নারীমুক্তি কোন পথে

প্রকাশ | ২৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

নন্দিনী ডেস্ক
প্রাগৈতিহাসিককালে ভেঙে পড়া আদিম সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থার পর হাজার বছর ধরে জেঁকে বসা বন্ধনের ছেদ ঘটবে কীভাবে? অনেকেরই মতে, শিক্ষা এবং অথৈর্নতিক মুক্তিই দেবে নারীকে পুরুষের সমকাতারে সমান অধিকার নিয়ে দঁাড়ানোর সামথর্্য। অনেকাংশেই বিষয়গতভাবে (ংঁনলবপঃরাবষু) সত্যি। নারী-পুরুষের সমতা আনতে গেলে মনোজাগতিক মানের নৈকট্য খুবই জরুরি। নেহাত জৈবিক মোহ নারী-পুরুষের সাময়িক বন্ধুত্বের সৃষ্টি করলেও আবার সেই একঘেয়ে জীবনের আমৃত্যু পুনরাবৃত্তির ছকে আটকে পড়বে সম্পকর্ যদি তাদের মনোজাগতিক এবং বুদ্ধিভিত্তিক নৈকট্য সৃষ্টি না হয়। এই নৈকট্য সৃষ্টি করবে শিক্ষা। অথৈর্নতিক স্বাবলম্বিতার ক্ষেত্রেও শিক্ষা ভ‚মিকা রাখবে। সঙ্গে সাংস্কৃতিক মানের উন্নয়নও অপরিহাযর্। শিক্ষা, অথর্নীতি এবং সাংস্কৃতিক মানের উন্নয়ন নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করবে অনেকখানি। কিন্তু আমরা আলোচনা করছি ঠিক সমতা নিয়ে নয়, মুক্তি নিয়ে। সমাজব্যবস্থা, অথর্নীতি, রাজনীতি যদি প্রতিক‚ল হয়, তাহলে শিক্ষা ও অথৈর্নতিক স্বাধীনতা যে বিষয়গত (ংঁনলবপঃরাব) আপাত মুক্তি নারীকে দিচ্ছে সেটি বিষয়ীগত (ড়নলবপঃরাব) মুক্তিতে পেঁৗছবে না। উৎপাদনের ব্যক্তিগত মালিকানা উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে এবং নারী নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। ফলে উদ্বৃত্তের ব্যক্তি মালিকানা ভেঙে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। প্রচলিত ব্যবস্থায় শিক্ষিত এবং অথৈর্নতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীও গাহর্স্থ্য কাজে আটকে পড়ছে লম্বা সময় ধরে। সন্তান জন্মদান ও লালন-পালন করাকে কেন্দ্র করে সে পিছিয়ে পড়ছে। বিষয়ীগত পরিবতের্নর জন্য সন্তানকে সমাজের শিশু হিসেবে সামাজিকভাবে গড়ে তোলার সংস্কৃতি দঁাড় করাতে হবে। বতর্মানে অমুকের সন্তান, তমুকের সন্তান বলে যে আহ্লাদি ব্যবস্থা চালু আছে সেটির মূলে হচ্ছে সেই অমুক তমুক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। উৎপাদন ব্যবস্থা সামাজিক হলে অমুক-তমুকের ব্যক্তিমূল্য কমে যাবে। শিশুর নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, মানসিক বিকাশ, শিক্ষা এই বিষয়গুলোর সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান করা গেলে সন্তানের প্রতি মায়ের আলাদা উদ্বেগের বিষয় থাকবে না। ফলে আলাদা করে মায়ের দায়িত্ব কমে যাবে। সেও সমভাবে অংশ নিতে পারবে উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। অনেকে হয়তো ভাববেন পরিপূণর্ মাতৃস্নেহ ছাড়া সন্তান প্রকৃত মানুষ হবে না। জেনে নিন রবীন্দ্রনাথ পুরো শৈশবটা গৃহভৃত্য দ্বারা মানুষ হয়েছে, এতে তার প্রকৃত মানুষ হওয়া আটকায়নি। ভাবনাটা স্রোতের বিপরীতে হলেও ভাবতে হবে। ভাবতে হবে মুক্ত মনে। বিষয়গত এবং বিষয়ীগতভাবে নারীমুক্তি তখনই সম্ভব, যখন সমাজ কাঠামোতে পরিবতর্ন আসবে। ব্যক্তিমালিকানার বদলে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে, মৌলিক চাহিদাগুলোর দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে। তবেই কেবল নারী পরিপূণর্ স্বকীয়তায় ফিরতে পারে, রাখতে পারে স্বতঃস্ফ‚তর্ অবদান উৎপাদনে, উন্নয়নে।