে উত্তর আটলান্টিকের দেশগুলো পযর্ন্ত যাত্রা অব্যাহত থাকবে’। নাজমুন নাহারের জন্ম ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর। উপক‚লীয় জেলা ল²ীপুরের সদর উপজেলার হামছাদী ইউনিয়নের গঙ্গাপুর গ্রামে। ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আমিন এবং গৃহিণী মা তাহেরা আমিনের আট সন্তানের সবার ছোটো নাজমুন। ছোটবেলা থেকেই নাজমুনের প্রিয় শখ বই পড়া। সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে-বিদেশে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবির ‘দেশে কবিতার দেশে’, জ্যাক কেরুয়াকের ‘অন দ্য রোড’, এরিক উইনারের ‘দ্য জিওগ্রাফি অব বিøস’ সুজানা রবাটের্সর ‘অলমোস্ট সাম হোয়ার’, চেরিল স্টেরয়েডের ‘ওয়াইল্ড : ফ্রম লস্ট টু ফাউন্ড’ অন দ্য প্যাসিফিক ক্রেস্ট ট্রেইল’ এবং মাসুদ রানা সমগ্র বইগুলো পড়ে ভ্রমণের ঝেঁাক পেয়ে বসে তার। পাশাপাশি বিভিন্ন ট্রাভেল বøগাসের্দর বøগগুলো তাকে ভীষণভাবে উৎসাহিত করে। এ ছাড়া তার এ ইচ্ছার পেছনে ছিল পরিবারের উৎসাহ আর সমথর্ন। নাজমুন বলেন ‘ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে দেশ-বিদেশের ভ্রমণ কাহিনী শুনতাম। দাদা আলহাজ ফকীহ মৌলভী আহাম্মদ উল্লাহও একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছিলেন। ভ্রমণের শখটা বলতে পারেন পারিবারিক সূত্রেই পাওয়া।’ শুরুটা যেমন : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বষের্ পড়াকালে যোগ দেন বাংলাদেশ গালর্স গাইড অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখায়। সেখান থেকে সুযোগ পেয়ে যান আন্তজাির্তক অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার। তখন ২০০০ সাল। তার নেতৃত্বেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল অংশ নেয় ভারতে অনুষ্ঠিত এই প্রোগ্রামে। বিশ্বের ৮০টি দেশের গালর্স গাইড আর স্কাউটদের এই সম্মেলন হয় মধ্যপ্রদেশের পঁাচমারিতে। ভ্রমণের রোমাঞ্চটা সেখান থেকেই। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে ঢাকায় আসেন। কিছুদিন সাংবাদিকতা করে ২০০৬ সালে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে চলে যান সুইডেনে। সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পড়াশোনার ফঁাকে খÐকালীন কাজও করতেন নাজমুন। নিজের জমানো টাকায় জাহাজে ভ্রমণ করেন ফিনল্যান্ড। সে থেকেই শুরু। আর পেছনে ফিরে তাকাননি নাজমুন। পৃথিবীর পথে পথে : নাজমুন ছুটে চলেছেন নিজের লক্ষ্যপানে। ১৪টি দেশে মাকেও করেছিলেন ভ্রমণসঙ্গী। মা তাহেরা আমীনকে নিয়ে ঘুরেছেন সুইজারল্যান্ডের আল্পস পবর্তমালা থেকে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন শহরে। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পযর্ন্ত মাকে সঙ্গে নিয়ে ১৪টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। বাংলাদেশি এ ‘ফ্ল্যাগ গালর্’ লাল-সবুজের পতাকা হাতে শান্তির বাতার্ পৌঁছে দিচ্ছেন দেশে দেশে। নাজমুন মনে করেন ‘আমরা সবাই একই পৃথিবীর মানুষ একই সূত্রে গঁাথা। একই শেকড়ে আমাদের জন্ম। একই সূযের্র আলো পাই। একই আকাশের নিচে বসবাস করি। আমরা একই পৃথিবীর মানুষ, একই পরিবারের অন্তভুর্ক্ত। তাই আমাদের ধমর্ এবং বণের্র ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে পৃথিবীতে শান্তি বিরাজের কথা ভাবতে হবে।’ ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার’ ¯েøাগানে দেশ ভ্রমণের সেঞ্চুরি করেন এ বছরের ১ জুন পূবর্ আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়েতে পা রাখার মধ্যদিয়ে। বতর্মানে অবস্থান করছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ায়। সারাবিশ্বে না দেখা পযর্ন্ত থামবেন না বলে জানান নাজমুন নাহার।