নারীর মানসিক নিযার্তন

প্রকাশ | ২৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সাবরিনা মুনতাহা
বতর্মান সময়ে গণমাধ্যমে সবচেয়ে যে আলোচিত সামাজিক দুযোর্গটি নিয়ে কথা হচ্ছে তা হলো নারী ও শিশু নিযার্তন। উচ্চ পযাের্য় আলোচনা সভা, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামসহ অবস্থা উত্তরণের নানা পদ্ধতি নিয়ে নানা গবেষণা হচ্ছেÑ নারীর ওপর নেমে আসা শারীরিক নিযার্তনের ভয়াবহ চিত্র নিয়ে। কিন্তু মানসিকভাবেও নিযাির্তত হচ্ছে নারীরা এ কথা নজরে আসছে না কারও। স্বামী কতৃর্ক, শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের দ্বারা অবজ্ঞা, অবহেলা, অপমান ও অবমাননা একটি নারীকে মানসিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করে, তেমনি শারীরিকভাবেও নিযাির্তত হয় অনেক ক্ষেত্রে। গভর্বতী নারীদের জন্য তো এ নিযার্তন আরও ভয়াবহ। গভের্র শিশুর ওপরও এর প্রতিক্রিয়া পড়ে হয়। আর শহরাঞ্চলে নারীদের ওপর মানসিক নিযার্তন অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। এমনও হয়েছে অনেক জায়গায়, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে কিংবা আত্মগøানির কারণে আত্মহত্যা করছেন অনেকে। লোকলজ্জার ভয়ে বাবা, মা, আত্মীয়-পরিজনের সহায়তার অভাব, সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি, অথৈর্নতিক দুবর্লতা, মামলা মোকদ্দমার দীঘর্সূত্রতা নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি কারণে নারীরা অত্যাচারিত হয়। নারী মুখ বুজে দিনের পর দিন সব নিযার্তন সহ্য করে। গভর্বতী নারীও শিকার হন এ রকম মানসিক ও শারীরিক নিযার্তনের। এতে মা ও শিশু উভয়েরই মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার শিকার হন। একটি জরিপে দেখা যায়Ñ বাংলাদেশে প্রতি চারজনে একজন মহিলা গভর্কালীন নিযার্তনের শিকার হন। ১৪ শতাংশ মাতৃমৃত্যুর কারণ গভর্কালীন নিযার্তন, ৫০ শতাংশ হত্যার কারণ হলো যৌতুক। এসব নিযার্তন একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ পরিণতির সৃষ্টি করতে পারে। সেবাদানকারী বিভিন্ন সংস্থার তথ্য থেকে জানা যায়, গভর্কালীন অনেক নারী কোনো-না কোনোভাবে নিযার্তনের শিকার হয়। যা সত্যিই দুঃখজনক ও দুভার্গ্যজনক। দেশের বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনো সময়ে, নিযার্তনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ বলেছেন, তারা স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক নিযার্তন ভোগ করেছেন, ৩৬ শতাংশ যৌন নিযার্তন, ৮২ শতাংশ মানসিক এবং ৫৩ শতাংশ নারী স্বামীর মাধ্যমে অথৈর্নতিক নিযার্তনের শিকার হয়েছেন। বিস্ময়কর আরও তথ্য হচ্ছে, এসব নারীর ৭৭ শতাংশ বলেছেন, তারা বিগত এক বছরেও একই ধরনের নিযার্তন ভোগ করেছেন। এর আগে দেশে নারী নিযার্তন নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা আলাদাভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিবিএসের এ জরিপ বলেছে, শারীরিক নিযার্তনের শিকার নারীদের মাত্র অধের্ক চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পান। এক-তৃতীয়াংশ নারীই স্বামীর ভয়ে বা স্বামী সম্মতি না দেয়ায় চিকিৎসকের কাছ পযর্ন্ত যেতেই পারেননি। মানসিক নিযার্তনের বিষয়ে যে আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে, তা-ও বেশির ভাগ ভুক্তভোগী নারীর অজানা। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের নারীদের ওপর মানসিক নিযার্তনের সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটছে তার স্বামীর ঘরেই। গৃহবধূকে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগানোর ব্যাপারে শুধু যে স্বামী জড়িত এমন নয়, এ ঘৃণ্য কাজে জড়িত থাকেন স্বামীর পরিবার ও নিকটাত্মীয়রা। এই তথ্য ওঠে এসেছে এক সামাজিক সমীক্ষায়।