লহ শ্রদ্ধা হে বীরমাতা

প্রকাশ | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

তাসনিয়া কবির
বীরপ্রতীক তারামন বিবি
প্রিয় জন্মভ‚মিকে শত্রæমুক্ত করতে জান-মান বাজি রেখে লড়াই করেছেন অসংখ্য বীর বাঙালি নারী। তবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে ত্যাগী ও দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়েছেন যারা তাদেরই একজন তারামন বিবি বীরপ্রতীক। শুধু সম্মুখ যুদ্ধই নয়। নানা কৌশলে শত্রæ পক্ষের তৎপরতা এবং অবস্থান জানতে গুপ্তচর সেজে সোজা চলে গেছেন পাক-বাহিনীর শিবিরে। কখনো সারা শরীরে কাদা-মাটি, চক, কালি এমনকি মানুষের বিষ্ঠা পযর্ন্ত লাগিয়ে পাগল সেজেছেন তারামন। চুল এলো করে বোবা সেজে পাক সেনাদের সামনে দীঘর্ হাসি কিংবা কান্নার অভিনয় করেছেন। কখনো প্রতিবন্ধী কিংবা পঙ্গুর মতো করে চলাফেরা করে শত্রæসেনাদের খেঁাজ নিয়ে এসেছেন নদী সঁাতরে গিয়ে। আবার কলা গাছের ভেলা নিয়ে কখনো পাড়ি দিয়েছেন ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী। আর জান-মানের কথা না ভেবেই এসব দুঃসাহসী কাজে ঝঁাপিয়ে পড়েছেন একমাত্র দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য। স্বাধীনতার সূযর্ ছিনিয়ে আনা এই অনন্য বীর ১ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়ার নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন। সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধা রইল তার পদতলে। তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে। ১৯৭১ সালে তারামন বিবি ১১নং সেক্টরে নিজ গ্রামে ছিলেন। তখন ১১নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিল মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। পরে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখান। এরপর একদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকবাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রæদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। এরপর তারামন অনেক সম্মুখযুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন। এ কারণে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত দুজন নারীর মধ্যে একজন হচ্ছেন তারামন বিবি। এই খেতাব প্রাপ্তির কথা দীঘর্ ২৫ বছর জানতে পারেননি তিনি। ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিমল কান্তি দে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলী এবং রাজিবপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুস সবুর ফারুকীর সহায়তায় তাকে খুঁজে বের করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বীরপ্রতীক খেতাবের পদক তুলে দেয়া হয় তার হাতে। মৃত্যুর আগে বীরপ্রতীক তারামন বিবি দীঘির্দন থেকে ফুসফুস ও শ্বাস-প্রশ্বাস রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।