প্রতিবাদের জোয়ার তোল

প্রকাশ | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জারিন তাসনিম
আমাদের দেশের মেয়েরা যতই উচ্চশিক্ষিত হোক না কেন, যখনি শ্বশুরবাড়িতে যায়, তখন থেকেই পরিবতর্ন হয়ে যায় তার আচার-আচরণ এবং আরও অনেক কিছু। তখন সেই মেয়েটির নিজস্ব সত্তা বলে কিছু আছে এটা ভাবার অবকাশ পায় না। তার প্রধান কারণ পারিবারিক এবং সামাজিক কিছু নিয়ম-কানুনের বেড়াজালে সে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। নিজের ইচ্ছামতো কিছুই করার থাকে না। তখন তাকে নিয়ন্ত্রণ করে শ্বশুরবাড়ির পরিবারের সবাই। একটু উনিশ-বিশ হলেই তার দোষ। অথার্ৎ পরের মেয়ের দোষ ধরতে খুবই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। এভাবেই মানসিক চাপের মুখেই শুরু হয় একটি মেয়ের সংসারের যাত্রা। যে আনন্দে জীবনের প্রতিচ্ছবি সে কল্পনা করেছিল, সেই প্রতিচ্ছবি ক্রমশ ঘোলাটে হতে থাকে সংসারের বিভিন্ন কথার খোটায়, যৌতুকের তাগিদে। যৌতুকের জন্য মৃত্যু এটা এখন নিয়মিত সংবাদ। এমন কোনো পত্রিকা পাওয়া যাবে না, যেখানে যৌতুকের জন্য অমুক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বা পুড়িয়ে মারা হয়েছে বা বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কেন? এই শতকে এসেও কেন মেয়েদের এ রকম লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শিকার হতে হবে? এ কেমন সামাজিক দায়বদ্ধতা? একজন মেয়ে যখন পিতা-মাতাকে বলে, স্বামীর সঙ্গে তার মিলছে না, তার জন্য যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তখন মেয়ের মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনরা আপ্রাণ চেষ্টা করে মেয়েটাকে শ্বশুরবাড়িতে রাখার জন্য। তাকে বোঝানো হয়, যেন সবকিছু একটু সহ্য করে, মেনে নেয়। এই যে মেনে নেয়ার কথা বলা হচ্ছেÑ এরকম মেনে নিতে গিয়ে কত মেয়েকে যে দিনের পর দিন অত্যাচার গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে তার খবর কে রাখে? অনেকেই মৃত্যুর হাতে নিজেকে সঁপে দিচ্ছে। কিন্তু তাদের জন্য কি এই সমাজের কিছুই করার নেই? একজন মেয়ে যখন চিকিৎসক হয় তখন তার সবোর্চ্চ মেধার পরিচয় মেলে। শুধু চিকিৎসক নয়, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার যারা সবোর্চ্চ ডিগ্রিধারী তারাও রেহাই পাচ্ছে না শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার থেকে। একটা সময় ছিল, মানুষ চিন্তা করত, হয়তো অশিক্ষিত, মূখর্ মেয়ে, তাই তাকে শ্বশুরবাড়ির গঞ্জনা সইতে হচ্ছে। কিন্তু বতর্মান উন্নত প্রযুক্তির উৎকষর্তায় যেখানে মানুষের মননশীলতার পরিবতর্ন হওয়ার কথা, সেখানে আমরা দেখছি তার ভিন্ন রূপ। মানুষের আত্মোন্নয়নের পরিবতের্ হচ্ছে বিপরীত। আধুনিকতার ছেঁায়ায় মানুষের মধ্যে যে পরিবতর্ন আসছে, তা খুবই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। মানুষের মানবতাবোধ লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই আমরা ধমীর্য় রীতি নীতির তোয়াক্কা না করে নারী নিযার্তনে উৎসাহী হয়ে উঠেছি। সেদিন পত্রিকার খবরে প্রকাশ একজন বেকার স্বামী স্ত্রীকে পুড়িয়ে মেরেছে। কী মমাির্ন্তক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা, যা শুনলেও মানুষ শিউরে উঠবে।